নতুন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে অপ্রত্যাশিত উঠে এসেছে অরুণ জেটলির নাম। অবশ্যই যদি জেটলি তাঁর মন্ত্রিত্বের গুরুদায়িত্ব সামলে বোর্ড প্রধান হতে রাজি থাকেন!
জেটলির ঘনিষ্ঠমহলের ধারণা, অর্থ এবং প্রতিরক্ষা দুটো এত গুরুত্বপূর্ণ দফতর সামলে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের দায়িত্ব নিতে তিনি রাজি হবেন না। ভারতীয় বোর্ডের বিরোধী শিবিরের আবার বিশ্বাস, তাঁকে যদি বোঝানো যায় যে চার মাসে মাত্র একটা বৈঠক করলেই চলবে। কাজগুলো অন্যরাই দেখে নেবে। কেবল ভাবমূর্তি উদ্ধারের জন্য তাঁর আসা প্রয়োজন, তা হলে জেটলি রাজি হয়ে যাবেন।
জেটলি শিবির মনে করে, তাতেও তিনি হবেন না। অতীতে যা-ই ঘটে থাক, অতীতে তাঁর ক্রিকেট-উচ্চাকাঙ্ক্ষা যা-ই থেকে থাক, এখন ক্রিকেটটা জেটলির মানচিত্রেই নেই। তা ছাড়া এই পরিস্থিতিতে তাঁর সিদ্ধান্তও তো একক হতে পারে না। তাঁকে মন্ত্রিসভার প্রধানের অনুমতি নিতে হবে। নরেন্দ্র মোদী মাত্র একশো এগারো দিনে পড়া তাঁর মন্ত্রিসভার কাজ যেখানে আরও দ্রুত গতিতে করতে চাইছেন, সতীর্থের ক্রিকেট জাতীয় উটকো বিড়ম্বনা তিনি বরদাস্ত করবেন কেন?
এখানেও বিরোধীদের যুক্তি রয়েছে। দরকার হলে নরেন্দ্র মোদীর কাছে গিয়ে আবেদন করতে হবে। বলতে হবে, অনুগ্রহ করে জেটলিকে আপনি ক্রিকেট বাঁচাতে ছেড়ে দিন। শনিবার রাতে নাগপুর থেকে প্রাক্তন বোর্ড প্রধান শশাঙ্ক মনোহর এবিপি-কে বললেন, “দরকার হলে মিস্টার পওয়ার আর মিস্টার ডালমিয়া দু’জনে মিলে যান না প্রধানমন্ত্রীর কাছে। ক্রিকেটের এই মহাসঙ্কটে জেটলির নেতৃত্ব বোর্ডের প্রয়োজন।”
অরুণ জেটলি নিজে বলে থাকেন, বোর্ডের মোট ৩০ ভোটের মধ্যে তাঁর নিয়ন্ত্রণে ১১ ভোট। বিরোধীরা মনে করেন ১১ নয়, সংখ্যাটা হবে ৭। সাত ভোট জেটলির অধীনে।
কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা যা-ই হোক, একটা ব্যাপারে দ্বিমত নেই! জেটলি যে দিকে বোর্ডে, জিত সে দিকে। শ্রীনি সাম্রাজ্যের আসল শক্তি তিনি। তাঁর বরাভয় এবং চাণক্য-জাতীয় নির্দেশনা আছে বলেই শ্রীনি মৌর্য সাম্রাজ্য এত দৃঢ়চেতা ভাবে চালাতে পারছেন।
শ্রীনি-বিরোধীদের এ বার নতুন ছক হল শ্রীনির যেখান থেকে ক্ষমতা আর বুদ্ধি আসে, সেটাকেই এ বার ওর বিরুদ্ধে লাগিয়ে দাও। স্বয়ং চাণক্যকেই বসিয়ে দাও সিংহাসনে। যাতে চন্দ্রগুপ্ত সম্পূর্ণ দিশেহারা হয়ে যায়।
বিরোধীদের পক্ষে রাজীব শুক্ল ইতিমধ্যে দেখা করেছেন জেটলির সঙ্গে। প্রয়োজনে পওয়ার এবং ডালমিয়া কিছু দিন আগেও পরস্পরের উগ্র বিরোধীরা মিলে যাবেন তাঁর কাছে। তাতেও যদি জেটলি রাজি না হন? যদি মোদী সম্মতি না দেন? তা হলে?
তা হলে প্ল্যান বি হল, জেটলিকেই বলা হবে আপনি নিজেই প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য কাউকে বেছে দিন। বিরোধীদের ধারণা, ততক্ষণে এদের তাঁকে সম্মান দেওয়ার আন্তরিকতা স্পর্শ করবে কেন্দ্রীয় হেভিওয়েট মন্ত্রীকে। এবং তখন তিনি পরিবর্ত হিসেবে বিরোধীদেরই কারও নাম বলবেন। শ্রীনিকে বাছবেন না। একই সঙ্গে স্থির হয়েছে, বিরোধী শিবিরে জেটলি যাঁকে সবচেয়ে অপছন্দ করেন সেই ললিত মোদীকে বিসর্জন দেওয়া হবে জেটলিকে খুশি করার স্বার্থে। এবিপি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মনোহর পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ললিত অন্তত তাঁদের দলে নেই।
এ বার দেখার, শ্রীনি সাম্রাজ্য পতনের এই অভিনব স্ট্র্যাটেজিতে চাণক্যকে নিজের দলে টেনে নেওয়া যায় কি না?