এক ম্যাচ সাসপেন্ড থাকায় গত শুক্রবার গুয়াহাটিতে আটলেটিকো দে কলকাতার বেঞ্চে বসতে পারেননি জোসে মলিনা।
আগামী রবিবার পুণেতেও এটিকের বেঞ্চে সম্ভবত বসা হবে না স্প্যানিশ কোচের।
মলিনার সাসপেনশনের মেয়াদ বাড়তে পারে! কারণ তাঁর এ বারের অপরাধ রেফারির সঙ্গে তর্ক করার চেয়েও নাকি অনেক গুরুতর। যার জেরে আরও বড় শাস্তির কোপে পড়তে পারেন পস্টিগা-দেবজিৎ-হিউমদের কোচ।
সোমবার মুম্বইয়ে আইএসএলের হেড কোয়ার্টার সূত্রের খবর, চার ম্যাচ সাসপেন্ড হতে পারেন মলিনা। সঙ্গে হতে পারে জরিমানাও।
কেন?
গুয়াহাটিতে এটিকে-নর্থ ইস্ট ম্যাচ চলাকালীন নির্বাসিত মলিনা নাকি গ্যালারি থেকে ফেন্সিংয়ের সামনে ডেকে এনে বারবার তাঁর সহকারী কোচ পাবলো এবং অন্য কয়েকজনের মাধ্যমে নানা রকম পরামর্শ দিয়েছেন দলের ফুটবলারদের। কাকে পরিবর্ত নামাতে হবে তাও বলে দিয়েছেন। যা টুর্নামেন্টের আইনে বড়মাপের অপরাধ। সবচেয়ে বড় কথা, মলিনার পুরো কাণ্ডই ধরা পড়েছে আইএসএল কর্তৃপক্ষের গোপন ক্যামেরায়। এমনকী ম্যাচের চতুর্থ রেফারিও নাকি সেই ছবি তুলে রেখেছেন বলে খবর।
গুয়াহাটির যে মাঠে সে দিন ম্যাচ হয়, সেই ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামের ফেন্সিংয়ের খুব কাছে দু’দলের রিজার্ভ বেঞ্চ। এটিকের অতিরিক্ত ফুটবলার এবং কোচিং স্টাফ মাঠের ধারে যে জায়গাটায় বসেছিলেন তার থেকে কিছুটা কোনাকুনি গ্যালারিতে বসেছিলেন মলিনা। সে দিন খেলার শুরু থেকেই তিনি নানা ভঙ্গিতে হাত নেড়ে, নিজের সাপোর্টিং স্টাফকে ফেন্সিংয়ের পাশে ডেকে এনে নির্দেশ দিচ্ছিলেন। যা চোখ এড়ায়নি লিগ কর্তাদের। তাঁরা এই দৃশ্য দেখার পর মলিনাকে প্রথমে নির্দেশ দেন, গ্যালারি ছেড়ে স্টেডিয়ামের ভিতরের ঘরে গিয়ে বসার জন্য। মলিনা সেই নির্দেশ মানেননি। উল্টে হাফটাইমের পরে সহকারী পাবলোকে ফের ফেন্সিংয়ের ধারে ডেকে পরামর্শ দেন দ্যুতির জায়গায় পস্টিগাকে নামানোর। এর পরেই মলিনার সামনে চেয়ার দিয়ে লিগের একজন কর্তাকে বসিয়ে দেয় আইএসএল কর্তৃপক্ষ। তাতেও নাকি থামানো যায়নি মলিনাকে। ইশারায় নিজের টিমকে নানা নির্দেশ দেওয়া চলতেই থাকে নির্বাসিত এটিকের কোচের।
জানা যাচ্ছে, তার পরে আইএসএলের ম্যাচ পরিচালনা করার দায়িত্বে থাকা প্রধান কর্তা রৌচক লেঙ্গার স্বয়ং চলে আসেন মলিনার কাছে। সেখানে বসে থাকা এটিকে কর্তাদের কার্যত জানিয়ে দেন, তাঁদের দলের চিফ কোচের এই অপরাধে আরও বড় শাস্তি এক রকম অনিবার্য। চার ম্যাচ পর্যন্ত নির্বাসন!
মলিনার যদি এ রকম কঠোর শাস্তি হয়, তা হলে প্রচণ্ড সমস্যায় পড়বে এটিকে। সেক্ষেত্রে হাবাসের পুণে, জামব্রোতার দিল্লি (দুটোই অ্যাওয়ে), জন আব্রাহামের নর্থ ইস্ট (রবীন্দ্র সরোবর), মাতেরাজ্জির চেন্নাইয়ান (ফের অ্যাওয়ে)— আগামী চারটে কঠিন ম্যাচে এটিকে বেঞ্চে থাকতে পারবেন না মলিনা। শাস্তির কোপে পড়ার পর ভবিষ্যতে আবেদন করে শাস্তি কমলে অবশ্য অন্য কথা।
আরও আশ্চর্যের, এটিকে কর্তারা অনেকেই জানেন তাঁদের দলের এই খারাপ খবর। কিন্তু তাঁরা মুখে কুলুপ এঁটে আইএসএল কর্তৃপক্ষের চিঠির অপেক্ষা করছেন। সোমবার তাদের মুম্বই অফিসে দিওয়ালির ছুটি থাকায় শাস্তির চিঠি নাকি তৈরি করা যায়নি। ক’টা ম্যাচ সাসপেন্ড হন মলিনা, সেটা দেখার পরেই নিজেদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চান এটিকে কর্তারা। যা খবর, তাতে মঙ্গল বা বুধবার চিঠি এসে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই শাস্তি কমানোর আবেদন করা হবে বলে ঠিক হয়ে আছে।
শোনা যাচ্ছে, ফের এবং এ বার আরও অনেক বেশি ম্যাচ সাসপেন্ড হতে পারেন, এই খবরে মলিনা নিজে প্রবল চিন্তিত ও হতাশ। ফুটবলারদের তিন দিন ছুটি দিলেও নিজে বাইপাসের হোটেল ছেড়ে তাই বেরোননি।
কলকাতার কর্তাদের অনেকে ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, এটিকের স্প্যানিশ কোচ মানেই কি তাঁর মাথায় নির্বাসনের খাঁড়া? আইএসএলের প্রথম দু’মরসুমে কলকাতার কোচ থাকার সময় হাবাস সাসপেন্ড হয়ে বেশ কয়েক বার গ্যালারিতে বসতে বাধ্য হয়েছেন ম্যাচ চলাকালীন। এমনকী কলকাতার জার্সিতে গত মরসুমের শাস্তির জেরে পুণের কোচ হিসেবও এ মরসুমে প্রথম চার ম্যাচ মাঠের বাইরে বসে থেকেছেন হাবাস। মলিনাও হাবাসের পথে! দেখার পূর্বসূরিকে তিনি টপকে যান কি না এ ব্যাপারে!