উৎসব: উচ্ছ্বাস জন জনসনের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ঘরের মাঠে এটিকের প্রথম জয়! মরসুমে প্রথম বার যুবভারতীতে গোল পেল স্টিভ কপেলের দল। কালু উচে পাঁচ ম্যাচ পরে প্রথম গোলের স্বাদ পেলেন। এ বারের ইন্ডিয়ান সুপার লিগে প্রথম বার লিগ টেবলে প্রথম চারে উঠে এল এটিকে। শুধু তাই নয়, এই চারটি ‘প্রথম’ হওয়া ঘটনার যোগ ফলে মাথা নোয়াল গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।
আরও একটা চমকপ্রদ ঘটনা ঘটল এ দিন। টানা পাঁচটি ম্যাচ জিততে পারল না চেন্নাইয়িন। ম্যাচের পর অভিষেক বচ্চন যখন মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ছেন, তখন দেখা গেল এটিকে ফুটবলাররা ঠিক উল্টোদিকের গ্যালারির সামনে উচ্ছ্বাসিত সমর্থকদের অভিবাদন জানাচ্ছেন।
এটিকে কোচ স্টিভ কপেল অবশ্য এ রকম একটা জয়ের পরও বেশ সংযত। বলে দিলেন, ‘‘ঘরের মাঠে প্রথম জয় এবং সেটা গতবারের চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে। এটা ভাল রাত। কিন্তু এখনও সামনে অনেক কঠিন দল। বেঙ্গালুরুর মতো শক্তিশালী দলের সঙ্গে খেলতে হবে।’’ তিনি মানলেন, চোদ্দো মিনিটের মধ্যে দু’গোলে এগিয়ে যাওয়াটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।
গত চার বারের খেতাব যে দু’দল সমান ভাগে ভাগ করে নিয়েছে, তারাই এ বার শেষ চারে ঢোকার অক্সিজেন পেতে হাঁসফাঁস করছে। এ রকম আবহে লড়াই যে ধুন্ধুমার হবে আশা করাই গিয়েছিল। কিন্তু আশঙ্কা ছিল দু’দলের দুই ব্রিটিশ কোচের মনোভাব নিয়ে। কারণ কপেল ও জন গ্রেগরি রক্ষণাত্মক ভাবনাকে প্রাধান্য দেন যে কোনও ম্যাচে। হল ঠিক উল্টো। বাঁচার জন্য দু’জনই আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়েই নামিয়েছিলেন দলকে। ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে। একজন করে হোল্ডিং মিডিও ছিলেন দু’দলেই। ফলে খেলাটা চরম উপভোগ্য হল। মরসুমে প্রথম বার শুরুর পনেরো মিনিটের মধ্যে কলকাতা দু’গোল করে ফেলল। স্টাইকার কালু উচে আর স্টপার জন জনসন— দুই বিদেশির সৌজন্যে এগিয়ে গেল কপেলের দল। গত বার দিল্লি ডায়নামোসের হয়ে তেরো গোল করে রঙ মশাল জ্বালিয়েছিলেন। কিন্তু জার্সি বদলে লাল-সাদা হতেই তাঁর সেই রঙ উধাও হয়ে গিয়েছিল। সে জন্যই সম্ভবত গোল করার পর উৎসব পালন করতেই ভুলে গেলেন। কালু রামধনু হতে পারতেন দু’টো সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে। এটিকের পরের গোল ম্যানুয়েল লাঞ্জারোতি আর জন জনসনের যুগলবন্দিতে। ২-০ পিছিয়ে পড়ার পরও চেন্নাইয়িন যে গোলটা করল তা এ বারের আইএসএলের সেরা পাঁচে জায়গা পেতে পারে। ফ্রান্সিসকোর ক্রস মাটিতে পড়ার আগেই বিদ্যুৎ গতিতে এটিকের দুই স্টপারের মাঝখান দিয়ে হেডে ফ্লিক করেন সালোম। লিয়োনেল মেসির দেশে বেড়ে ওঠা সালোমের দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে। প্যালেস্টাইনের জাতীয় দলের খেলে আসা সালেমের সম্পদ, চোরা গতি। সেটা কাজেও লাগাচ্ছিলেন। বল পজেসনে এগিয়ে থাকা গ্রেগরির দলে তিনিই ছিলেন চোখে পড়ার মতো। যেমন এটিকের দাপটের মূলে ছিল লাঞ্জারেতির সাপোর্টিং স্ট্রাইকার হিসাবে মাঠ জুড়ে খেলা। তিনিই ম্যাচের সেরা। কালু, বলবন্ত, কোমল থাটালরা গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে বিরতির আগেই কপেলের মুখে চওড়া হাসি দেখা যেত। কিন্তু সেটা না হওয়ায় বিরতির পর উল্টে চাপ বেড়ে গেল এটিকের। এটিকে গোলরক্ষক অরিন্দম দ’টো নিশ্চিত গোল না বাঁচালে বিপদে পড়তেই পারত কপেলের দল।
এ বারের আইএসএল এখনও জমেনি। বিশেষ করে কলকাতায়। গতবারের বিশ্রী ফল এবং এ বার শুরুতে পরপর ঘরের মাঠে হার—উৎসাহ অনেকটাই শুষে নিয়েছিল। তা সত্ত্বেও হাজার পনেরো দর্শক শুক্রবার এসেছিলেন মাঠে। এটিকের প্রথম জয় দেখতে। সেই স্বাদ নিতে নিতেই বাড়ি ফিরলেন তাঁরা।
এটিকে: অরিন্দম ভট্টাচার্য, আইবর খোংজি, জন জনসন, গার্সন ভিয়েরা, রিকি লালাওয়ামওয়া, এভার্টন স্যান্টোস, কোমল থাটাল (জয়েশ রানে), প্রণয় হালদার, বলবন্ত সিংহ (হিতেশ শর্মা), ম্যানুয়েল লাঞ্জারেতি (আন্দ্রে বেকে), কালু উচে।