Habibur Bashar on Bangladesh Cricket

‘বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে একটা উত্থানের স্বপ্ন এখন দেখাই যেতে পারে’

তাঁর সময়েই বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বের দরবারে নিজেদের জাত চিনিয়েছিল। তাঁর হাত ধরেই শুরু উত্থানের। অধিনায়কের ব্যান্ড পরে জাতীয় দলকে পরিচালনা করেছেন বহু দিন। আর এখন তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম নির্বাচক। তাঁর নির্বাচিত দলই ইংল্যান্ডকে টেস্ট ম্যাচে হারিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে। গর্বিত হাবিবুল বাশার। তবুও কোথাও যেন উচ্ছ্বাস চেপে রেখে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের অঙ্গীকার নিয়ে চলেছেন এখনও। আসলে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে বাংলাদেশ যে এখনও শিশু। সবে হাঁটতে শিখছে। তাই কিছুটা সাবধানী হাবিবুল। তবে স্বস্তি রয়েছে কোথাও একটা। ঝুঁকি নিয়েছিলেন যে দল নির্বাচনে। সেই ঝুঁকিই ফুল ফুটিয়েছে দেশের ক্রিকেট বাগানে। এ বার সেই বাগানকেই লালন করার পালা। যেটা আরও কঠিন। অনেকটা পথ চলতে হবে এখনও। ঢাকা থেকে ফোনে হাবিবুল বাশার সে কথাই জানালেন সুচরিতা সেন চৌধুরীকে এখন তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম নির্বাচক। তাঁর নির্বাচিত দলই ইংল্যান্ডকে টেস্ট ম্যাচে হারিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে। গর্বিত হাবিবুল বাশার। ঢাকা থেকে ফোনে হাবিবুল বাশার সে কথাই জানালেন সুচরিতা সেন চৌধুরীকে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ১২:৫৯
Share:

বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম নির্বাচক ও প্রাক্তন অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। ছবি: সংগৃহীত।

প্র: প্রথমেই অনেক শুভেচ্ছা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ের জন্য...

Advertisement

হাবিবুল: ধন্যবাদ। সত্যিই আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়়ানোর জন্য এই জয়টা দরকার ছিল। আমাদের ছেলেরা সেটা পেরেছে। পুরো কৃতিত্বটাই ওদের।

প্র: টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের এই ১৬ বছরের জার্নিটা ঠিক কেমন ছিল?

Advertisement

হাবিবুল: কঠিন তো বটেই। যখন আমরা টেস্ট খেলতে শুরু করি তখন অন্য দেশগুলো আমাদের থেকে ১০০ বছর এগিয়ে ছিল। অনেকটা ছোট বাচ্চাদের হাঁটা শেখার মতো। তখন হামাগুড়়ি দিচ্ছিলাম। তার পর আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়়ানোর চেষ্টা করেছি। হাঁটার চেষ্টা করতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছি। এখন বলতে পারেন হাঁটতে শিখেছি। এখনও অনেকটা বাকি।

প্র: আপনার অধিনায়কত্বেই তো বিশ্বকাপের আসরে ভারতকে হারানো?

হাবিবুল: আপনারা এটা ভুলতে পারেন না তাই না? বাংলাদেশ আসলে খুব প্যাসনেট ক্রিকেট নিয়ে। ভারতেরই মতো। শুরুটা তো কাউকে না কাউকে করতেই হয়। এই আবেগ থাকলে একদিন ঠিক উন্নতি হবে। শুরুটা সব সময়ই কঠিন হয়। সেই লড়়াইটা চালিয়ে যেতে হয়।

প্র: কিন্তু দীর্ঘদিন টেস্ট না খেলাটা দলের উপর তো প্রভাব ফেলছে?

হাবিবুল: ফেলছে তো। টেস্টের সঙ্গে কোনও কিছুর তুলনা হয় না। আমরা অনেক ওয়ান ডে, টি২০ খেলি। কিন্তু টেস্ট না খেললে দেশের ক্রিকেটের উন্নতি হবে না। কারণ বাকি সব দেশ টেস্ট খেলে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে আমরা পিছিয়ে পরছি। ২০০৭-০৮ থেকে অনেক বেশি খেলছি। কিন্তু আরও বেশি খেলতে হবে।

প্র: এবারই তো অনেকদিন পর বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট খেলল?

হাবিবুল: হ্যাঁ, ১৫ মাস পর আমরা টেস্ট খেললাম। এখনই আমাদের ভাল করার সময়। আরও বেশি খেলতে পারলে ভাল হত। ছেলেরা আত্মবিশ্বাস পেত।

বাংলাদেশের উত্থান

প্র: ইংল্যান্ড তা হলে আপনাদের সেই সুযোগটা দিল বলুন?

হাবিবুল: আমরা সত্যি ইংল্যান্ডের কাছে কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট ভালবাসে। না এলে পুরো দেশের আবেগে আঘাত লাগত। শুধু তাই নয়, ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলে আমরা নিজেদের সামর্থটা জানতে পারলাম, বিশ্বকে জানাতেও পারলাম।

প্র: ইংল্যান্ড আসায় আরও একটা বিষয়ও কিন্তু প্রমাণ হল, না হলে তো কেউ ওই সময় খেলতেই আসতে চাইছিল না?

হাবিবুল: বুঝতে পেরেছি আপনি কী বলতে চাইছেন। একদম ঠিক। সবাই যেটা ভয় পাচ্ছিল সেটা নয়। এখানে সবাই নিরাপদ। নিশ্চিন্তে খেলতে আসতে পারে যে কোনও দেশ ইংল্যান্ড আসায় সেটা বিশ্ব ক্রিকেটের কাছে প্রমাণ করা গেল।

প্র: একটু দলের কথায় ফেরা যাক। ১৫ মাস টেস্ট না খেলা একটা দেশের দল নির্বাচন করাটাও তো কঠিন কাজ?

হাবিবুল: হয়তো কঠিন হত। কিন্তু আমাদের একটা সুবিধে ছিল। যে দলটা আমাদের ওয়ান ডে খেলে সেই দলটাই টেস্ট খেলে। যে কারণে অতটাও কঠিন হয়নি। ওয়ান ডে টিমটা তো তৈরি ছিল। এই দলে একমাত্র মমিনুল হক শুধু টেস্ট খেলে।

প্র: এতদিন টেস্ট না খেলা একটা দলকে টেস্ট খেলার জন্য উৎসাহিত করাও তো বেশ কঠিন?

হাবিবুল: সত্যি কঠিন। আর সমস্যা তাদের নিয়ে যারা শুধুই টেস্ট খেলে। না খেলতে খেলতে উৎসাহটাই হারিয়ে যায়। কিন্তু ওই যে বললাম আমাদের ভাল দিক একটাই টিম সব খেলে। মমিনুলের মতো প্লেয়ার কমই আছে। যে কারণে পুরো দলটাই খেলার মধ্যে ছিল।

প্র: কিন্তু মেহেদি হাসান মিরাজের মতো অনভিজ্ঞ একটা বাচ্চা ছেলেকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নেওয়ার সাহসটা দেখালেন কী ভাবে?

হাবিবুল: সত্যি এটা একটা বড়় ঝুঁকি ছিল। নিয়েছিলাম সেটা। আসলে আমাদের অফ স্পিনার দরকার ছিল। ইংল্যান্ডে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ছিল। হাতে যা বিকল্প ছিল তাদের মধ্যে মিরাজকেই মনে হয়েছিল ভাল। ওর উপরই বাজিটা ধরেছিলাম।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের তিন স্তম্ভ সাকিব, তামিম, মুশফিকুর।

প্র: বাজিটা কিন্তু আপনাদের জিতিয়ে দিল মিরাজ। এতটাও ভেবেছিলেন?

হাবিবুল: যদি বলি জানতাম, তা হলে মিথ্যে বলা হবে। এতটা একদমই ভাবিনি। ১২ উইকেট স্বপ্নের মতো। তবে বিশ্বাস ছিল ওর উপর। ওকে দেখেছিলাম অনূর্ধ্ব-১৯এ। জানতাম লড়়ে যাবে। ঝুঁকি যেটা ছিল সেটা ওর অনভিজ্ঞতা আর বয়স। সেটাকে ও ছাপিয়ে গিয়েছে। মু্স্তাফিজুর যেমন শুরু করেছিল।

প্র: মিরাজকে নিয়ে তা হলে স্বপ্ন দেখা যায় বলছেন? কিন্তু এই সাফল্য প্রত্যাশার চাপটাও তো সবাই ধরে রাখতে পারে না।

হাবিবুল: মিরাজ খুব লড়াই করে উঠে এসেছে। এই বয়সে যখন সবাই মজা করে বেড়়ায় তখন ওর উপর কিন্তু ওর পরিবার নির্ভরশীল। তাই ও বাস্তবটা বোঝে। তাই হয়তো সাফল্য, মিডিয়া, প্রচার এগুলো ওর মাথাটা ঘুরিয়ে দিতে পারবে না। আমরাও খেয়াল রাখি। কাউন্সিলিং হয়। তাই বলব ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাই যায়।

প্র: আগামী মরসুমে হয়তো আইপিএল-এ খেলার ডাক আসবে মিরাজের?

হাবিবুল: ভাল তো। আইপিএল খেলার পর সাকিব অনেক বেশি উন্নতি করেছে। মুস্তাফিজুর খেলেছে এ বার। দেশের বাইরে যত খেলবে তত অভিজ্ঞতা বারবে। আইপিএল, কাউন্টিতে যত প্লেয়াররা ডাক পাবে তত বাংলাদেশের ক্রিকেট সমৃদ্ধ হবে।

প্র: এর পর তো মনে হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তৈরি। স্বস্তিতে তো অনেকটাই?

হাবিবুল: (হেসে)... পাহাড়়ের মাথায় ওঠা কঠিন। নেমে আসা ঠিক ততটাই সহজ। এই নেমে আসাটাই আটকাতে হবে। যেটা সব থেকে কঠিন কাজ। নিজেদের সেরাটা ধরে রাখা। ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। তবে, একটা কথা বলতে পারি বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি অনেক বদলে গিয়েছে। এখন সবাই প্রচুর পরিশ্রম করে। নিজেকে উজাড় করে দিতে তৈরি সবাই। এটাই ধরে রাখতে হবে।

প্র: মিরাজ, মু্স্তাফিজুরের মতো বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নিয়েও তা হলে স্বপ্ন দেখা যায় কি বলেন?

হাবিবুল: স্বপ্নটাই তো দেখে এসেছি এতদিন। এখনও দেখি। একটা উত্থানের স্বপ্ন দেখাই যেতে পারে। তবেই না লড়়াইটা দেওয়া যায়। আর সেটাই করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, বাংলাদেশের মানুষ।

আরও খবর

মিরাজের পরিবারের জন্য বাড়ি তৈরির নির্দেশ দিলেন হাসিনা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement