শ্রদ্ধা: হাসপাতালে কান্ননের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্ল। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
উচ্চরক্তচাপ ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে গত তিন সপ্তাহ ধরেই তিনি ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসকদের যাবতীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে রবিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার এক সরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রাক্তন ফুটবলার পুঙ্গম কান্নন। বয়স হয়েছিল ৮০। রেখে গেলেন স্ত্রী আন্তোনিয়েত ও দুই কন্যা কাবেরী ও ইন্দিরাকে।
এশিয়ান গেমস ও মারডেকা কাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কলকাতার তিন বড় দল মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডানেও সুনামের সঙ্গে খেলেছেন কান্নন। গত ৭ এপ্রিল দমদমের বাড়িতেই সেরিব্রাল স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ভর্তি করা হয় বাগুইআটির এক বেসরকারি নার্সিংহোমে। তার পরে দক্ষিণ কলকাতার সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু এ দিন সন্ধ্যায় তাঁর লড়াই থেমে যায়।
কান্ননের প্রয়াত হওয়ার খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে আসেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্ল। অসুস্থ হওয়ার পরে তিনিই কান্ননকে হাসপাতালে ভর্তি করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ফুটবলার জীবনে দু’বছর ইস্টবেঙ্গলে খেলেছিলেন বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় খেলতে আসা এই ফুটবলার। হাসপাতালেই প্রয়াত ফুটবলারের দেহ লাল-হলুদ পতাকায় মুড়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় ইস্টবেঙ্গলের তরফে। যদিও সামান্য আর্থিক সাহায্যের বাইরে বিশেষ কিছু করতে দেখা যায়নি তাদের। এবং, যে ক্লাবের হয়ে ময়দানে আট বছর দাপিয়ে ফুটবল খেলেছিলেন কান্নন, সেই মোহনবাগানের কোনও প্রতিনিধিকে রাত পর্যন্ত হাসপাতালে দেখা যায়নি। ছিলেন না মহমেডান ক্লাবেরও কেউ! সতীর্থদের মতো কান্ননের প্রাক্তন ছাত্রদের কাউকেও দেখা যায়নি হাসপাতালে।
কান্ননের সঙ্গে ময়দানে খেলেছেন প্রণব গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর প্রয়াণের খবর শুনে তিনি ফোন করেন তাঁর স্ত্রী আন্তোনিয়েতকে। শোকার্ত প্রণববাবু বলছিলেন, ‘‘কান্ননের ড্রিবল ও শুটিং ছিল দু’চোখ ভরে দেখার মতো।’’
রবিবার রাতে প্রয়াত ফুটবলারের দেহ মর্গে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর পরিবার। আজ, সোমবার মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল তাঁবু পরিক্রমা করে কান্ননের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে বেঙ্গালুরু। সেখানেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে ‘এশিয়ার পেলে’ বলে পরিচিত এই ফুটবলারের।
জন্ম ১৯৩৯ সালের ১০ জুলাই বেঙ্গালুরুর এক তামিল পরিবারে। ১৯৬৫ সালে ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে সিআইএলের হয়ে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে দুরন্ত খেলেছিলেন। প্রথম দিন ম্যাচ শেষ হয় গোলশূন্য ভাবে। দ্বিতীয় দিন মোহনবাগান ১-০ জিতলেও কান্ননকে আটকাতে দু’দিনই হিমশিম খেতে হয়েছিল সবুজ-মেরুন রক্ষণকে। কান্ননকে পরের বছরেই মোহনবাগানে নিয়ে আসেন কিংবদন্তি শৈলেন মান্না। আর প্রথম ম্যাচেই চমক। স্পোর্টিং ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তাঁকে অধিনায়ক চুনী গোস্বামীর বদলে শুরু থেকে খেলিয়েছিলেন তৎকালীন কোচ অরুণ সিংহ। সমর্থকরা প্রথমে ক্ষুব্ধ হলেও জোড়া গোল করার পরে কান্ননের নামে জয়ধ্বনি দেন। ১৯৬৬-’৬৮, ১৯৭১ ও ১৯৭৩-’৭৫ মোহনবাগানে খেলে ৫১টি গোল করেছিলেন কান্নন। এর মধ্যে ১৯৬৬ ও ১৯৭১ সালে রোভার্স কাপ ফাইনালে গোল করে মোহনবাগানকে ট্রফি দিয়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে অমৃতবাজার শতবার্ষিকী কাপের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জয়ের গোল কান্ননেরই। ইস্টবেঙ্গল জার্সি গায়েও ১৯৬৯ সালের রোভার্স কাপের ফাইনালে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ৩-০ জয়ের ম্যাচে একটা গোল করেছিলেন কান্নন। ইস্টবেঙ্গলে ফেরেন ১৯৭৬ সালে। ১৯৭২ সালে খেলেন মহমেডানেও।
১৯৭০ সালের শেষ দিকে বিএনআরের চাকরি ছেড়ে ক্লাবকর্তাদের ডাকেই ফিরে এসেছিলেন মোহনবাগানে। খেলা ছাড়ার পরে ১৯৮৪ সালে কোচিং ডিপ্লোমা করেন কান্নন। ময়দানে কোচিং করিয়েছেন মহমেডান, সিএফসি ও ডালহৌসি ক্লাবকেও। শেষ জীবনে চরম আর্থিক অনটনে জর্জরিত ছিলেন তিনি।