ফুঁসছে বোর্ড, সুর যুদ্ধেরই

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে আইসিসি ও ভারতীয় বোর্ডের মধ্যে যুদ্ধের দামামা আরও তীব্র হয়ে উঠল। যা পরিস্থিতি, বিরাট কোহালি বনাম স্টিভ স্মিথ— সদ্য হয়ে যাওয়া টেস্ট সিরিজের মতোই রক্তক্ষয়ী নতুন সংঘাত আসন্ন।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৭ ০৩:০১
Share:

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে আইসিসি ও ভারতীয় বোর্ডের মধ্যে যুদ্ধের দামামা আরও তীব্র হয়ে উঠল। যা পরিস্থিতি, বিরাট কোহালি বনাম স্টিভ স্মিথ— সদ্য হয়ে যাওয়া টেস্ট সিরিজের মতোই রক্তক্ষয়ী নতুন সংঘাত আসন্ন।

Advertisement

ভারতীয় বোর্ডের সদস্যরা মিলে মঙ্গলবার সকালেই একটি টেলিকনফারেন্স করেন। তাতে তাঁরা আইসিসি-কে একটি নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোহালিদের বোর্ড সেই নোটিসে লিখতে চলেছে যে, ভারতের সঙ্গে মেম্বার্স পার্টিসিপেশন এগ্রিমেন্ট (এমপিএ) যা ছিল, তা লঙ্ঘন করেছে আইসিসি। যে টাকাটা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল চুক্তিতে, তা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা পরিষ্কার চুক্তি লঙ্ঘন করা। অবিলম্বে পুরনো আর্থিক মডেলে ফিরে না গেলে ভারত উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।

ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন যে, নিয়ামক সংস্থার প্রধান এক জন ভারতীয়— শশাঙ্ক মনোহর। তিনি নিজের দেশের বোর্ডের টাকা কমিয়ে দিচ্ছেন। আবার তাঁর নিজের দেশের বোর্ড পত্রাঘাত করে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ মানে অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ। চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখতে চাইছে ভারতীয় বোর্ড যে, তাদের টাকা কমিয়ে দেওয়া হলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে না খেলার দরজাও খোলা রইল।

Advertisement

আইসিসি-র আইনি ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ‘এমপিএ’ নিয়ে কোনও সদস্য দেশের আপত্তি থাকলে, এক মাসের সময় দিয়ে নোটিস পাঠাতে হয় নিয়ামক সংস্থার কাছে যে, তোমার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নাও। নিয়ামক সংস্থা তা না করলে আইনি পদক্ষেপ করা যেতে পারে। ভারতীয় বোর্ড সেটাই করার দিকে এগোচ্ছে। আরও পড়ুন: কর্টিজেন নিয়ে মাঠে ক্রিস লিন

কিন্তু বোর্ড সদস্যদের সকালের টেলিকনফারেন্স নিয়ে তীব্র ঝামেলা শুরু হয়ে যায় বোর্ডের অভ্যন্তরে। বোর্ডের প্রশাসন ভার এখন যুগ্মভাবে রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত পর্যবেক্ষক এবং নির্বাচিত পদাধিকারীদের হাতে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে দু’পক্ষ দুই মেরুতে। বোর্ড সদস্যরা টেলিকনফারেন্স করেছেন জানতে পেরে দুপুরের মধ্যেই পর্যবেক্ষক দলের নেতৃত্বে থাকা বিনোদ রাই চিঠি পাঠিয়ে দেন পদাধিকারীদের কাছে। তাতে রাই সতর্কবার্তা জারি করে বলেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না কেউ।

পর্যবেক্ষকদের এমন মনোভাবের পিছনে একটা কারণ শোনা যাচ্ছে যে, টেলিকনফারেন্সে এন শ্রীনিবাসন নামে এক ব্যক্তির উপস্থিতি। তা নিয়ে বোর্ড মহলেও কারও কারও উষ্মা রয়েছে। ইংল্যান্ডে ছুটি কাটাতে যাওয়া শ্রীনি টেলিকনফারেন্সে ‘এমপিএ’ বা আইসিসি-র সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে দেওয়ার দাবি তোলেন। সেটা করলে এ দিনই এসপার-ওসপার করে ফেলা হতো যে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলছেন না কোহালিরা। সেই চরম সিদ্ধান্ত মানতে রাজি হননি সবাই।

সকালের টেলিকনফারেন্সে ১২-১৩ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন বলে শোনা গেল। যে সব রাজ্য সংস্থার সচিব বা প্রেসিডেন্ট ছিলেন না, তাঁদের সঙ্গে পরে শ্রীনি নাকি ব্যক্তিগত ভাবে ফোন করে কথা বলবেন বলে জানান।

তবে শ্রীনি একা এই যুদ্ধে সামিল, এমন ভাবার কারণ নেই। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গেও অনেক সদস্যের কথা হয়েছে। এমনিতে বোর্ড রাজনীতিতে শ্রীনির সঙ্গে এখনও হাত মেলাতে নারাজ অনুরাগ। কিন্তু আইসিসি-র টাকা কমিয়ে দেওয়া নিয়ে দু’জনের মনোভাব এক। অনুরাগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আইসিসি-কে নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করবে তাঁর রাজ্য হিমাচল প্রদেশ।

উত্তরাঞ্চলের এক বোর্ড কর্তা মঙ্গলবার রাতে ইঙ্গিত দিলেন, দরকার হলে পর্যবেক্ষকদের আপত্তি না শুনেই বোর্ড আইসিসি-কে পত্রাঘাত করবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের প্রথম ম্যাচ ৪ জুন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচের আগে এক মাস সময় দেওয়ার জন্যই ৭ মে বিশেষ সাধারণ সভা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে বুধবারের মধ্যে চিঠি পাঠাতে চায় বোর্ড। ‘‘দু’দিন পরে চিঠি পাঠালে এক মাস সময় দেওয়া মানে পাকিস্তান ম্যাচ খেলা হয়ে যাবে। মাঠে নেমে পড়লে আর নাম তুলে নেওয়া যাবে না,’’ মঙ্গলবার বললেন এক প্রভাবশালী বোর্ড কর্তা।

একটা মত রয়েছে বোর্ডে যে, আইপিএল চলাকালীন চরম যুদ্ধে না যাওয়াই ভাল। যদি অন্যান্য দেশ তাদের ক্রিকেটারদের ডেকে নেয়। বিশ্ব বনাম ভারত সত্যিই লেগে গিয়েছে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement