ত্রয়ী: বিশ্বকাপ খেলে শুক্রবার বাড়ি ফিরল বাংলার তিন ফুটবলার (বাঁদিক থেকে) অভিজিৎ সরকার, জিতেন্দ্র সিংহ ও রহিম আলি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
কলকাতা বিমানবন্দরের বাইরে শুক্রবার সন্ধে ছ’টা থেকেই ফুলের মালা, রসগোল্লা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন রফিক আলি ও সীমা বেগম। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলে কলকাতায় ফিরছে রহিম আলি, অভিজিৎ সরকার ও জীতেন্দ্র সিংহ। তাদের বরণ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন রহিমের বাবা ও মা।
রাত সোয়া আটটা নাগাদ ট্রলি ঠেলে বেরিয়ে এলেন বাংলার তিন বিশ্বকাপার। ছেলেকে দেখে আর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না সীমা বেগম। রহিমের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে শুরু করে দিলেন তিনি। তার কিছুক্ষণ আগেই হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘‘ছোটবেলায় প্রচণ্ড দুষ্টু ছিল রহিম। লেখাপড়া একদম করতে চাইত না। সারাক্ষণই ফুটবল খেলত। দুষ্টুমির জন্য প্রচুর মার খেয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে তখন ও বলত দেখবে, আমি এক দিন বিখ্যাত হব। রহিম কথা রেখেছে। ওর জন্য আমরা সকলে গর্বিত।’’
মাকে সামালানোর ফাঁকেই রহিম বলছিল, ‘‘মাতোস স্যার বলেছেন, আমরা যাত্রা সবে শুরু করেছি, এখনও অনেক দূর যেতে হবে। তাই উচ্ছ্বাসে ভেসে গেলে চলবে না।’’ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? রহিমের কথায়, ‘‘সিনিয়র দলের হয়ে খেলাই একমাত্র স্বপ্ন। তার জন্য পরিশ্রম করতেও আপত্তি নেই।’’
আরও পড়ুন: ভেটকির ভেল্কিতে কাত স্যাঞ্চোরা
বিশ্বকাপার ত্রয়ীকে দেখার জন্য এ দিন বিমানবন্দরে সাধারণ মানুষের উৎসাহের শেষ ছিল না। রীতিমতো সেলফির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল তাঁদের মধ্যে। নয়াদিল্লি থেকে কলকাতা ফেরার পথে উড়ানেও একই অভিজ্ঞতা হয় জীতেন্দ্র-দের। বলছিল, ‘‘বিমানে আমাদের প্রথমে কেউ চিনতে পারেননি। এক মাত্র জীতেন্দ্র জাতীয় দলের ট্র্যাকসুটের আপার পরে ছিল বলে ওকে অনেকেই চিনতে পেরেছিল। পরে অবশ্য সকলেই আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন ভাল খেলার জন্য। অটোগ্রাফ নিয়েছেন। সেলফি তুলেছেন।’’
তাদের ঘরে ফেরা নিয়ে উন্মাদনা তুঙ্গে। অথচ আশ্চর্যরকম ভাবে উচ্ছ্বাসহীন তিন তারকা। জীতেন্দ্রর কথায়, ‘‘ঘানার বিরুদ্ধে হারের যন্ত্রণায় সারা রাত আমি ঘুমোতে পারিনি। ভবিষ্যতে আর কখনও বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাব কি না জানি না। তাই চেয়েছিলাম, শেষ ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখতে। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।’’
অভিজিতের হতাশার প্রধান কারণ সুযোগ পেয়েও গোল করতে না পারা। বলছিল, ‘‘কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে গোল নষ্ট করার আক্ষেপ কখনও ভুলত পারব না। গোল করতে পারলে জ্যাকসন সিংহ থোউনাওজামের আগে আমিই হতাম বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম গোলদাতা।’’
ব্যান্ডেলের ভ্যান-চালক বাবার সন্তানের স্বপ্ন এখন বড় ক্লাবের হয়ে খেলা। পরিবারের আর্থিক সংকট দূর করা। বলল, ‘‘প্রচুর কষ্ট করে আমাকে বড় করেছেন বাবা ও মা। অর্থের অভাবে বুটও কিনে দিতে পারেননি বাবা। তখন কোচ পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। পরিবারের আর্থিক সংকট দূর করাই আমার প্রধান লক্ষ্য।’’ সেই সঙ্গে অভিজিতের আশা সরকার তার পাশে দাঁড়াবে। কলকাতায় পৌঁছেই ভারতীয় দলের স্ট্রাইকার বলল, ‘‘মেঘালয় ও মণিপুর সরকার তাদের রাজ্যর ফুটবলারদের পাঁচ লক্ষ টাকা করে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরাও বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে খেলেছি। তাই সরকারের উচিত আমাদের পাশে দাঁড়ানো। আমাদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া।’’
অভিজিৎ ও জীতেন্দ্রকে নিতে অবশ্য এ দিন বিমানবন্দরের পরিবারের কেউ ছিলেন না। অভিজিতের মা অলকা অসুস্থ। তাই পাড়ার ক্লাবের কোচ এসেছিলেন। আর জীতেন্দ্রর মা এই মুহূর্তে নয়াদিল্লিতে। ভারতীয় দলের ডিফেন্ডারের বন্ধুরা অবশ্য এসেছিল বিমানবন্দরে। তিন ফুটবলারই আপাতত দিন পাঁচেক বিশ্রাম নেবে। সৌদি আরব সফরের জন্য যোগ দেবে জাতীয় দলের শিবিরে।