প্রস্তুতি: লিভারপুলের ভরসা মহম্মদ সালাহ (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র
যে রাতে বার্সেলোনাকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে উঠেছিল এ এস রোমা, সেই রাতেই আরও একটা অঘটনের সাক্ষী ছিল ফুটবল বিশ্ব। দুরন্ত ছন্দে থাকা ম্যাঞ্চেস্টার সিটির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বপ্ন ধ্বংস করেছিল লিভারপুল। আজ, মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আকর্ষণের কেন্দ্রে শুধু লিভারপুল বনাম রোমা দ্বৈরথই নয়। ফুটবলপ্রেমীরা তাকিয়ে থাকবেন দুই চাণক্য লিভারপুলের য়ুর্গেন ক্লপ ও রোমার ইউসেবিও দি ফ্রান্সিসকোর মস্তিষ্কের লড়াইয়ের দিকেও।
হারিয়ে যাওয়া গৌরব পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বছর তিনেক আগে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ক্লপকে নিয়ে এসেছিলেন লিভারপুল কর্তারা। প্রথম দু’টো মরসুমে উল্লেখযোগ্য সাফল্য না পেলেও লিভারপুলের ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। আর এই মরসুমে সম্পূর্ণ বদলে যাওয়া লিভারপুলকে দেখলেন ফুটবলপ্রেমীরা। যদিও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেতাবি দৌড় থেকে ছিটকে গেলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন মহম্মদ সালাহরা।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম পর্বে ঘরের মাঠে ম্যান সিটির বিরুদ্ধে লিভারপুলের ৩-০ জয়কে অঘটন মনে করেছিলেন অনেকে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বেও ম্যান সিটির ঘরের মাঠে ২-১ জিতেছিলেন সাদিও মানে, আলেক্স ওক্সলাডে চেম্বারলিনরা।
রোমার বিরুদ্ধে মঙ্গলবারও কি অ্যানফিল্ডে দেখা যাবে লাল ঝড়? লিভারপুল ম্যানেজার অবশ্য প্রতিপক্ষকে রীতিমতো সমীহ করছেন। শৈশবে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখা ক্লপ বলেছেন, ‘‘জীবন বাজি রেখে খেলবে রোমার ফুটবলাররা। তাই কঠিন লড়াই হবে।’’ বার্সেলোনার বিরুদ্ধে রোমার ঐতিহাসিক জয় ফুটবলপ্রেমীদের চমকে দিলেও বিস্মিত নন ক্লপ! তিনি বলেছেন, ‘‘প্রথম পর্বে বার্সেলোনার বিরুদ্ধে রোমার হার দেখে অবাক হয়েছিলাম। তবে ওরা যে ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল তাতে আমি খুব খুশি।’’ লিভারপুল ম্যানেজার উদ্বিগ্ন রোমা ম্যানেজারের রণনীতি নিয়েও। ক্লপ বলেছেন, ‘‘রোমা প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলে। দুরন্ত ছন্দে স্ট্রাইকার এডেন জেকো। তা ছাড়া রোমার সেট-পিসও ভয়ঙ্কর।’’
লিভারপুলের বিরুদ্ধে ম্যাচে রোমা শিবিরে সব চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা সালাহকে নিয়েই। গত মরসুমেই রোমা ছেড়ে তিনি যোগ দিয়েছেন লিভারপুলে। ইপিএলে এই মরসুমে ৩৮ ম্যাচে ৩১ গোল করে শুধু ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ও অ্যালান শিয়েরারের নজির স্পর্শ করেননি, পেশাদার ফুটবলাদের সংগঠনের (পিএফএ) বিচারে সেরা নির্বাচিতও হয়েছেন। মিশরের ফুটবলার হিসেবে তিনিই প্রথম এই খেতাব জিতলেন। তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তা হওয়াই স্বাভাবিক। রোমার প্রাক্তন তারকা ফ্রান্সিসকো তোত্তিও উচ্ছ্বসিত সালাহকে নিয়ে। তিনি বলেছেন, ‘‘সালাহ শুধু অসাধারণ ফুটবলার নয়, এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা। বিশ্বের সব সেরা ক্লাবের ম্যানেজারই ওকে দলে নেওয়ার স্বপ্ন দেখেন।’’
ব্যতিক্রম রোমা ম্যানেজার ফ্রান্সিসকো। তিনি বলেছেন, ‘‘লিভারপুলে সালাহ থাকায় আমাদেরই সুবিধা হবে। কারণ, আমার ফুটবলাররা ওকে খুব ভাল চেনে।’’ ফ্রান্সিসকো দায়িত্ব নেওয়ার বছরেই রোমা ছেড়ে লিভারপুলে চলে গিয়েছিলেন সালাহ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের প্রথম পর্বের আগে রোমা ম্যানেজার বলেছেন, ‘‘সালাহ দুর্দান্ত ফুটবলার। প্রচুর পরিশ্রম করে। কিন্তু ভুলে যাবেন না, সালাহকে আটকানোর রণকৌশল আমার জানা আছে।’’ অ্যানফিল্ডে সালাহকে আটকানোর দায়িত্ব সম্ভবত দানিয়েল দে রোসিকেই দেবেন রোমা ম্যানেজার। কারণ, বার্সেলোনার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় পর্বে লিয়োনেল মেসিকে দুর্দান্ত ভাবে সামলেছিলেন তিনি। তোত্তি বলছেন, ‘‘দে রোসি একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। বছরের পর বছর ধরে একই রকম ছন্দে খেলে যাচ্ছে। ওর অভিজ্ঞতা দলের সম্পদ।’’
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল: লিভারপুল বনাম এ এস রোমা (রাত ১২.১৫, সোনি সিক্স চ্যানেলে)।