ভারত-অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট যুদ্ধ। অথচ তাতে বিতর্ক থাকবে না, তা আবার হয়? বৃহস্পতিবার ইডেনেও জন্ম নিল এক বিতর্ক, যার পরে অস্ট্রেলিয়া শিবির বেশ ক্ষুব্ধ বলে খবর। এমনকী ঘটনাটা নিয়ে আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্কও জুড়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ ও তাঁর সতীর্থরা।
এ দিন ভারতের ইনিংসের একেবারে শেষ দিকে অস্ট্রেলীয় পেসার কেন রিচার্ডসন হার্দিক পাণ্ড্যকে তাঁর প্রায় বুকের সমান একটা ফুলটস দেন। স্বাভাবিক নিয়মে এটা নো-বল। হার্দিক পাণ্ড্য সোজা কভারে বলটা স্মিথের হাতে তুলে দেন ও যথারীতি স্মিথ আউটের আবেদন করেন। সঙ্গে সঙ্গে বোলার রিচার্ডসনের উদ্দেশ্যে বলটা ছুড়েও দেন তিনি।
রিচার্ডসন বল ধরে যখন স্টাম্প ভেঙে দেন, তখন পাণ্ড্য ছিলেন না ক্রিজে। বৃষ্টি শুরু হয়েছে দেখে সোজা ড্রেসিংরুমের দিকে দৌড় মারেন হার্দিক। কিন্তু পরের এই ঘটনাটা ঘটার আগেই আম্পায়াররা নিজেদের মধ্যে কথা বলে জানিয়ে দেন ওটা নো-বল। এই অবস্থায় ব্যাটসম্যান ক্রিজে না থাকার জন্যই রান আউটের আবেদন করে অস্ট্রেলিয়া। আম্পায়ার তাও নাকচ করে দেওয়ায় ব্যাপক চটে যান স্মিথ। আম্পায়ারের দিকে প্রায় তেড়ে গিয়ে তাঁর সঙ্গে তর্কও জুড়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক।
খেলার শেষে স্মিথ এই ঘটনা নিয়ে বলেন, ‘‘আমরা তো জানি ব্যাটসম্যান আউট হলে তবেই ড্রেসিং রুমে চলে যায়। হার্দিক ফিরে গিয়েছে দেখেই আমরা ওর আউটের আবেদন জানাই। তখন আর ক করে জানব ওটা ডেড বল হয়ে গিয়েছে?’’ অস্ট্রেলীয় শিবিরে প্রশ্ন এই নিয়েই। রান-আউটটা কেন দেওয়া হল না?
আরও পড়ুন: কপিল, হরভজনের স্মৃতি ফেরালেন কুলদীপ
এই ঘটনা এ দিন ইডেনের ক্লাব হাউসে বসে নিজের চোখেই দেখেন বিসিসিআই-এর ম্যাচ রেফারি ও বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার প্রণব রায়। ঘটনাটা দেখার পরে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘আম্পায়াররা কী ভেবে রান আউটের আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন, তো তো ঠিক বলতে পারব না। তবে আমার ধারণা, নো-বলের সিদ্ধান্তটা আম্পায়াররা জানিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওটা ‘ডেড বল’ হয়ে যায়। তাই আর রান আউটের আবেদন করার সুযোগ ছিল না। তবে আমার ভাবনা আর মাঠে আম্পায়ারদের ভাবনা একই কি না জানি না।’’
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলানো বাংলার কয়েকজন স্থানীয় আম্পায়ারদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কোনও ব্যাটসম্যান যদি আউট হয়েছেন ভেবে প্যাভিলিয়েনর দিকে হাঁটা দেন বা দৌড়ন এবং সেই সুযোগে যদি বিপক্ষের বোলার, ফিল্ডাররা তাঁর বিরুদ্ধে রান আউটের আবেদন করেন, তা হলে সেই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি আম্পায়ারের উপর নির্ভর করে। ব্যাটসম্যান ভুল করে আউট হয়েছেন ভেবে ড্রেসিংরুমে গেছেন না কি আউট জেনেই ফিরে গিয়েছেন, তা বুঝে নিয়ে আবেদনে সাড়া দেন। ক্রিকেটের আইনের ২৭.৭ নম্বর ধারাতেই এমন বলা আছে বলে জানালেন স্থানীয় আম্পায়াররা। যদিও এক্ষেত্রে আগেই নো-বল ঘোষণা করে দেওয়ায় তা ‘ডেডবল’ হয়ে যায় এবং সে জন্য আর রান আউটের আবেদন গ্রাহ্য করা হয়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে অজি শিবির না কি আম্পায়ারদের এই সিদ্ধান্তে বেশ ক্ষুব্ধ এবং বিরতিতে তাঁদের ড্রেসিংরুমে এই নিয়ে আলোচনাও হয় বলে শোনা গেল।
আরও একটা ঘটনাতেও স্মিথরা চটেছেন বলে অজি শিবির থেকে খবর পাওয়া গেল। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, বৃষ্টি শুরু হলে আগে পিচ না ঢেকে আউটফিল্ড ঢাকা শুরু হল কেন? আম্পায়ারের কাছে এই নিয়ে নাকি অভিযোগও জানান তাঁরা। তবে স্মিথ মেনে নিলেন, ‘‘চাপের মুখে ভেঙে পড়ছি আমরা বারবার। এই সমস্যাটা যতদিন কাটিয়ে উঠতে পারব, তত দিন আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন।’’
এ দিকে ব্যাট করার সময় একটা বল কোহালির গায়ে লাগে। সাবধানতার জন্য শুক্রবার সকালে তাঁর এক্স রে হতে পারে বলে জানান ভারতীয় দলের স্থানীয় ম্যানেজার মহম্মদ মইনউদ্দিন বিন মকসুদ।
ক্রিকেট আইন কী বলছে: ক্রিকেটের আইনের ২৭.৭ নম্বর আইনে বলা আছে, কোনও ব্যাটসম্যান যদি আউট হয়েছেন ভেবে প্যাভিলিয়েনর দিকে হাঁটা দেন বা দৌড়ন এবং সেই সুযোগে যদি বিপক্ষের বোলার, ফিল্ডাররা তাকে রান আউট করে আবেদন করে, তা হলে সেই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি আম্পায়ারের উপর নির্ভর করে। ব্যাটসম্যান ভুল করে আউট হয়েছেন ভেবে ড্রেসিংরুমের দিকে দৌড়েছেন, না সত্যিই তিনি আউট হয়েছেন তা পরখ করে তবেই রান আউটের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার।