তৃতীয় টেস্টটা হয়তো ড্র হয়েছে, কিন্তু রাঁচীতে ভারতেরই দাপটটা বেশি ছিল। প্রথমে চাপে পড়ে গেলেও ভারত কিন্তু দারুণ ভাবে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরে। অতিথিদের মেরুদণ্ড দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিতে পেরেছিল ওরা। নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, এ বার ধর্মশালায় ব্লকবাস্টার একটা ম্যাচ অপেক্ষা করে আছে।
অস্ট্রেলিয়া একটা জায়গায় ধাক্কা খাবে। অন্তত মানসিক ভাবে তো বটেই। দু’টো সেঞ্চুরি আর সাড়ে চারশো রান করেও ওরা ভারতকে কিছু করতে পারল না। ভারতীয় ইনিংসের শুরুতেও বিরাট কোহালি-সহ চার উইকেট তুলে নিয়েছিল। কিন্তু সেটাও ভারতকে চাপে ফেলার জন্য যথেষ্ট হয়নি। ওদের দু’জন তারকা স্পিনারকে উইকেট তোলার জন্য অনেক ঘাম ঝরাতে হয়েছে। আর অস্ট্রেলিয়াকে প্রায় তিন ধরে ফিল্ডিং করিয়েছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা।
ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর পিছনে রয়েছে টিমের সব থেকে কম কথা বলা দু’টো ছেলে। চেতেশ্বর পূজারা আর ঋদ্ধিমান সাহা। ওদের মধ্যে দেখনদারি ব্যাপারটা নেই। দু’জনেই পুরনো ঘরানার মানসিকতায় বিশ্বাসী। যার মানে হল, উইকেটের সামনে স্ট্রোক খেলব আর জীবন দিয়ে নিজের উইকেটটা রক্ষা করব। এই দু’জন না থাকলে কিন্তু ভারত বড় সমস্যায় পড়ে যেত।
পূজারা ক্রিজে থাকা মানে পুরো একটা সৈন্যবাহিনী থাকা। ওর ডিফেন্স লাইন ভাঙা কোনও মতেই সম্ভব নয়। কোনও গোলাগুলি, চাতুরী বা ধারাবাহিক চাপ ওকে টলাতে পারে না। অন্য দিকে ধীর-স্থির সাহা। এবং পূজারার মতোই একগুঁয়ে মানসিকতা। ভেঙে পড়া গেট সামলানোর জন্য এদের চেয়ে ভাল লোক আর কে হতে পারে।
আরও পড়ুন: নতুন ‘ওয়াল’ পূজারা কী ভাবে হলেন অলরাউন্ডার থেকে ব্যাটসম্যান
রবীন্দ্র জাডেজার কথাও ভুললে চলবে না। ও নিজের খেলাকে অন্য মাত্রায় তুলে এনেছে। জাডেজা এখন ম্যাচ জেতানো বোলার হয়ে উঠেছে। লাইন-লেংথটা আগের মতোই নিখুঁত আছে। তার সঙ্গে আরও যোগ হয়েছে বৈচিত্র। দক্ষতাও বেড়েছে। পাশাপাশি রাঁচীতে ব্যাট হাতেও অস্ট্রেলিয়াকে ঝামেলায় ফেলেছিল জাডেজা।
সিরিজের তিনটে টেস্টে দুর্দান্ত লড়াই দেখলাম আমরা। কোনও সন্দেহ নেই, ক্রিকেটারদের নার্ভের ওপরও এর প্রভাব পড়েছে। এ রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুব কমই দেখা যায়। আমরা যেন এত দিন ধরে দুর্ধর্ষ সব থিয়েটার দেখে চলেছি। যেখানে ভাল, খারাপ সবই আছে। ক্রিকেটীয় স্পিরিট না ভেঙে যদি নাটকে একটু মশলা যোগ করা যায়, তা হলে ক্ষতি কী? এতে তো ব্যাপারটা আরও জমে যাবে।