গুয়াহাটিতে অস্ট্রেলিয় বোলার বেহরেনডর্ফ। ছবি: এএফপি।
যুজবেন্দ্র চহালকে বাউন্ডারি মেরে মোয়েজেস এনরিকে জয়ের রান তুলে নিতেই প্যাভিলিয়নে দাঁড়িয়ে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত আকাশে ছুড়তে দেখা গেল অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারকে।
চলতি বছরে ভারতে টেস্ট এবং একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজে হেরেছে অস্ট্রেলিয়া। তাই তাদের নতুন অধিনায়ক ওয়ার্নারের কাছে একমাত্র সুযোগ ছিল টি টোয়েন্টি সিরিজে ভারতকে হারিয়ে মুখ রক্ষা করার। তা করতে নেমে গুয়াহাটির প্রথম দিন-রাতের ম্যাচে ভারতকে আট উইকেটে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১-১ করে ফেলল অস্ট্রেলিয়া। ফলে সিরিজের নিষ্পত্তি হতে চলেছে হায়দরাবাদের শেষ ম্যাচে।
মঙ্গলবার দুপুর তিনটের সময় যখন আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামল, তখন আশা করা যায়নি ম্যাচটা ঠিক সময় শুরু হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়েই খেলা শুরু হয়।
এই মুহূর্তে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ চলছে গুয়াহাটিতে। সেখানে স্টেডিয়াম ভরেনি। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে দর্শকঠাসা বর্ষাপাড়ার ড. ভূপেন হাজারিকা স্টেডিয়াম ফের দেখাল বিরাট-ধোনিদের প্রভাব। কোহালির ভারতের জয় দেখতে এ দিন ভরে গিয়েছিল সাড়ে সাইত্রিশ হাজারের পুরো স্টেডিয়াম। কিন্তু ভারতের ইনিংস শেষ হতেই সেই ক্রিকেট জনতা হতাশ। অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের শুরুতে ভুবনেশ্বর কুমার ও যশপ্রীত বুমরা বিপক্ষের দুই ওপেনারকে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ফিরতে হল নিরাশ হয়েই।
আরও পড়ুন: নেহরাকে ব্যঙ্গ করে টুইটারে ট্রোলড জনসন
রোহিত শর্মা, বিরাট কোহালি বা মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের মঞ্চে বল হাতে বরং কামাল করে গেলেন নিউ সাউথ ওয়েলসের বাঁ হাতি জোরে বোলার জেসন বেহরেনডর্ফ। চার ওভারে মাত্র ২১ রান খরচ করে তুলে নিলেন চারটি উইকেট। যার মধ্যে রয়েছেন, দুই ওপেনার রোহিত শর্মা (৮), শিখর ধবন (২)। বেহরেনডর্ফ অন্য দুই শিকার ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি (০) এবং মণীশ পাণ্ডে (৬)।
বেহরেনডর্ফের কাজটা আরও সহজ করে দিয়েছিলেন তাঁর অধিনায়ক ওয়ার্নার। টস জিতে, বৃষ্টি ভেজা এই পরিবেশে ফিল্ডিং নিয়ে। আর তার সুযোগ নিয়ে গেলেন এই বাঁ হাতি পেসার। নিয়ন্ত্রিত পেসের সঙ্গে স্যাঁতসেতে আবহাওয়ায় বলটা জায়গা মতো রাখছিলেন। সঙ্গে সুইং।
বেহরেনডর্ফকে সামলাতে না পেরেই নির্ধারিত ২০ ওভারে ভারতের ইনিংস শেষ হয়ে যায় ১১৮ রানে। কোহালি শুরুতে আউট হয়ে যাওয়ার পরে ভারত আর ফিরে আসতে পারেনি। ম্যাচ হেরে কোহালিও বলে গেলেন, ‘‘ব্যাটিং ঠিক হয়নি। উইকেট প্রথম দিকে স্যাঁতসেতে ছিল। ওদেরও শুরুতে অসুবিধা হয়েছে। কিন্তু পরে কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার।’’
আর দিনের নায়ক বেহরেনডর্ফ সম্পর্কে ভুবনেশ্বর কুমার বলে গেলেন, ‘‘শুরুর দিকে বেহরেনডর্ফের স্পেলটাই ফ্যাক্টর হয়ে গেল। স্যাঁতসেতে পিচের পুরো সুবিধা নিল ও।’’ আর চার উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা বেহরেনডর্ফ হাসি মুখে বলছিলেন, ‘‘ভারতকে ধাক্কা দিয়ে সিরিজে ফেরা দরকার ছিল। তা আমি করতে পারলাম বলে ভাল লাগছে।’’ বেহরেনডর্ফের দাপটেই দশ ওভারেই ৬০-৫ হয়ে গিয়েছিল ভারত। শেষ দিকে কিছুটা লড়াই করেন হার্দিক পাণ্ড্য। ২৩ বলে ২৫ রান করে। যার মধ্যে ছিল একটি বিশাল ছক্কা।
২০ ওভারে ১১৮ রানের পুঁজি নিয়ে নেমেও এর শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ (৮) ও ডেভিড ওয়ার্নার (২)-কে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে একটা ধাক্কা দিয়েছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার ও জশপ্রীত বুমরা। কিন্তু তার পরে আর ম্যাচে সে ভাবে জাঁকিয়ে বসতে পারেনি ভারতীয় বোলিং। আর তার সুযোগ নিয়েই এনরিকে (৬২) এবং ট্র্যাভিস হেড (৪৮) অস্ট্রেলিয়াকে জয় এনে দেন। এ দিনের জয়ের ফলে টি-টোয়েন্টিতে সাত ম্যাচ পর অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারল ভারত।