কয়েক বছরে কিংবদন্তি ক্লাবে ঢুকে যাবে অশ্বিন

রবিচন্দ্রন অশ্বিনের টেস্ট কীর্তির দিন বারবার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ফোন ক্রমাগত ‘সুইচড অফ’ শুনিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অফ স্পিনারকে পাওয়া গেল সোমবার, অশ্বিনের ম্যাচে দশ উইকেট নেওয়ার দিনে। এবং দু’দেশের সাম্প্রতিক উত্তেজনার আবহের মধ্যেও ওয়াঘার ও পার থেকে সইদ আজমল যে ভাবে আনন্দবাজারের কাছে অশ্বিন নিয়ে শংসাপত্র দিলেন...

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

কানপুর শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:২৩
Share:

রবিচন্দ্রন অশ্বিনের টেস্ট কীর্তির দিন বারবার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ফোন ক্রমাগত ‘সুইচড অফ’ শুনিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অফ স্পিনারকে পাওয়া গেল সোমবার, অশ্বিনের ম্যাচে দশ উইকেট নেওয়ার দিনে। এবং দু’দেশের সাম্প্রতিক উত্তেজনার আবহের মধ্যেও ওয়াঘার ও পার থেকে সইদ আজমল যে ভাবে আনন্দবাজারের কাছে অশ্বিন নিয়ে শংসাপত্র দিলেন...

Advertisement

“...রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে যত দূর মনে পড়ছে, প্রথম দেখি ২০১১ সালে। বিশ্বকাপ খেলতে তখন আমি ভারতে এসেছি। আমাদের সঙ্গে কাপ সেমিফাইনাল ম্যাচটা খেলেনি ও। কথাবার্তাও হয়নি। শুধু শুনেছিলাম যে, ইন্ডিয়ার নতুন স্পিনার নাকি ভাল বল করে। ভাল টার্ন আছে হাতে।

Advertisement

সে দিনের নতুন ছেলেটার রবিবার দু’শো টেস্ট উইকেট হয়ে গেল! ফাস্টেস্ট টু হান্ড্রেড টেস্ট উইকেট তালিকায় শুনলাম ও এখন দ্বিতীয়। রেকর্ডটা শুনে অবাক হইনি খুব। পরে যত বার অশ্বিনের বিরুদ্ধে মাঠে খেলেছি বা টিভিতে দেখেছি বল করতে, প্রত্যেক বার তো মনে হয়েছে এ ছেলে আলাদা হবে। প্রচুর ভোগাবে ব্যাটসনম্যানদের।

কিউঁকি বান্দে মে দম হ্যায়!

কেউ পারফেক্ট হয়ে আসে না। নিজেকে নিখুঁত নিজেকেই করে তুলতে হয়। যতটা আছে, তাকে আরও ঘষেমেজে ঝকঝকে করতে হয়। অশ্বিনের প্রথম দিকে একটা সমস্যা ছিল অ্যাকশন নিয়ে। ও যদি সেটা নিয়ে বসে থাকত, নিজেকে শুধরোনোর চেষ্টা না করত, তা হলে এত তাড়াতাড়ি ওকে এতটা ভয়ঙ্কর বোধহয় দেখাত না। কিন্তু দেখলাম, দু’টো বদল নিয়ে অশ্বিন দ্রুত আবার ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে ফিরে এল। বুঝিয়ে দিল, ওর খিদেটা আছে। নিজেকে আরও মারাত্মক করে তোলার খিদে। অ্যাকশনটা পাল্টে ফেলল একটু। আর ভেরিয়েশন ছেড়ে সোজা অফস্পিনের দিকে চলে গেল। একদম ঠিক করেছে।

ভেরিয়েশন কখন লাগে? তুমি যখন টি-টোয়েন্টি বা ওয়ান ডে খেলবে, ভেরিয়েশন তখন দরকার। বোলারকে মারার জন্য যখন বসে থাকবে ব্যাটসম্যান। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট সেটা নয়। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলতে পারি যে, টেস্টে লাগে ঠান্ডা মাথা, ধৈর্য আর ব্যাটসম্যানের টেম্পারামেন্টের সঙ্গে খেলা। টেস্টে ব্যাটসম্যান মানসিকতা অন্য রকম, ভেরিয়েশনে তাই ওখানে কাজ হয় না। ওখানে নিজের অফস্পিনটাই করে যেতে হবে টানা, নিখুঁত ভাবে।

অশ্বিন যেটা এখন খুব ভাল পারে।

দেখলাম, ওর দু’শো উইকেট নিয়ে প্রচুর কথা হচ্ছে। বুঝে পাচ্ছি না সেটা কেন। অশ্বিনের মতো স্পিনারের কাছে দুশো উইকেট পাওয়া কি বিশাল ব্যাপার নাকি? নিঃসন্দেহে এটা বড় অ্যাচিভমেন্ট। অশ্বিনের ক্লাসকে যা বুঝিয়ে গেল। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও বুঝতে হবে যে, এ ছেলের দু’শোটাই শেষ নয়। অশ্বিন পাঁচশো পাবে। ঠিকই বলছি। ক্রিকেট ছাড়ার পর ওর নামে অন্তত পাঁচশো টেস্ট উইকেট আমি দেখছি।

কেন? কারণটা খুব সহজ। উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে ওর একটা লড়াই হতে পারে, কিন্তু বাকিরা? এক বাত শুনিয়ে। ইয়ে গোরে লোগ কা বস্ কী বাত নহি অশ্বিনকো খেলনা! উসকা ডেলিভারি সমঝ মে হি নহি আয়েগা। উপমহাদেশের বাইরের ব্যাটসম্যানরা বুঝতেই পারবে না অশ্বিনের বল কী করবে না করবে। নিউজিল্যান্ডের দশা কী হল, সবাই দেখল। গোটা সিরিজেই এ রকম চলবে। কতগুলো উইকেট নিয়ে অশ্বিন সিরিজ শেষ করে, সেটা দেখতে থাকুন। আর নিউজিল্যান্ডই শুধু নয়। ভারতে এর পর খেলতে ইংল্যান্ড আসবে, অস্ট্রেলিয়া আসবে। কে খেলবে ওকে? তার উপর সঙ্গে আবার জাডেজা আছে। ওদের পার্টনারশিপ খেলার লোকই তো নেই। তার উপর কুম্বলের মতো কোচ এখন পাচ্ছে ওরা।

আসলে অশ্বিনের সবচেয়ে বড় গুণ হল ওর লাইন-লেংথ। সব সময় টাইট রেখে যাওয়া। লুজ বল খুব একটা দেয় না। মুরলী, কুম্বলে, সাকি ভাই (সাকলিন মুস্তাক) সবাই যেটা করত। দেশে হোক বা বিদেশে, টার্নার দিক বা সিমিং উইকেট, এক লাইনে রেখে যেত। ব্যাটসম্যানকে শট খেলার কোনও জায়গা দিত না। পরে ওটা আমিও করতাম। ভাল স্পিনার কখনও ব্যাটসম্যানকে শট খেলার বল দেয় না। এখন যেটা অশ্বিন করে। ওর রগড়ানি, ফোকাস— সব কিছু অসাধারণ। ও যদি এ ভাবেই চলতে থাকে, অশ্বিনকে খেলা প্রচণ্ড কঠিন হয়ে যাবে।

আর তাই, আমি ওকে লেজেন্ডদের ক্লাবে দেখতেও পাচ্ছি। স্পিন লেজেন্ডদের ক্লাবে। যে ক্লাবে মুরলীধরন, শেন ওয়ার্ন, কুম্বলে, সাকি-ভাইরা আছে। আমার মনে হয়, খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতেও হবে না। কয়েকটা বছর যাক। আরও কিছু টেস্ট খেলুক। লোকে এমনিই বুঝে যাবে, কেন কথাটা বলছি। আমাকে বলতে হবে না। দুনিয়াই তখন চোখ বুজে মুরলীধরনদের ব্র্যাকেটে অশ্বিনকে রাখবে।...”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement