নায়ক: ব্রাজিলের জয়ে নায়ক লিঙ্কন। মঙ্গলবার। ছবি: গেটি ইমেজেস
স্পেনের পর এ বার উত্তর কোরিয়া— বিধ্বস্ত সাম্বার ছন্দে। নেপথ্যে ফের লিঙ্কন ডস স্যান্টোস-পাওলো হেনরিক সাম্পাইও ফিলপো (পাওলিনহো) যুগলবন্দি।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় যোগ্যতা অর্জনের জন্য ব্রাজিলের দরকার ছিল একটা জয়। মঙ্গলবার কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সেই ভাবেই শুরু করেছিল পাওলিনহো-রা। কিন্তু ম্যাচের দু’মিনিটে লিঙ্কন পেনাল্টি বক্সের মধ্যে উত্তর কোরিয়া গোলরক্ষক সিন তে সং-কে একা পেয়েও গোল করতে পারেনি। এর পরেই আশ্চর্যজনক ভাবে বদলে যায় পরিস্থিতি। পাওলিনহো-লিঙ্কন ও ব্রেনের সৌজা ডি’সিলভা-দের জন্য চক্রব্যূহ রচনা করে
উত্তর কোরিয়া।
ব্রাজিল কোচ কার্লোস আমাদেউ ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে এই আশঙ্কাই করেছিলেন। সেই কারণেই অনুশীলনে ক্রিকেট মাঠের ‘থার্টি ইয়ার্ডস’-এর মতো বৃত্ত তৈরি করেছিলেন। স্ট্রাইকার ও মিডফিল্ডারদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, বৃত্তের মধ্যে দাঁড়ানো ডিফেন্ডারদের প্রতিরোধ ভেঙে গোল করতে। এ দিন উত্তর কোরিয়ার ফুটবলাররা ব্রাজিলকে আটকাতে ঠিক এ রকমই অদৃশ্য বলয় তৈরি করেছিল। উত্তর কোরিয়া দলের দর্শন খুবই স্পষ্ট— কোনও মতেই ব্রাজিলকে গোল করতে
দেওয়া চলবে না।
আরও পড়ুন: তিকিতাকার তুফান তুলে ফিরল স্পেন
কার্লোস আরও একটা অনুশীলন করিয়েছিলেন ম্যাচের আগের দিন। ফ্রি-কিক থেকে গোল করা। কিন্তু এই মহড়ায় তিনি মানবপ্রাচীর তৈরি করেছিলেন চার জন ফুটবলারকে রেখে। সেই সময় তিনি ভাবতেও পারেননি, এ দিন ব্রাজিল ফ্রি-কিক পেলেই উত্তর কোরিয়ার দশ জন ফুটবলার দাঁড়িয়ে পড়বে মানব প্রাচীরে! ফল যা হওয়ার তাই হল। বারবার সেই দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরল বল। আরও রক্তচাপ বাড়ল ব্রাজিল কোচের। ৭৩ শতাংশ বলের দখল রেখেও প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পর উদ্বেগ নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরল ব্রাজিলের ফুটবলাররা।
১৯৫৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের মাধ্যমেই গোটা বিশ্ব জানতে পেরেছিল, ফুটবল দলেও মনোবিদ প্রয়োজন। অনূর্ধ্ব-১৭ ব্রাজিল দলটায় কোচ কার্লোসই মনোবিদের কাজ করেন। ফুটবলারদের সব সময় বলেন, ‘‘তোমরা যে ব্রাজিল দলের জার্সি পরে খেলার যোগ্য, তার প্রমাণ মাঠে নেমেই করতে হবে।’’
উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পরে ড্রেসিংরুমে ফিরেও তাই বলেছিলেন পাওলিনহোদের। পাশাপাশি সামান্য পরিবর্তন করেন পরিকল্পনায়।
গতির যুদ্ধে উত্তর কোরিয়া-কে হারানো কঠিন। তাই পাওলিনহো-দের তিনি নিজেদের মধ্যে যত বেশি সম্ভব পাস খেলে ম্যাচের গতি কমিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন। আর তাতেই বিভ্রান্ত উত্তর কোরিয়া।
তিকিতাকা মানে শুধু স্পেন নয়। ব্রাজিলও!
সাম্বার ছন্দ তিকিতাকার সঙ্গে মিশে আরও মোহময়। আরও আকর্ষণীয়। অথচ দেখলেন জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের মাত্র হাজার বিশেক দর্শক! অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের জন্য কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের দর্শকাসন কমিয়ে ২৯ হাজার করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও গ্যালারি
থাকল ফাঁকা!
ব্রাজিলের এই স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন উত্তর কোরিয়ার ফুটবলাররা বুঝে ওঠার আগেই বিপর্যয়। ৫৬ মিনিটে গোল করে লিঙ্কন। উচ্ছ্বাসে রিজার্ভ বেঞ্চে লাফিয়ে উঠেছিলেন কার্লোস। পাঁচ মিনিট পরে গোল পাওলিনহোর। ম্যাচের পর কার্লোস বলছিলেন, ‘‘বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমরা তৈরি ছিলাম। দল পিছিয়ে থাকলে এ রকম পরিকল্পনা। আর এগিয়ে থাকলে অন্য রকম স্ট্র্যাটেজিতে খেলব। দু’বছর ধরে আমরা এই ভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি।’’ ২-০ এগিয়ে যাওয়ার পরেই পাওলিনহো-কে তুলে নেন কার্লোস। ব্রাজিল কোচের ব্যাখ্যা, ‘‘সামান্য চোট পেয়েছিল পাওলিনহো। তাই ওকে মাঠে রাখার ঝুঁকি নিইনি।’’
দুই ম্যাচে ছয় পয়েন্ট নিয়ে ‘ডি’ গ্রুপের শীর্ষে ব্রাজিল। আজ, বুধবার গোয়া উড়ে যাচ্ছে পাওলিনহো-রা। ১৩ অক্টোবর শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ নিজার। সেই ম্যাচেও নতুন কোনও স্ট্র্যাটেজি দেখা যাবে তার অপেক্ষায় ফুটবল বিশ্ব।