টেস্ট অভিষেকেই দুরন্ত ৭৮ স্টুয়ার্ট বিনির। ছবি:এএফপি
প্রথম টেস্ট ড্র হয়ে যাওয়ার পর যখন ট্রেন্ট ব্রিজের বাইশ গজে বোলিং অনুশীলন করছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, তখনও বেশ কষ্ট করে তাঁকে বল ঘোরাতে হচ্ছিল। উইকেটের হাল এ রকমই।
ভারত-ইংল্যান্ড প্রথম ড্র টেস্টের শেষে যাঁরা প্রশ্নটা তুলছেন যে, অশ্বিনকে দলে রাখলে বোধহয় ভারত ম্যাচটা জিততেও পারত, তামিল স্পিনারের এই বোলিং দেখে তাঁরা হয়তো আর কথা বলতেন না। ম্যাচ শেষে ধোনি তাই বললেন, “আমার মনে হয়, সিদ্ধান্তটা ঠিকই ছিল। এই উইকেটে অশ্বিন কিছু করতে পারত বলে মনে হয় না। বরং যা অবস্থা ছিল, তাতে জাডেজা সেটাকে কাজে লাগাতে পারত। সেই ভেবেই ওকে নেওয়া।” কিন্তু সারা ম্যাচে ৩৫ ওভার বল করে ৮০ রান দিয়ে কোনও উইকেট পাননি জাডেজা। সে দিক দিয়ে সিদ্ধান্তটা ঠিক না-ই লাগতে পারে।
যদিও প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অন্য মত। বৃহস্পতিবার থেকে লর্ডস টেস্টে দলে তেমন কোনও বিশেষ পরিবর্তন আশা না করলেও তিনি অশ্বিনকে নিতে বলছেন। বললেন, “ব্যাটিং বিভাগ ঠিকই আছে। শুধু অশ্বিনকে নিয়ে এলেই বোধহয় দলটা আরও ভাল জায়গায় চলে যাবে।”
ট্রেন্ট ব্রিজের চেয়ে লর্ডসে যে ভাল উইকেট থাকবে, সেই আশায় দুই ক্যাপ্টেনই। এই টেস্টে উইকেটের হাল যে বেশ খারাপ, তা কুক স্বীকার করে নিয়ে বললেন, “ভাল উইকেট আশা করেছিলাম। সেটা হয়তো লর্ডসে পাব।” ধোনিও পরিস্কার জানিয়ে দিলেন, আর একটু প্রাণবন্ত উইকেট পেলে তাঁরা আরও ভাল খেলবেন। কিন্তু সেখানে অশ্বিনকে দেখা যাবে কি না, তার ইঙ্গিত দিলেন না। ইংল্যান্ডকে ২৯৮-৯ করে দেওয়ার পরও তাদের আরও প্রায় দুশো রান করতে দেওয়ার ব্যর্থতা অশ্বিনের বোলিং দিয়ে বোধহয় ঢাকা যেত না। ওই জায়গা থেকেই যে ইংল্যান্ড ভারতের হাত থেকে ম্যাচ বের করে নিল, সে কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়ে ভারতীয় ক্যাপ্টেন ধোনি এ দিন ম্যাচের পর বললেন, “ওদের ওই শেষ জুটিটাকে ভাঙার জন্য যা যা করা দরকার ছিল সবই আমরা করেছি। এতে বোলারদের দোষ দেব না। এক এক দিন এমন হয়। কোনও কিছুই ঠিক চলে না। সে দিনও সেটাই হয়েছিল আমাদের। বলটা নরম হয়ে গিয়েছিল। বোলাররাও ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল।”
বরং যে স্টুয়ার্ট বিনিকে ‘ব্যাড ইনভেস্টমেন্ট’ বলে গত চার দিন ধরে হইচই হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট মহলে, সেই বিনিই রবিবার শেষ দিন ৭৮-এর একটা ইনিংস খেলে ভারতকে ‘ডেঞ্জার জোন’ থেকে বের করে আনলেন। মুরলীর ৫২, পূজারার ৫৫ ছাড়া আর কারও ব্যাটে তেমন রান না আসায় সকালে ভারত ১৮৪-৬ হয়ে যাওয়ার পর যখন ট্রেন্ট ব্রিজের রবিবাসরীয় গ্যালারিতে ইংরেজ সমর্থকদের মনে এক অভাবনীয় সমাপ্তির আশা জাগতে শুরু করেছে, তখনই স্টুয়ার্ট বিনি ৭৮ রান করে তাঁদের সেই আশায় কয়েক গ্যালন জল ঢেলে দিল।
আগের দিন যেমন অ্যান্ডারসন ও রুট ভারতের হাত থেকে ম্যাচ বের করে নিয়েছিলেন, এ দিন তেমনই বিনি ও ভুবনেশ্বর কুমারের (৬৩ অপরাজিত) ৯১-এর জুটি তাঁদের হাত থেকে ম্যাচ বের করলেন। গোটা টেস্টে বেশিরভাগ সময় নিজেদের বাঁচানোর খেলাই খেলতে দেখা গেল দুই দলকে। সে জন্যই বোধহয় ম্যাচের পর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলছিলেন, “এই টেস্টে কেউ না জিতুক, একটা জিনিস পরিস্কার যে দু’দলই কিন্তু সমান জায়গায় আছে। আমার মনে হচ্ছে, সিরিজটা বেশ জমজমাট হবে।”
ট্রেন্ট ব্রিজে গ্যালারির দর্শকরা মাঠে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই উপভোগ করতে না পারলেও ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা অবশ্য সৌরভ-রাহুলের ঠান্ডা ‘ডুয়েল’-এর মজা নিলেন টিভির সামনে বসে। বিরতিতে ক্যামেরার সামনে সচিনের বোলিং প্রসঙ্গ উঠলে সঞ্চালক হর্ষ ভোগলে বলেন, “সৌরভের চেয়ে সচিনের টেস্ট উইকেট বেশি।” সৌরভ উত্তর দেন, “কারণ, সচিন তার অর্ধেক ওভারই করেছে দেশের মাঠে, ঘূর্ণি উইকেটে। আমি যদি একটু স্পিন করতে পারতাম। তাও পাটা ব্যাটিং উইকেটে। যেখানে স্কিল দরকার, সেখানে ইকোনমিটা দেখুন (২০০৭-এ ২.৩ রান প্রতি ওভার)।” দ্রাবিড় পাল্টা মন্তব্য করেন, “কমেন্ট্রি বক্সে মঞ্জরেকর বলছিল, সৌরভের একটু বেশি গতি ও ফিটনেস থাকলে ম্যাচ উইনার হতে পারত।” সৌরভ তার তির্যক জবাব দেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলে বোধহয় এগুলো সবই করতে পারতাম।” দ্রাবিড় ফের অভিযোগ করেন, “সৌরভ ৫-৬ ওভার বল করে ক্লান্ত হয়ে না পড়লে ওকে আরও বেশি বল করাতে পারতাম।” সৌরভ উত্তরে বলেন, “মনে আছে, টানা দশ ওভার করে ১-১৫ করেছিলাম। আমি একপেশে লোক দেখেছি। কিন্তু এত একপেশে দেখিনি।” ব্যাপারটা অন্য দিকে যাচ্ছে দেখে কিছুক্ষণ পরই এই কথোপকথন শেষ করে দেন হর্ষ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত- প্রথম ইনিংস- ৪৫৭ (মুরলী ১৪৬, ধোনি ৮২, ভুবনেশ্বর ৫৮, শামি ৫১, অ্যান্ডারসন ৩-১২৩), ইংল্যান্ড ৪৯৬ (রুট ১৫৪, অ্যান্ডারসন ৮১, ব্যালান্স ৭১, ভুবনেশ্বর ৫-৮২), ভারত- দ্বিতীয় ইনিংস- ৩৯১-৯ (বিনি ৭৮, মুরলী ৫২, পূজারা ৫৫, ভুবনেশ্বর ৬৩ অপরাজিত, মইন আলি ৩-১০৫)।