ব্রাজিল ০ : দক্ষিণ আফ্রিকা ০
ব্রাজিলে ব্রাজিল ফুটবল টিম নামলেই কি কিছু হয়? অভিশাপ তাড়া করে?
পঞ্চাশের কুখ্যাত মারাকানাজো। গত বিশ্বকাপের মিনেইরেজো। তবু মারাকানাজো অভিশাপের চেয়ে আশীর্বাদ হিসেবেই ধরা দিয়েছিল পরে। ’৫০-এর বিশ্বকাপ ফাইনালে উরুগুয়ের কাছে দেশের বিদীর্ণ করা হার দেখে এক কিশোর বাবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, কোনও না কোনও দিন বিশ্বকাপ তাঁকে দেবেনই। ছেলেটাকে পরে লোকে চিনেছিল পেলে নামে।
মিনেইরেজোর পর সে রকম কোনও রোম্যান্টিকতার খোঁজ নেই। জার্মানির কাছে গত বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ১-৭ ধ্বংসের পর এমন কাউকে পাওয়া যায়নি, যাঁকে নিয়ে প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখতে পারে ফুটবলের দেশ। নেইমার ছিলেন, নেইমার আছেন। কিন্তু ব্রাজিল যেন আটকে আছে শুধু নেইমারে। প্রতিভা নেই। প্রতিশ্রুতি নেই। বিশ্বের বামন-ফুটবল দেশের বিরুদ্ধে ব্রাজিলের জেতাও আজ আর নিশ্চিত নয়।
ব্রাজিল এখন দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারাতে পারে না! ম্যাচ শেষ করে গোলশূন্য ড্রয়ে!
রিও অলিম্পিক্সে ফুটবলে সোনা পাওয়ার দাবিদার বলে ধরা হচ্ছে নেইমারদের। বলাবলি চলছে, বাকি টিমগুলোর মধ্যে ব্রাজিলই সবচেয়ে ভাল। নেইমার তো বটেই, সঙ্গে প্রতিভাবান দুই গ্যাব্রিয়েলও আছেন। একজন গ্যাব্রিয়েল বারবোসা। গোল করার ‘বদভ্যাসের’ জন্য যাঁর নামই গ্যাবিগোল। আর এক জন গ্যাব্রিয়েল জেসাস। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি যাঁকে তুলে নিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অলিম্পিক্স উদ্বোধনী ম্যাচ যদি সূচক হয়, তা হলে দুই গ্যাব্রিয়েল নিয়ে এখনই স্বপ্ন দেখার কিছু হয়নি।
নেইমারের সঙ্গে গ্যাবিগোল আফ্রিকা ডিফেন্সেকে জ্বালিয়েছেন, কিন্তু ভাঙতে পারেননি। জেসাস আবার ৬৯ মিনিটে সহজতম সুযোগ নষ্ট করেন পোস্টে মেরে। সামনে তখন ফাঁকা গোল ছিল। ভাবা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ৫৯ মিনিটের পর থেকে বাকি সময়টা দশ জনে খেলেছে। কিন্তু তার পরেও ব্রাজিল গোল করতে পারেনি। অথচ ম্যাচে গোটা কুড়ি শট নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা গোলে, নেইমার একাই পাঁচটা মেরেছেন— তবু না। ব্রাজিল দর্শক সব দেখেশুনে এতটাই বিপর্যস্ত যে, নেইমারদের ব্যঙ্গ করতেও ছাড়েনি। কোনও কোনও উত্তেজিত ব্রাজিল সমর্থক সোশ্যাল সাইটে লিখেও দিয়েছেন যে, এই ব্রাজিলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে লাভ নেই। এরা লন্ডন অলিম্পিক্সের চেয়েও খারাপ! চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্তিনার অলিম্পিক্সের প্রথম ম্যাচেই পর্তুগালের কাছে দু’গোলে হারও যে রোষানল নেভাতে পারছে না।
ব্রাজিলের অলিম্পিক্স কোচ রোজারিও মিকেল পরে বলেছেন, ‘‘ম্যাচের সেরা সুযোগগুলো আমরা তৈরি করেছি। কিন্তু গোলটাই হল না। দক্ষিণ আফ্রিকা আমাদের কাজ কঠিন করে দিয়েছিল।’’ গ্যাব্রিয়েল জেসাস আবার বলে যান, ‘‘গোলটা করা উচিত ছিল। এই গোল মিস করলাম! ঘুমোতে পারব না সারা রাত।’’
শুনলে খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু বাস্তব এখন এটাই। রূপকথার ওলটপালট না হলে আরও কত নির্ঘুম রাত গ্যাব্রিয়েল জেসাসদের জন্য অপেক্ষা করে আছে কে জানে!