মোহালি টেস্টের এমন পরিণতি নিয়ে একদম খুশি নন তিনি। মাত্র তিন দিনে শেষ হয়ে গেলে সেটা আবার টেস্ট না কি?
কয়েক দিন আগেই যাকে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার থেকেও বড় ক্রিকেট যুদ্ধের তকমা দিয়েছিলেন রবি শাস্ত্রী, সেই সিরিজের প্রথম টেস্টই যে ভাবে জিতল ভারত, তাকে আর যাই হোক, ধুন্ধুমার যুদ্ধ বলা চলে না। না হলে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হাসিম আমলা বলে দেন, তাঁরা ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে ভাল ব্যাটিংই করতে পারেননি?
বিষেন সিংহ বেদীও টেস্ট ম্যাচের এমন পরিণতিতে তৃপ্ত নন। বলছেন, ‘‘পাঁচ দিনে টেস্ট শেষ হবে কেন? তা হলে আর টেস্ট ম্যাচ কী হল?’’ কিন্তু এমন ঘূর্ণি উইকেট করলে তো টেস্ট এ ভাবে শেষ হবেই। কিংবদন্তি ভারতীয় স্পিনার তাঁর স্বভাবগত চাঁছাছোলা ভাষায় বলছেন, ‘‘সে জন্য তো আইসিসি আছে, বিসিসিআই আছে। তারা কী করছে? টেস্ট ক্রিকেটকে আকর্ষণীয় করে তুলতে গিয়ে যদি তার বৈশিষ্টগুলোকে এক এক করে খুন করে দেওয়া হয়, তা হলে আর তাকে বাঁচানো হল কী করে? ও সব জায়গায় তো অনেক বড় বড় লোকেরা বসে আছেন। তাঁরাই ঠিক করুন, এ বার কী করবেন।’’
ক্রিকেট কর্তারা কী করবেন, সে তো পরের কথা। কিন্তু ভারতীয় স্পিনারদের এই রমরমা ফিরে আসায় ব্যাপক খুশি বেদী এবং তাঁর সময়েরই আর এক কিংবদন্তি এরাপল্লি প্রসন্ন। এ যেন সত্তরের দশকের স্পিন কিংবদন্তি-ত্রয়ীর ফিরে আসার মতো ঘটনা।
মোহালিতে যেমন হল, সারা ম্যাচে ১৯ উইকেট নিলেন ভারতের স্পিনাররা, এর আগে আরও পাঁচবার এমন হয়েছে। এমনকী কুড়ি উইকেটও পেয়েছেন ভারতের স্পিনাররা, তাও হয়েছে তিনবার। এর মধ্যে অনেকগুলি ম্যাচেই ভারতীয় স্পিন কিংবদন্তি-ত্রয়ীর উপস্থিতি জ্বলজ্বল করেছে। তাঁদেরই একজন এরাপল্লি প্রসন্ন বলছিলেন, ‘‘হোম সিরিজে ভারতের স্পিনাররা রাজত্ব করবে না তো কে করবে? বরাবর তা-ই হয়ে আসছে। কিন্তু মাঝে স্পিনারদের এমন আকাল দেখা দিয়েছিল যে, ডালমিয়া সাহেব স্পিন-উইং গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখন যে ভারতে ফের কোয়ালিটি স্পিনার উঠে আসছে, এটাই অনেক।’’
কিন্তু স্পিনারদের দাপটে যে টেস্ট ক্রিকেটের মৃত্যুঘ্টা বাজতে শুরু করেছে, তার কী হবে? প্রসন্ন বলছেন, ‘‘দেখুন, সব দোষ উইকেটকে দেবেন না বা স্পিনারদের দেবেন না। যারা ভারত সফরে আসছে, তাদেরও তো স্পিন খেলার বিদ্যেটা রপ্ত করে তবেই এখানে আসতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা এই হোমওয়ার্কটা করে আসেনি বলেই বোধহয় এই বিপত্তি।’’
স্পিনের বিরুদ্ধে ব্যাটিং করাটা যে তাঁদের দুর্বলতা, তা কার্যত মেনেই নিয়েছেন হাসিম আমলা। শনিবার টেস্ট হারার পরই তিনি বলেন, ‘‘ব্যাট করার সময় (শট মারা নিয়ে) যে সিদ্ধান্তগুলো আমরা নিয়েছি, সে গুলো মোটেই ঠিক হয়নি। সে জন্যই আমাদের এত ভুগতে হয়েছে। এমন নয় যে, বল অত্যন্ত বেশি ঘুরেছে বলে আউট হয়েছি। আমরা অনেকেই আউট হয়েছি বল কম ঘোরার জন্যও। এগুলো আমাদের ঠিক করে নিতে হবে।’’
দক্ষিণ আফ্রিকা শিবির থেকে যেটুকু খবর পাওয়া গেল, তাতে স্পষ্ট, ভারতীয় স্পিনারদের মোকাবিলা করার পরিকল্পনা চলছে জোর কদমে। বেঙ্গালুরুতেও ঘূর্ণি উইকেট হবে ধরে নিয়েই সেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়ে গেল সোমবার থেকেই। ভারতীয় ক্রিকেটাররা দিওয়ালি মানাতে যে যাঁর বাড়ি চলে গেলেও আমলারা রয়ে গেলেন মোহালিতেই।
মাঠে না নামলেও অবশ্য নতুন পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। সোমবার অপশনাল প্র্যাকটিস ডাকা হয় মোহালির নেটে। মঙ্গলবার বেঙ্গালুরু পৌঁছে তার পর হাতে কলমে কাজ শুরু হবে বলে জানিয়ে দিলেন দলের এক সাপোর্ট স্টাফ। তবে জেপি দুমিনিকে বেঙ্গালুরুতেও পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয় প্রোটিয়া শিবির। তাঁকে তৈরি করে তোলার অবশ্য মরিয়া চেষ্টা চলছে বলে জানা গেল। এমনকী ডেল স্টেইন পরের টেস্টে খেলতে পারবেন কি না, তা নিয়েও নাকি যথেষ্ট অনিশ্চয়তা রয়েছে।
চিন্নাস্বামীর বাইশ গজেও যে ঘূর্ণি থাকছে, তার ইঙ্গিত দিয়ে এ দিন স্থানীয় কিউরেটর কে শ্রীরাম বলে দিলেন, ‘‘এই ব্যাপারটা যদিও আমাদের আঞ্চলিক কিউরেটর বিশ্বনাথ আরও ভাল বলতে পারবেন, তবে আমি সে রকমই শুনেছি।’’ চেন্নাই থেকে আসা বিশ্বনাথকে পাওয়া না গেলেও কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থার এক কর্তা জানিয়ে দিলেন, ‘‘মুম্বইয়ের ঘটনার পর আমাদের কিউরেটরও আর ঝুঁকি নেবেন না। মোহালির মতো তিন দিনে ম্যাচ শেষ হবে কি না জানি না, তবে আশা করা যায় এই উইকেটে আমাদের স্পিনাররা সাহায্য পাবেন।’’
প্রসন্ন, কুম্বলেদের শহরে যে প্রোটিয়াদের কবর খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েই গিয়েছে, এ তারই ইঙ্গিত। কিন্তু এর মধ্যে আমলারা যদি অশ্বিন-জাডেজাদের অ্যান্টিডোট বার করে ফেলেন, তা হলে অন্যরকম একটা লড়াই দেখা যেতে পারে চিন্নাস্বামীতে। যাকে সেই অর্থে যুদ্ধ বলা গেলেও যেতে পারে।