হুদহুদ আক্রান্ত স্টেডিয়াম এখন নতুন চেহারায়। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
পশ্চিম জুড়ে মাথা উঁচু করা অনামী পাহাড়। পূর্ব দিকে বিশাখাপত্তনম-শ্রীকাকুলাম হাইওয়ে। আরও পূর্বে গেলে বঙ্গোপসাগর সৈকত। এই সবের মাঝখানে ওয়াইএসআর রেড্ডি এসিএ-ভিসিডিএ স্টেডিয়াম যেন শিল্পীর হাতে আঁকা কোনও ছবি। ধর্মশালা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সঙ্গে অনেক মিল আছে এই পরিবেশের।
তফাতটা হল ধর্মশালায় বরফে ঢাকা ধৌলাধার পর্বতমালার রং ঘণ্টায় ঘণ্টায় বদলায় সূর্যের অবস্থান অনুযায়ী। মাঝে মাঝে যার আকর্ষণ ক্রিকেট দেখার আনন্দ দশগুণ বাড়িয়ে দেয়। এখানকার এই সবুজ পাহাড় অবিচল হলেও সৌন্দর্যে ভরপুর।
দু’বছর আগে অক্টোবরের এক ভোররাতে যখন রাক্ষুষে হুদহুদ আছড়ে পড়েছিল এই ছবির মতো সুন্দর স্টেডিয়ামে। তছনছ করে দিয়েছিল সবুজ মাঠ, গ্যালারি ও তার ছাউনি, তখন মাথায় হাত পড়ে গিয়েছিল এখানকার ক্রিকেট কর্তাদের। প্রকৃতির রোষে বিধ্বস্ত স্টেডিয়ামকে বাঁচাবেন, না নিজেরা বাঁচবেন, সেই দুশ্চিন্তায় পাগল হয়ে গিয়েছিলেন।
দু’দিন পর ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ান ডে হওয়ার কথা ছিল এখানে। সেই ম্যাচ তো আর হলই না। তার উপর স্টেডিয়ামের ক্ষয়ক্ষতি। আড়াই কোটি টাকার উপর। ও দিকে শহরের বিমানবন্দরেও তাণ্ডব চালিয়েছিল হুদহুদ। তার প্রভাবও ছিল মারাত্মক।
সুনামিতে যেমন শ্রীলঙ্কার গল স্টেডিয়ামের সর্বনাশ হয়েছিল, এখানেও তার চেয়ে কোনও অংশে কম ক্ষতি করেনি হুদহুদ। সেই অবস্থা থেকে উঠে এসেও ওয়াইএসআর রেড্ডি স্টেডিয়ামকে রাজ্যের সেরা ক্রিকেট পরিকাঠামো হিসেবে গড়ে তোলা ও অন্ধ্রপ্রদেশের ক্রিকেটে উন্নতির জন্য কম কাঠখড় পোড়াননি এসিএ কর্তারা।
অন্ধ্র ক্রিকেট প্রশাসনে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মানুষটি এমএসকে প্রসাদ। প্রাক্তন ভারতীয় উইকেটকিপার এখন ধোনি-কোহালিদের নির্বাচক প্রধানও। প্রসাদ বলছিলেন, ‘‘আড়াই কোটি টাকার উপর ক্ষতি হয়েছিল। আমাদের সেক্রেটারি জি গঙ্গারাজুর তৎপরতায় আর প্রখর বুদ্ধিতে সেই ক্ষতিপূরণের খরচটা আমরা কমিয়ে আনলাম প্রায় এক কোটি কুড়ি লক্ষে। নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিটা কাজ করিয়েছি। কাউকে কনট্র্যাক্ট দিইনি বেশি খরচ হবে বলে। তখন আমাদের কাছে ওটা ছিল চ্যালেঞ্জ। তখন টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার মুখে ছিলাম আমরা। কিন্তু প্রকৃতিই সেই আশা শেষ করে দিয়েছিল। তবু আমরা হাল ছাড়িনি।’’ এসিএ কর্তা সিআর মোহন আবার বলছিলেন, ‘‘যে রাতে হুদহুদ আছড়ে পড়ল, সে রাতে আমরা কয়েক জন স্টেডিয়ামে কাজ করছিলাম। দু’দিন পরেই ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ। তার প্রস্তুতি চলছিল। প্রায় দু’রাত আটকে পড়েছিলাম স্টেডিয়ামে। হোম টিমের ড্রেসিংরুমে।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘মাঝেই মাঝেই শুনছিলাম স্টেডিয়ামে এটা ওটা ভেঙে পড়ছে। কখনও চাঙড়, কখনও বিম। ঝড়ে মাঠের কভার উড়ে যেতে দেখি চোখের সামনে। কিছু করার ছিল না। ও রকম দীর্ঘ রাত কখনও আসেনি আমার জীবনে। তাও এক রাত নয়, এ রকম দু’রাত কাটাতে হয়েছে আমাদের ড্রেসিংরুমে বসে। জল, খাবার ছাড়াই। তার পর বেরিয়ে এসে দেখি চারদিক লণ্ডভণ্ড।’’
আট মাসের মধ্যে সমস্ত কাজ শেষ করে ফেলে এসিএ। পুরনো চেহারায় ফিরে আসে অন্ধ্রের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস রাজশেখর রেড্ডির নামে নামাঙ্কিত স্টেডিয়াম। যিনি ২০০৯-এ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। এ বছরের শুরুতে গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথের নেতৃত্বে বোর্ডের এক দল এসে স্টেডিয়ামের অবস্থা খতিয়ে দেখার পর বিশাখাপত্তনমকে টেস্ট স্যাটাস দেয় বিসিসিআই।
এসিএ-র লড়াই কিন্তু এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। গুন্টুরের মঙ্গলাগিরিতে আরও একটা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম তৈরি করছে তারা। সারা রাজ্য জুড়ে ১৮টা মাঠ ও স্টেডিয়াম তৈরি হচ্ছে, যেখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট হতে পারে অনায়াসে। ভিজিয়ানাগরম অনূর্ধ্ব ১৯, কাডাপায় অনূর্ধ্ব ১৪ ও মঙ্গলাগিরিতে অনূর্ধ্ব ১৬ রেসিডেন্সিয়াল অ্যাকাডেমি করা হয়েছে। তিরুপতিতেও আর একটা অ্যাকাডেমি করার পরিকল্পনা রয়েছে এসিএ-র। যা লজ্জায় ফেলতে পারে হায়দরাবাদকে।
প্রসাদ যদিও বলছেন, ‘‘হায়দরাবাদের থেকে পরিকাঠামোর দিক থেকে আমরা এখন এগিয়ে, এটুকু বলতে পারি। কিন্তু ওদের সঙ্গে আমাদের কোনও লড়াই নেই।’’ শত্রু নয়, সারা দেশের ক্রিকেট সংস্থাদের কাছে মডেল সংস্থা হয়ে উঠতে চান এমএসকে-রা।