যাবতীয় শ্রদ্ধা নিয়ে বলছি। ভারতীয় ধারাভাষ্যকারের পক্ষে অনেক বেশি মানানসই হবে যদি সে বিদেশি প্লেয়ারদের কথা সব সময় অনর্গল না বলে আমাদের ক্রিকেটারদের কথা একটু বেশি বলে।
ঠিক দু’রাত্তির আগে অমিতাভ বচ্চনের এহেন টুইট এমন হুলুস্থুল ফেলে দিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটমহলে যে তুলনায় বিগ বি-র ইডেনে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া নিয়ে বিতর্ক নস্যি মনে হবে। শুক্রবার চণ্ডীগড়ে টিম ইন্ডিয়ার ছুটির দিনেও দেখা গেল বচ্চনের টুইট নিয়ে আলোচনা চলছে। স্টার স্পোর্টসের ভারতীয় ভাষ্যকারদের মধ্যে কে এর আসল লক্ষ্যবস্তু? কে হতে পারেন?
একে অমিতাভ! তাঁর মন্তব্যের গুরুত্বই অন্য রকম। কিন্তু আরও প্রভাবের কারণ ধোনির টিমের সামগ্রিক দর্শনের সঙ্গে টুইটটা দারুণ যাচ্ছে। তাদের এত দিনের বক্তব্যই তো তাই—ভারতীয় মিডিয়া কোথায় আমাদের সমর্থন করবে তা নয়। অন্য টিমের প্রচারে ব্যস্ত। এ দিন দলের এক সদস্য বললেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়াতে ভাল খেললেও আমরা কোয়ার্টার পেজের বেশি কোনও দিন প্রচার পাই না। ইংল্যান্ডে গেলেও তো তাই। আমাদের প্রেস কখনও আমাদের ব্যাক করেনি। আজ এমন অবস্থা যে মিস্টার বচ্চনেরও তা নজরে পড়ে গেল।’’
অমিতাভের টুইটের পরেই স্বয়ং ধোনি সেই রাত্তিরেই একটা টুইট করেন, নাথিং টু অ্যাড। যার মূল সুর হল, যথেষ্ট বলা হয়েছে। আর কিছু যোগ করার প্রয়োজন দেখছি না।
এ বার জল্পনা শুরু হয়েছে কাকে লক্ষ্য করে সে দিন মুম্বইয়ের ‘জলসা’ থেকে টুইটটা ভেসে এসেছিল? বাংলাদেশ যখন জেতার মুখে, অনেকটা সময় কমেন্ট্রি করছিলেন সুনীল গওস্কর। বাংলাদেশের ভাল খেলার কথা তিনি বারবার বলছিলেনও। তা হলে কি গাওস্কর?
বচ্চনকে কেউ কেউ এমন টুইট করায় তিনি দ্রুত জানিয়ে দেন, না সুনীল নয়। এর পর অনেকেই নিশ্চিত হয়ে যান সঞ্জয় মঞ্জরেকরের কথা বলছেন অমিতাভ। তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সঞ্জয়ের নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। আবার বচ্চন টুইট করেন, না সঞ্জয়ও না।
বাকি থাকেন সহবাগ, লক্ষ্মণ এবং হর্ষ ভোগলে। এর মধ্যে লক্ষ্মণ ওই সময়টায় কমেন্ট্রি করছিলেন না। তিনি খেলা শেষ হওয়ার পর অশ্বিনের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেন। সহবাগ আগাগোড়া ভারতের কথা বলেছেন। টিমকে উজ্জীবিত করার মতো নানান কথা বলেছেন। ক্রিকেটমহল মনে করে বীরুর ধারাভাষ্যের ধরন এমনই টিম ইন্ডিয়া কেন্দ্রিক যে, কোনও মতেই তিনি লক্ষ্যবস্তু হতে পারেন না।
বাকি থাকেন হর্ষ ভোগলে। শুক্রবার মোহালি মাঠে হর্ষ বলছিলেন, ‘‘আমি মিস্টার বচ্চনকে ব্যক্তিগত এসএমএস পাঠিয়ে বলেছি এই ব্যাপারে আপনি কয়েক মিনিট সময় দিলে আমি একটু কথা বলতে চাই। ওঁর কোনও উত্তর পাইনি।’’ হর্ষর বক্তব্য তিনি বা আরও কেউ কেউ সে দিন কমেন্ট্রি করছিলেন ওয়ার্ল্ড ফিডের জন্য, শুধুই ভারতীয় দর্শকের জন্য ধারাভাষ্য নয়। ওয়ার্ল্ড ফিডের চাহিদা অনুযায়ী সেখানে শুধু ভারত কেন্দ্রিক হওয়ার উপায় নেই। ফেসবুকে হর্ষ এই ব্যাখ্যা তুলে দিয়েছেন।
তাতে আবার ক্রিকেটমহলের একাংশের বক্তব্য হর্ষ এত নরম ভাবে ভাষ্যকারদের ডিফেন্ড করলেন কেন? তাঁর অনেক কড়া ভাবে বলা উচিত ছিল, আমার কাজ নিরপেক্ষ ধারাভাষ্য দেওয়া। টিম ইন্ডিয়ার স্বার্থ দেখার জন্য কেউ আমায় চাকরি দেয়নি। হর্ষ বলছিলেন, ‘‘আমি এখনও জানি না মিস্টার বচ্চন কাকে লক্ষ্য করে টুইটটা করেছেন। আমি অনেক কড়া প্রতিক্রিয়া দিতে পারতাম। কিন্তু মিস্টার বচ্চনের প্রতি আমার শ্রদ্ধা এতটাই বেশি যে, আমি ব্যক্তিগত ভাবে এটা মেটাতে চাই। যদি অবশ্য ওঁর কাছ থেকে এসএমএসের উত্তর আসে।’’
ভাষ্যকারদের মধ্যে কারও কারও মনে হচ্ছে আধুনিক সময়ে তাঁদের উপর চাপ সাবেকি সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। প্লেয়ারের জন্য এতটুকু অসম্মানজনক কিছু বললেই সে এসে তর্ক করছে, কেন বললেন? এক ব্যাটসম্যান সম্পর্কে টিভি ভাষ্যে বলা হয়েছিল, যত শট খেলছে সেই অনুপাতে রান করেনি। কারণ বেশির ভাগ শটই তো সোজা ফিল্ডারের কাছে। এতে ওই ব্যাটসম্যান তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেছেন, কেন এই সব বলা হয়েছে?
একজন বলছিলেন, ‘‘ইন্ডিয়া টিম সম্পর্কে বেশি ভাল কথা বললে সমালোচনা হয় ইন্ডিয়ান বোর্ডের পে রোলে আছে তো, তাই বলছে। আবার খারাপ বললে বলবে, দেশকে দেখছে না। সমস্যা হল আমাদের চাকরিটা তো দেশকে দেখার নয়।’’
হর্ষ ভোগলে অবশ্য তীব্র ব্যঙ্গের সঙ্গে বললেন, ‘‘সবাইকে বুঝতে হবে আমরা খেলার বর্ণনা করি মাত্র। নিজেরা মাঠে নেমে খেলি না। আমাদের একটু বেশিই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে!’’