ভরসা: ব্রাজিলের সেরা আকর্ষণ পাওলিনহো। ফাইল চিত্র
অনুশীলনে কড়া অনুশাসন।
মাঠের বাইরের ছবিটা কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টো।
ম্যাচ জয়ের পর টিম হোটেলে গভীর রাত পর্যন্ত উৎসব, আড্ডা— কোনও কিছুতেই আপত্তি নেই অনূর্ধ্ব-১৭ ব্রাজিল দলের কোচ কার্লোস আমাদেউ-এর। কিন্তু অনুশীলনে কোনও ফুটবলার দেরি করে নামলেই শাস্তি অবধারিত।
প্রথম ম্যাচে স্পেনের বিরুদ্ধে দুরন্ত জয়ের পর গভীর রাত পর্যন্ত টিম হোটেলে উৎসবে মেতে উঠেছিল পুরো ব্রাজিল দল। মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়া-কে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় খেলা নিশ্চিত করার পরেও উৎসব হয়েছে। অথচ বুধবার সকাল আটটার উড়ানেই নিজারের বিরুদ্ধে গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলতে গোয়া রওনা হয়েছে লিঙ্কন ডস স্যান্টোস, পাওলো হেনরিক সাম্পাইও ফিলপো (পাওলিনহো)-রা।। এক বছর আগে গোয়াতেই ব্রিকস কাপ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ৫-১ হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল। গোল করেছিল অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে দুরন্ত ফর্মে থাকা পাওলিনহো ও অ্যালেন ডি’সুজা। গোয়া যাওয়ার জন্য ভোর বেলা উঠতে হলেও মঙ্গলবার রাতে ব্রাজিল কোচ কাউকে বলেননি, সকালের উড়ানে আমাদের গোয়া যেতে হবে। তোমরা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়। কার্লোসের ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা ব্রাজিলীয়রা একটু বেশি আবেগপ্রবণ। সাফল্যে যেমন উৎসবে মেতে উঠি। তেমনই সামান্য ব্যর্থতাতেও দ্রুত ভেঙে পড়ি। তাই আমি কখনও ম্যাচ জয়ের পরে ফুটবলারদের উৎসবে বাধা দিই না। মনে করি, উৎসব করার অধিকার ওরা পরিশ্রম করে অর্জন করেছে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, দলের ভিতরের খোলামেলা পরিবেশ বজায় রাখা।’’
কার্লোস শুধু কোচ নন। ফুটবলারদের বন্ধুও।
আরও পড়ুন: চোকার নয়, প্রমাণ করল ফুটবলের জাদুকর
একই দর্শন সঞ্চারিত হয়েছে ব্রাজিলের খেলার মধ্যেও। স্পেনের বিরুদ্ধে মাঝমাঠে অসাধারণ খেলেছিল মার্কোস আন্তোনিও। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কিন্তু চেনা ছন্দে পাওয়া যায়নি ফ্ল্যামেঙ্গোর ফুটবলারকে। এই ম্যাচে ব্রাজিল মাঝমাঠের সেরা ফুটবলার ভিক্টর ববসিন। প্রথম ম্যাচে ঠিক মতো খেলতে না পারার জন্য যাকে ৬০ মিনিটে তুলে নিয়ে রদরিগো গুথ-কে নামাতে বাধ্য হয়েছিলেন কার্লোস। অথচ মঙ্গলবার সেই ভিক্টর-ই অবিশ্বাস্য ফুটবল উপহার দিল। হাসতে হাসতে কার্লোস বলছিলেন, ‘‘আমাদের দলের সাফল্যের এটাই তো প্রধান কারণ। সব দলেরই মাঝমাঠে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো এক জন ফুটবলার দরকার হয়। প্রথম ম্যাচে আন্তোনিও এই কাজটা করেছিল। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ভিক্টর নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে আন্তোনিও-র অভাব পূরণ করে। যা প্রমাণ করে, কোনও এক জনের উপর আমরা নির্ভরশীল নই। বিকল্প সব সময়ই আমাদের তৈরি।’’
রোনাল্ডিনহোর ক্লাব গ্রেমিও থেকে উত্থান ভিক্টরের। অনেকটা কাকা-র মতো মুখের আদল। ছয় ফিটের কাছাকাছি উচ্চতা। লম্বা ছিপছিপে চেহারা। ব্রাজিলের সিনিয়র দলের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখলেও ভিক্টরের আদর্শ সের্জিও বুস্কেৎস! ব্রাজিল মিডফিল্ডারের কথায়, ‘‘বুস্কেৎস মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করে। অসাধারণ পাস দেয় দলের অন্য ফুটবলারদের। সেই সঙ্গে বিপক্ষের আক্রমণও রোধ করে। আমি বুস্কেৎসের খেলা নকল করার চেষ্টা করি।’’ এখানেই শেষ নয়। কোচের কথার প্রতিধ্বনিই শোনা গেল ভিক্টরের গলায়, ‘‘অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ হচ্ছে নিজেদের প্রমাণ করার সেরা মঞ্চ। এই টুর্নামেন্ট আমাদের জীবন বদলে দিতে পারে। এখানে ভাল খেললে সিনিয়র দলে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়া অন্য কোনও লক্ষ্য নেই।’’
দুই ম্যাচে ছয় পয়েন্ট নিয়ে ‘ডি’ গ্রুপের শীর্ষে এই মুহূর্তে ব্রাজিল। চব্বিশ ঘণ্টা আগে উত্তর কোরিয়া-কে হারিয়ে শেষ ষোলোয় খেলা নিশ্চিত করে ফেলেছে পাওলিনহো-রা। ১৩ অক্টোবর, শুক্রবার নিজারের বিরুদ্ধে ম্যাচটা কার্যত নিয়মরক্ষার হলেও জয়ের ছন্দ ধরে রাখতে মরিয়া ব্রাজিল কোচ। কার্লোস বললেন, ‘‘টানা দু’টো ম্যাচ জিতে আমরা হয়তো একটু ভাল জায়গায় রয়েছি। কিন্তু তা নিয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। বিশ্বকাপের কোনও ম্যাচই সহজ নয়। আর ব্রাজিল জেতার জন্যই খেলে।’’
কার্লোস মুখে না বললেও ব্রাজিল শিবিরের খবর, নিজারের বিরুদ্ধে প্রথম দলের বেশি কিছু ফুটবলারকে বিশ্রাম দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। কারণ, স্পেনের বিরুদ্ধে হারের পর নিজার কোচ ইসমালিয়া তিয়েমোকো হুঙ্কার দিয়ে রেখেছেন, ‘‘আমাদের হারানোর কিছু নেই। তাই ব্রাজিলের বিরুদ্ধে জিততে সমস্ত রকম রকম ঝুঁকি নিতে তৈরি। ওরা বিশ্বের অন্যতম সেরা শক্তি হলেও সহজে কিন্তু জিততে দেব না!’’
খেতাবের লক্ষ্য অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটতে থাকা ব্রাজিল কোচের পক্ষে এর পরেও কী আর ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব?