সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়

‘গোল্ডেন আওয়ার’-এ নিজে হাসপাতালে আসায় আপাতত স্থিতিশীল সৌরভ

এই ধরনের অসুস্থতায় ‘গোল্ডেন আওয়ার’ গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘গোল্ডেন আওয়ার’ হল অসুস্থতার পরের ছ’ঘণ্টা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:২৩
Share:

সৌরভ নিজেই দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ফোন করেন। ফাইল ছবি

হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ‘গোল্ডেন আওয়ারে’ হাসপাতালে ভর্তি করানোর ফলেই আপাতত বিপন্মুক্ত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সৌরভের পরিবার এবং হাসপাতাল সূত্রে তেমনই বলা হচ্ছে। শনিবার সকালে বাড়ির জিমে ট্রেডমিলে হাঁটার সময় বুকে ব্যথা হওয়ায় আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন সৌরভ। তিনি নিজেই দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ফোন করেন। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে চলে আসতে বলা হয়। সৌরভ নিজেই হাসপাতালে চলে আসেন। দেখা যায়, তাঁর হৃদ্‌পিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী তিনটি ধমনীতে ‘ব্লকেজ’ রয়েছে। তার মধ্যে একটিতে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে ‘স্টেন্ট’ বসানো হয়েছে। বাকি দু’টিতেও ‘স্টেন্ট’ বসানো হবে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। সেগুলি সোমবার বসানো হতে পারে। আপাতত সৌরভ স্থিতিশীল। অসমর্থিত সূত্রের খবর, সৌরভকে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য মুম্বই নিয়ে যাওয়া হতে পারে। তবে সে সবই নির্ভর করছে তাঁর শারীরিক অবস্থার উপর। এখন আরও অন্তত চার-পাঁচদিন তাঁকে হাসপাতেলই থাকতে হবে।

Advertisement

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের অসুস্থতায় ‘গোল্ডেন আওয়ার’ গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘গোল্ডেন আওয়ার’ হল অসুস্থতার পরের ছ’ঘণ্টা। মৃদু হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হলে অনেকেই তা বুঝতে পারেন না। অনেক সময়ে মনে হয়, গ্যাসের সমস্যা হয়েছে। ফলে অনেকেই অ্যান্টিসড বা ওই ধরনের ওষুধ খেয়ে নেন। আসল অসুস্থার কোনও চিকিৎসা হয় না। ছ’ঘণ্টা ওই অবস্থায় থাকলে কিন্তু বিপদ অবশ্যম্ভাবী। তবে ওই অসুস্থতার ছ’ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু হলে বড়সড় বিপদ এড়ানো যায়। সৌরভের ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে। সৌরভ নিজেই হাসপাতালে ফোন করেছিলেন বলে বড় বিপদ এড়ানো গিয়েছে। ফলে সৌরভ আপাতত স্থিতিশীল। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সৌরভ ভাল আছেন। স্থিতিশীল। রক্তচাপ এবং নাড়ির গতি স্বাভাবিক আছে। সৌরভের চিকিৎসায় পাঁচজনের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত হয়েছে। বোর্ডের সদস্য আফতাব খান বলেছেন, ‘‘উনি একটা মৃদু হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু উনি নিজেই ফোন করে হাসপাতালে চলে আসেন। তাই বড় বিপদ এড়ানো গিয়েছে।’’

আফতাব আরও বলেন, ‘‘ওঁকে লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া দিয়ে স্টেন্ট বসিয়েছি। উনি সজ্ঞান এবং সচেতন আছেন। আমাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। উনি বেশ কয়েকদিন ধরেই সপ্তর্ষি বসুর চিকিৎসাধীন ছিলেন। অসুস্থতা বোধ করায় উনি সপ্তর্ষিকে ফোন করেন। তার পর সপ্তর্ষির সঙ্গেই উনি হাসপাতালে চলে আসেন। আমরা ওঁকে প্রাথমিক ভাবে বিপন্মুক্ত করেছি।’’ বাইপাস সার্জারির কথা ভাবা হচিছএ কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসকেরা বলেন, ‘‘এখন বাইপাস সার্জারির কথা আমরা ভাবছি না। আমরা স্টেন্ট বসানোটাই উপযুক্ত মনে করেছি। আমরা আপাতত ওঁকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে চাই।’’ চিকিৎসার পর সৌরভ পুরোপুরিই সুস্থ হয়ে যাবেন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘উনি একেবারেই সুস্থ হয়ে যাবেন। আবার চাইলে ক্রিকেটও খেলতে পারবেন।’’

Advertisement

আরও খবর: ৩টি ব্লকেজ আর্টারিতে, সৌরভের অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হল, স্টেন্ট বসছে

আরও খবর: বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্য প্রার্থনা করলেন বিরাট কোহালি

জানা গিয়েছে, সৌরভের পরিবারে ইসকিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। সাধারণত হৃদযন্ত্রে ধমনীর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় রক্ত না পৌঁছলে মানুষ অল্পেতেই হাঁফিয়ে পড়ে। এই অবস্থায় একটু বেশি পরিশ্রম করলে বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে মানুষ। সৌরভের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। অনেক সময়েই ইসকিমিয়া হওয়া সত্ত্বেও মানুষ বুঝতে পারে না। নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে হাসপাতালে ফোন করায় সৌরভ আপাতত স্থিতিশীল বলেই চিকিৎকেরা মনে করছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সৌরভের ‘পিসিআই’ পরীক্ষা হয়েছে। তাঁর তিনটি ধমনী ‘ব্লক’ হয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে একটি ধমনীতে প্রায় ৯০ শতাংশ ব্লকেজ ছিল। সেখান থেকেই সমস্যা বলে চিকিৎসকেরা মনে করছেন। এদিন সৌরভ যখন হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন তাঁর নাড়ির বেগ ছিল মিনিটে ৭০। রক্তচাপ ছিল ১৩০/৮০। শরীরের অন্যান্য পরীক্ষার ফল স্বাভাবিক এসেছে বলেই হাসপাতালের মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়েছে।

সৌরভের অসুস্থার খবরে চমকে উঠেছে গোটা দেশ। হাসপাতালে ভিড় করেছেন তাঁর অনুগামী এবং ভক্তরা। স্ত্রী ডোনা এবং কন্যা সানা সারাক্ষণই তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। সৌরভের দ্রুত আরোগ্য কামনায় টুইট করেছএন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সৌরভের প্রাক্তন সহ ক্রিকেটাররা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সৌরভকে নয়াদিল্লির এমসে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে সৌরভের পরিবার সূত্রের খবর, আপাতত তিনি বিপন্মুক্ত এবং স্থিতিশীল। আগামী সোমবার তাঁর আরও দু’টি ধমনীতে স্টেন্ট বসানো হবে কি না, তা ঠিক করা হবে। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহে এটা অনস্বীকার্য যে, ‘গোল্ডেন আওয়ার’ চিনতে সৌরভের ভুল হয়নি। সম্ভবত তাঁর ক্রিকেটীয় ইনস্টিংক্ট এবং প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ফোন করিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement