স্বপ্নপূরণ: বার্সেলোনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ওঠার পরে দে রোসির কাঁধে ফ্লোরেঞ্জি। ছবি: রয়টার্স
চব্বিশ ঘণ্টা আগেও তিনি ছিলেন আকর্ষণের কেন্দ্রে। কিন্তু এ এস রোমার বিরুদ্ধে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বার্সেলোনা ছিটকে যাওয়ায় তাঁকেই কাঠগড়ায় তুলছে স্পেনের সংবাদমাধ্যম। তিনি— লিয়োনেল মেসি। সমালোচনা শুরু হয়েছে বার্সেলোনা ম্যানেজার আর্নেস্তো ভালভার্দের রণনীতি নিয়েও।
রোমার বিরুদ্ধে হারকে সংবাদমাধ্যমের একাংশ ব্যাখ্যা করছে, বার্সেলোনা সাম্রাজ্যের পতন বলে। আবার কারও মতে, এ রকম ভাবে কখনও অপদস্থ হয়নি বার্সেলোনা। সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, মেসিকে সমালোচনায় বিদ্ধ করা। স্পেনের সংবাদমাধ্যমের দাবি, রোমার বিরুদ্ধে পুরো ম্যাচে ১৯ বার সঠিক জায়গায় ছিলেন না আর্জেন্তিনা অধিনায়ক। পাঁচ বার রোমার গোল লক্ষ্য করে শট নিয়েছেন মেসি। কিন্তু তিন বারই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছেন। বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছে, রোমার বিরুদ্ধে দুই পর্বের ম্যাচেই গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন মেসি।
ম্যাচের পরে বার্সেলোনা ম্যানেজার সাংবাদিক বৈঠকে খোলাখুলি বলেছেন, ‘‘রোমার আগ্রাসী ফুটবলই আমাদের ছন্দ নষ্ট করে দিয়েছে। সব কিছুই ওদের পক্ষে গিয়েছে। ম্যাচের শুরুতে গোল করে এগিয়ে যায় রোমা। আবার দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও গোল পেয়ে যায় ওরা। এই চাপ সামলে আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি।’’
স্পেনের সংবাদমাধ্যম কিন্তু ভালভার্দের যুক্তি মানছে না। তাদের মতে, রোমার ফুটবলারদের আটকানোর জন্য শক্তিশালী জোসে পাওলো (পাওলিনহো)-কে খেলানো উচিত ছিল ভালভার্দের। কেন ম্যাচ শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে ওসমানে দেম্বেলেকে মাঠে নামিয়েছিলেন বার্সেলোনা ম্যানেজার, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
বার্সেলোনা তারকা সের্জিও বুস্কেৎস আবার সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলেছেন, ‘‘যন্ত্রণাদায়ক এই রাতটা দ্রুত ভুলে যেতে চাই। বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার পরে প্রথমবার এ ভাবে বিধ্বস্ত হলাম।’’ সেই সঙ্গে স্বীকার করেছেন, ভুল থেকে কোনও শিক্ষাই নেননি তাঁরা। বুস্কেৎসের কথায়, ‘‘গত বছরও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে আমরা এ ভাবেই ছিটকে গিয়েছিলাম। সেই হার থেকে যে আমরা কোনও শিক্ষাই নিইনি, প্রমাণ হয়ে গেল।’’ ভেঙে পড়েছেন আর এক তারকা আন্দ্রে ইনিয়েস্তাও। ম্যাচের পরে বার্সেলোনা তারকাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কি শেষ ম্যাচ খেললেন? ইনিয়েস্তার ইঙ্গিতপূর্ণ জবাব, ‘‘হতেও পারে। তবে এই নিয়ে আলোচনা করার সময় এটা নয়।’’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘যন্ত্রণার এই হার কখনওই প্রত্যাশিত ছিল না। বিশেষ করে যখন আমরা প্রথম পর্বে ৪-১ জিতেছিলাম।’’
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায়ের হ্যাটট্রিকের যন্ত্রণায় যখন বিধ্বস্ত মেসিরা, রোমা শিবিরে তখন ফাইনাল খেলার স্বপ্ন। ম্যাচের পরে রোমা ম্যানেজার ইউসেবিও দি ফ্রান্সিসকো বলেছেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য কিয়েভে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলা। দুর্দান্ত জয়ের পরে এই স্বপ্ন দেখতেই পারি। এই ম্যাচে আমাদের সমস্ত পরিকল্পনাই সফল হয়েছে।’’ আর ম্যাচের অন্যতম নায়ক এডেন জেকো বলেছেন, ‘‘প্রমাণ হল, আমরা সব দলকেই হারাতে পারি।’’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘বার্সেলোনাকে এ রকম বিপর্যস্ত হতে কখনও দেখিনি। ম্যাচের শুরু থেকেই আমরা ওদের চাপে রেখেছিলাম।’’ জেকো-কে এই মরসুমে নেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল চেলসি। কিন্তু রোমাতেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। জেকো বলেছেন, ‘‘রোমার হয়ে আমি এ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে খেলব। চেলসিতে চলে গেলে এই স্বপ্নটা পূরণ হত না। তাই রোমার থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা একেবারেই সঠিক ছিল।’’