টিম আটলেটিকোর জন্য গলা ফাটাতে মাঠে হাজির টিম চতুষ্কোণ। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনুপম রায়, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রাশিস রায়। —নিজস্ব চিত্র
রাত জেগে লা লিগা দেখা তাঁর নেশা। তবু ফুটবলের চেয়ে ক্রিকেট তাঁর বেশি প্রিয়। হয়তো সে জন্যই ইডেনে বসে সচিন-ধোনিদের ম্যাচ দেখলেও, এত দিন পর্যন্ত যুবভারতী-দর্শন হয়নি। কিন্তু আটলেটিকো দে কলকাতার টানে সেই ‘না হওয়া’ পর্বটাও পূরণ করে ফেললেন টালিগঞ্জের নতুন অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যান ইন্দ্রাশিস রায়।
পরের সপ্তাহেই ‘চতুষ্কোণ’ ছবির পঞ্চাশ দিন সম্পূর্ণ হচ্ছে। সেই উপলক্ষ্যে আগাম সেলিব্রেট করতে শুক্রবার নিজের টাটকা ছবির পুরো টিম নিয়ে গার্সিয়া-ফিকরুদের ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। এবং ‘চতুষ্কোণ’-এর অন্যতম অভিনেতা ইন্দ্রাশিস যুবভারতীর পরিবেশ দেখে এতটাই মুগ্ধ যে, আবার আইএসএল ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে আসবেন বলে জানিয়ে গেলেন। হসপিটালিটি গ্যালারিতে বসে বলছিলেন, “ফুটবল মাঠে এ রকম পরিবেশ আগে কখনও দেখিনি। এখন মনে হচ্ছে, যে কোনও দিনই আমি ক্রিকেট ম্যাচের বদলে ফুটবল মাঠে আসতে পারি। পরের সপ্তাহে ভারত-শ্রীলঙ্কা আর আটলেটিকো ম্যাচ যদি একই দিনে পড়ত, আমি যুবভারতীতে আসতাম। তবে এ দিন কলকাতাকে জেতাতে পারলাম না বলে দুঃখ হচ্ছে।” ক্রিকেট-পাগল ইন্দ্রাশিস ম্যাচের প্রত্যেকটা মুহূর্ত তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলেন। পুণের গোলে যেমন হতাশা চেপে রাখতে পারলেন না। তেমনই ফিকরুর পেনাল্টি গোলে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেন গ্যালারিতে!
ফুটবল-ভক্ত হিসেবে সৃজিতও খুব একটা পরিচিত নন। ইন্দ্রাশিসের মতো তিনিও ক্রিকেট-পাগল। বছর আটেক আগে জার্মানি বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থানের ম্যাচ দেখেছিলেন স্টেডিয়ামে বসে। সেটাই যা মাঠে বসে ফুটবল ম্যাচ দেখার অভিজ্ঞতা। তবে সৃজিতও শুধু কলকাতার আটলেটিকোর টানেই যুবভারতীতে এসেছিলেন এ দিন। ম্যাচ হয়তো ফিকরুরা জিততে না পারুন, সৃজিত অবশ্য বলে গেলেন, “আইএসএল ভারতীয় ফুটবলকে অন্য জগতে তুলে নিয়ে যাবে। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের বাইরেও আমাদের দেশে ফুটবল নিয়ে এত উন্মাদনা আছে, সেটা এখানে না এলে বুঝতাম না। তবে আমাদের টিম জিতলে আরও ভাল লাগত।”
সঙ্গীতশিল্পী অনুপম রায় আবার স্রেফ ভাল ফুটবল উপভোগ করতে যুবভারতীতে এসেছিলেন। পুরো ম্যাচটা তিনি শুধু দেখলেনই না, এক জন ফুটবল বিশেষজ্ঞের মতো কাটাছেঁড়াও করছেন! “আমাদের মাঝমাঠটা একেবারে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। আসলে গার্সিয়া এত স্লো যে, সতীর্থ ফরোয়ার্ডরা বুঝতে পারছিল না কোথায় জায়গা নেবে। আমার মনে হয় গার্সিয়া পুরো ফিট নয়। তবে ফিকরু অসাধারণ। ওর পাশে একটা যোগ্য স্ট্রাইকার থাকলে ম্যাচটা হয়তো হারতে হত না।” অনুপম ম্যাচের সঙ্গে এতটাই একাত্ম হয়ে পড়েছিলেন যে, আটলেটিকোর গোল নষ্ট হলে কখনও তাঁকে দেখা গেল মাথায় হাত দিয়ে বসে। কখনও আবার ভাল কোনও মুভে উত্সাহ দিচ্ছেন হাততালিতে। কোথাও কি ‘গায়ক’ অনুপমের ফুটবলার হওয়ার গোপন ইচ্ছেটা প্রকাশ্যে চলে আসছিল?
অনুপমের মতোই ফুটবল-পাগল অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। আটলেটিকোর প্রায় প্রত্যেকটা হোম ম্যাচে তাঁকে মাঠে দেখা যাচ্ছে। যদি কখনও কাজের জন্য আটকে পড়ছেন, রাতে রিপ্লে দেখছেন বাড়িতে বসে। এ দিন হাফটাইমে পরমব্রত বলছিলেন, “আইএসএল ভারতীয় ফুটবলের চরিত্র বদলে দিয়েছে। যুবভারতীতেও যে পরিবার নিয়ে বসে খেলা দেখা যায়, সেটা বাস্তব করে দেখিয়েছে এরা। মাল্টিপ্লেক্সে খেলা দেখার মতোই।” পরমব্রতর কথা শেষ হতে না হতেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে উঠলেন, “ফুটবল মাঠের এই পরিবেশ দেখে আবার আসতে ইচ্ছে করছে। বাবার হাত ধরে ছোটবেলায় একবার মোহনবাগানের খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে গিয়েছিলাম। তার পর এই আসা। দারুণ লাগছে।” শহরের বাইরে থাকায় এ দিন ম্যাচ দেখতে আসতে পারেননি ছবির নায়িকা অপর্ণা সেন।
কলকাতার আটলেটিকোকে ঘিরে উন্মাদনার ঢেউ যে শুধু সেলিব্রিটিদের মধ্যেই আটকে, সেটা কিন্তু নয়। শহরের উত্তাল অংশগ্রহণ আর গ্যালারির মাদকতা যুবভারতীকে এমন এক জগতে পৌঁছে দিচ্ছে, যেখানে স্কোরলাইন নিছকই একটা সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে! হয়তো সে জন্য আইএসএলে আটলেটিকো এ দিন প্রথম ম্যাচ হারলেও ‘ফাটাফাটি ফুটবল’ গ্যালারিতে থেকেই গেল!