প্রশ্ন: দেশের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন আগেই। সাফেও সবার উপরে। ভাইচুং ভুটিয়ার কোনও রেকর্ডই কি অক্ষত রাখবেন না?
সুনীল: আমি ও ভাবে ব্যাপারটা দেখি না। বিশ্বাস করুন, খেলতে নামার আগে রেকর্ড নিয়ে ভাবি না। কাকে টপকাব, এটা মাথায় না রেখে দলকে গোল করে জেতানোটা মাথায় রাখি। আমি গোল করলাম কিন্তু দল জিতল না, তাতে কী লাভ? পঞ্চাশ নম্বর গোল যে দিন করি, তার আগে খেয়ালই ছিল না দেশের জার্সিতে ওটা গোলের হাফসেঞ্চুরি হবে।
প্র: কিন্তু ৫৩ গোল করে ফেলাটা তো চাট্টিখানি কথা নয়। তা-ও এত কম (৯৫) ম্যাচে। ভাইচুংয়ের চেয়ে অনেক কম ম্যাচ খেলে। এটা তো এ দেশের ফুটবলে কখনও হয়নি।
সুনীল: গোল করাই তো আমাদের কাজ। করছি। আরও করার চেষ্টা করব। আর একটা কথা বলুন। গোল আমি করছি, কিন্তু পাসগুলো কারা দিচ্ছে? গোলের কৃতিত্ব আমার একার নয়। সবার। আমরা যে সাফ কাপ পেলাম, সেটা পুরো টিমের জয়। দলগত খেলায় ব্যক্তির কোনও জায়গা নেই। আমি আদ্যন্ত টিম ম্যান।
প্র: আনন্দবাজারে কয়েক মাস আগে দেশের সেরা তিন কোচের র্যাঙ্কিংয়ে আপনি ভাইচুংয়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। রবিবার গোল করে দেশকে সাফ চ্যাম্পিয়ন করার পর তো সবাই বলছে আপনিই সেরা। উপভোগ করছেন ব্যাপারটা?
সুনীল: কেউ সেটা বলতেই পারে। আমি কিছু বলব না। ভাইচুং ভারতের অন্যতম সফল ফুটবলার, অধিনায়ক। আমার সঙ্গে ওর সম্পর্কও খুব ভাল। উপভোগ করা দূরে থাক, এ সব আলোচনা না করলেই ভাল হয়। ফুটবলে এক-এক জন এক-একটা সময়ের সেরা হয়। ও ভাবে পার্থক্য হয় না। আর আমি তো এখনও খেলছি।
প্র: আইএম বিজয়ন দেশের হয়ে তিনটে টুর্নামেন্টে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন। জেজের সঙ্গে যুগ্ম সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে আপনি এ বার সেটা ভেঙে দিলেন, জানেন?
সুনীল: তাই নাকি! জানতাম না। আসলে আমি রেকর্ড নিয়ে কখনও ভাবি না। মাথায় নিয়েও নামি না।
প্র: প্রাক-বিশ্বকাপে বিশ্রী খেলে বিদায় নিয়েছে ভারত। সাফ জিতে কি তাতে একটু মলম পড়ল?
সুনীল: এক একটা টুর্নামেন্টে এক একটা লক্ষ্য থাকে। কোনও টুর্নামেন্ট জয় কোনও টুর্নামেন্টে হারের মলম হতে পারে না। আমাদের টিমে প্রচুর তরুণ এসেছে। মিলমিশ হতে একটু সময় তো লাগবেই। কোচের সঙ্গে তাদেরও সময় দিতে হবে। ওমান, ইরান, গুয়ামের কাছে বাইরে হেরেছি। দেশে প্রিলিমিনারিতে গুয়ামের বিরুদ্ধে জেতার পর কিন্তু সাফে পরপর চারটে ম্যাচ জিতেছি।
প্র: আপনাকে সব সময়ই দেখেছি কোচেদের সঙ্গে সখ্য রেখে চলতে। তা সে ক্লাব হোক বা দেশ। রিজার্ভ বেঞ্চে বসিয়ে রাখলে বা অধিনায়কত্ব কেড়ে নিলেও মনে যাই থাক মুখে সব সময় সেলোটেপ।
সুনীল: আমার বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। কার্গিল যুদ্ধে গিয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই তাই শৃঙ্খলাটা শিখেছি। সেনাবাহিনীতে মেজর বা কর্নেলদের কথা শোনে বাহিনী। এখানেও তাই। কোচেদের কথা শুনতে হবে। তাঁদের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। না হলে টিম জিতবে কী করে? তা ছাড়া স্টিভন কতটুকু সময় পেয়েছেন। ওঁকে সময় দিতে হবে।
প্র: এ এফ সি চ্যালে়ঞ্জার্স, তিন বার নেহরু কাপ, দু’বার সাফ কাপ— দেশের হয়ে এত কিছু জিতেছেন। কোনটাকে সেরা বাছবেন?
সুনীল: এ বারেরটা। কারণ সবাই ভারতকে বাতিলের তালিকায় ফেলে দিয়েছিল। তার উপর টিমের সত্তর শতাংশই নতুন ছেলে। আফগানদের বিরুদ্ধে তো আমাদের সবাই উড়িয়ে দিচ্ছিল। কেউ ভাবেনি আমরা চ্যাম্পিয়ন হব। গত বার ট্রফিটা হাতছাড়া হয়েছিল ওদের কাছে হেরে। এর পর তো সাফে আফগানিস্তান আর খেলবে না। ওদের হারানোর এটাই শেষ সুযোগ ছিল। ম্যাচের আগে ড্রেসিংরুমে সবাইকে বলেছিলাম, ‘আফগানদের হারানোর শেষ সুযোগ এটাই। যে করেই হোক ওদের হারাতে হবে।’ একশো পার্সেন্ট দিয়েছে সবাই। এটা তরুণ ব্রিগেডের জয় বলতে পারেন।
প্র: সাফের পর তা হলে ভারতীয় ফুটবলের নতুন প্রজন্ম উঠে এল বলছেন? গত বারের তো মাত্র তিন জন এ বার প্রথম এগারোয় ছিলেন।
সুনীল: তা তো হলই। (হেসে) এ বার টিম বাছতে কিন্তু কোচকে বেশ বিপদে পড়তে হবে।
প্র: জেজে, হোলিচরণ, প্রীতম, বিকাশ— সবাই নতুন। এঁদের মধ্যে সেরা কাকে বাছবেন?
সুনীল: সবাই সেরা। আমি টিম ম্যান। ক্যাপ্টেন। সেনাবাহিনীতে সবাই গুরুত্বপূর্ণ।
প্র: এর পর লক্ষ্য কী?
সুনীল: কেন, আই লিগ! আজই বেঙ্গালুরু যাচ্ছি। ওখানেও চ্যাম্পিয়ন হওয়াই লক্ষ্য। গোল করতে হবে। নতুন যুদ্ধ। লক্ষ্য কিন্তু এক।
প্র: দেশের জার্সিতে একের পর এক হার্ডল টপকাচ্ছেন। সামনে নতুন মাইলস্টোন কী?
সুনীল: যে টুনার্মেন্ট সামনে আসে, সেটাই নতুন মাইলস্টোন। আমি বেশি দূর ভাবতেও পারি না। পরের ম্যাচ, পরের টুর্নামেন্ট পর্যন্ত ভাবি। আই লিগের মধ্যেই আবার প্রাক বিশ্বকাপ ম্যাচ আছে।
প্র: আপনার হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইলে কোনও ছবি নেই। সাফ কাপ হাতে সুনীলের ছবি আপাতত ওখানে জায়গা পাবে বলছেন?
সুনীল: কাল থেকে যা চলছে! আর কেউ প্রত্যাশা করেনি বলেই এই ট্রফিটা জিতে সবাই বেশি তৃপ্তি পেয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপের ব্যাপারটা এখনও ঠিক করিনি। তবে দিলে, পুরো টিম নিয়ে সুনীলের ছবি থাকবে ওখানে।