ফাইল চিত্র
মোবাইলে ফোন করলেই শোনা যায় সেই গান, ‘‘কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই…।’’
করোনাভাইরাসের প্রকোপে রেলকর্মী বঙ্গকন্যা স্বপ্না বর্মনের মনের রিংটোনটাও যে এখন সে রকমই। এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী এই হেপ্টাথলিট মার্চ মাসে লকডাউনের আগে কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গের বাড়িতে ফিরেছিলেন। ভেবেছিলেন সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তখন অনুশীলনের জন্য কলকাতায় ফিরবেন। কিন্তু তা হয়নি। তাই আপাতত জলপাইগুড়ির বাড়িতেই আটকে রয়েছেন স্বপ্না। বলছেন, ‘‘একে ভাইরাসের সংক্রমণ। তার উপরে বৃষ্টি হওয়ায় এলাকার মাঠ জলে ভাসছে। ফলে অনুশীলনটাও ঠিক করে হচ্ছে না।’’ যোগ করেন, ‘‘আরও একটা এশিয়ান গেমসের সোনা পেতে চাই হেপ্টাথলনে। জানি না সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কি না। আগামী বছর এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড-সহ কয়েকটি বড় প্রতিযোগিতা রয়েছে। এখন তার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। পাড়ার মাঠ শুকনো থাকলে সেখানে দৌড়, ফিজিক্যাল ট্রেনিং করছি।’’
৪০০ মিটারে এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে সোনাজয়ী বাংলার আর এক অ্যাথলিট দেবশ্রী সরকার জাতীয় শিবির থেকে বেথুয়াডহরির বাড়িতে ফিরেছেন। ওজন যাতে বেড়ে না যায়, তার জন্য বাড়ির ছাদেই দৌড়চ্ছেন, সিড়ি ভাঙছেন তিনি।
১০০ মিটার ও ৪x১০০ মিটার রিলের ভারতীয় অলিম্পিক্স দলে রয়েছেন বাংলার অ্যাথলিট হিমাশ্রী রায়। তিনি এই মুহূর্তে পাটিয়ালার জাতীয় শিবিরে অস্বস্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সেখান থেকেই ফোনে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এ বার অলিম্পিক্স হল না। আগামী বছরও হবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নই। ডন ব্র্যাডম্যান যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য অনেক টেস্ট খেলতে পারেননি, আমাদের জীবনেও না অলিম্পিক্স-স্বপ্ন সে ভাবে ধাক্কা খায়।’’ যোগ করেন, ‘‘শিবিরে স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার জন্য খুব কড়াকড়ি। আমার ভয়, অনুশীলনের অভাবে শরীরে যেন মেদ না জমে। তাই ট্র্যাকে নিরাপত্তাবিধি মেনেই অনুশীলন করছি অনুমতি নিয়ে। নিজেই করছি ফিটনেস ট্রেনিং। জানি না কী হবে।’’
জাতীয় শিবিরে থাকা বাংলার আর এক কৃতী অ্যাথলিট লিলি দাস। ৮০০ ও ১৫০০ মিটারে আন্তর্জাতিক স্তরে সোনাজয়ী লিলির মন্তব্য, ‘‘অতিমারিতে অ্যাথলেটিক্সের ভবিষ্যৎ ভেবে মানসিক যন্ত্রণা হচ্ছে।’’
এই মুহূর্তে পাটিয়ালার জাতীয় শিবিরে থাকা আরও এক বাংলার অ্যাথলিট আভা খাটুয়া শটপাটে নামেন। তিনি বলছেন, ‘‘যখন মরসুম ছিল না তখন মন দিয়ে অনুশীলন করেছি প্রতিযোগিতার জন্য। আর যখন মরসুম এল তখন ঘরে বসে রয়েছি। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। কয়েক দিন হল মুখাবরণ পরে অনুশীলন শুরু করেছি।’’
লকডাউনে আরও বড় বিপদে পড়েছিলেন রাজ্য অ্যাথলেটিক্সের উঠতি তারকা রাজশ্রী দাস। সাগরের বাসিন্দা রাজশ্রী হাইজাম্পে সম্প্রতি জাতীয় স্তরে পরিচিত মুখ। আমপানে তাঁর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। রাজশ্রীর সাহায্যে এগিয়ে এসে তাঁকে বিপন্মুক্ত করেছেন রাজ্য অ্যাথলেটিক্স সংস্থার সচিব কমল মৈত্র। রাজশ্রীও চিন্তিত অ্যাথলেটিক্সের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে।
রাজ্য অ্যাথলেটিক্স সংস্থার সমালোচনা করে কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, ‘‘কেউ কোনও খোঁজখবর নেয়নি। লকডাউন উঠলে কবে প্রতিযোগিতা হবে, অ্যাথলিটদের ফিট রাখতে কী করতে হবে, সে ব্যাপারে ওদের উদ্যোগ নিতে হত। অনেক অ্যাথলেটিক্স শিবিরই বন্ধ হয়ে আছে।’’ রাজ্য অ্যাথলেটিক্স সংস্থার সচিব কমল মৈত্র বলছেন, ‘‘করোনা দেশের অ্যাথলেটিক্স-সহ সব খেলাতেই বিঘ্ন ঘটিয়েছে। রাজ্য সরকার এখনও মাঠে নামার নির্দেশ দেয়নি। ফলে সবারই অসুবিধা হচ্ছে। মানুষের জীবন সবার আগে।’’ যোগ করেছেন, ‘‘আমরা অনলাইন ক্লাস করেছি। হয়তো যোগাযোগ সমস্যায় সকলে অংশ নিতে পারেনি। কয়েক জন অ্যাথলিটকে সংস্থার তরফে আর্থিক সাহায্যও করা হয়েছে। তবে করোনা অতিমারি বাংলার অ্যাথলেটিক্সকে দু’থেকে তিন বছর পিছিয়ে দিয়েছে। বয়সভিত্তিক বিভাগের অনেক ছেলেমেয়েই যে ক্ষতির শিকার হয়েছে।’’ অতিমারির ধাক্কা সামলাতে রাজ্য অ্যাথলেটিক্স সংস্থা কী পদক্ষেপ করে, তা-ও কিন্তু মানুষ দেখতে চাইবে।