নিহত ফ্রাঙ্কো নিয়েতো।
সমর্থকদের রেষারেষি, দুই ক্লাবের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ঘিরে ‘খুনে’ উত্তেজনা যে কতটা কদর্য করে তুলতে পারে ফুটবলকে, দেখে রাখল অর্জেন্তিনা।
ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সেরা মহাশক্তি দেখে রাখল, কী ভাবে হত্যা করা হচ্ছে তাদের দেশেরই ক্লাব ক্যাপ্টেনকে। দেখে রাখল হত্যা করা হচ্ছে মাঠে ইট মেরে, মধ্যযুগীয় বর্বরতার অবিকল অনুকরণে।
আর্জেন্তিনাকে আজ পর্যন্ত ফুটবল পৃথিবী জানত, দিয়েগো মারাদোনার দেশ বলে। লিওনেল মেসির দেশ বলে। ফুটবল-রোম্যান্সের দেশ বলে। শুক্রবারের পর আর্জেন্তিনার আরও একটা পরিচয় হল। তারা আজ থেকে ফুটবল-বর্বরতারও দেশ! যারা কি না ভূমিপুত্রকেও ছাড়ে না, অবলীলায় এক ক্লাব ক্যাপ্টেনকে হত্যা করতে যাদের হাত কাঁপে না, নিছক ক্লাব রেষারেষির রোষে।
আর্জেন্তিনার ঘরোয়া লিগে ম্যাচ চলছিল টিরো ফেডেরাল এবং চাখারিতা জুনিয়র্সের মধ্যে। দুই টিমের সংঘর্ষে মাঠে এত উত্তেজনা ছড়ায় যে, ম্যাচ বন্ধ করে দিতে হয়। আট জন প্লেয়ারকে মাঠ থেকে বার করে দেন রেফারি। মাঠে ধাক্কাধাক্কি থেকে মারামারি, কিছু বাদ যায়নি। গ্যালারিও অশান্ত থেকে অগ্নিগর্ভ হয়েছে। কিন্তু সেটা যে টিরো ফেডেরাল অধিনায়ক ফ্রাঙ্কো নিয়েতোর জীবনটাই কেড়ে নেবে, কে জানত।
ম্যাচ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাঠ থেকে গাড়ি নিয়ে বেরোচ্ছিলেন ফ্রাঙ্কো। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী, এক বছরের শিশুসন্তানও ছিল। কিন্তু তাঁর আর বাড়ি ফেরা হয়নি। ওখানেই বেশ কিছু উগ্র সমর্থক ঘিরে ধরেন ফ্রাঙ্কোকে। এলোপাথাড়ি মারধর শুরু হয়। হাতের সামনে যা পাওয়া গিয়েছে, তা দিয়ে বেধড়ক মারতে থাকা হয় ফ্রাঙ্কোকে। শেষে ব্যবহৃত হয় ইট। যা দিয়ে তাঁর মাথায় পরের পর আঘাত করা হয়। অবাক করা ব্যাপার এটা যে, ওই উগ্র সমর্থকদের ভিড়ে ফ্রাঙ্কোর বিপক্ষ দলের এক প্লেয়ারও ছিলেন! বিপক্ষ দলের সহকারী ম্যানেজারও ছিলেন! যাঁরা কি না শুধু ফ্রাঙ্কো নন, তাঁর স্ত্রী, শিশুসন্তান কাউকে ছাড়েননি!
ওই অবস্থা থেকে কোনও রকমে বার করে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ফেডেরাল অধিনায়ককে। কিন্তু তেত্রিশ বছরের আর্জেন্তিনীয় ফুটবলারকে শত প্রচেষ্টাতেও বাঁচানো যায়নি। ঘটনার পরপরই অপরাধীদের ধরতে নেমে পড়ে পুলিশ। ইতিমধ্যেই অভিযোগের আঙুল উঠতে শুরু করেছে আর্জেন্তিনার ফুটবল-গুন্ডা বারা ব্রাভাসের দিকে। পুলিশও বলে দিচ্ছে, এটা বারা ব্রাভাসের কাজ। যাদের লক্ষ্যই হল, স্টেডিয়ামের আশেপাশে অশান্তি ছড়ানো। ফ্রাঙ্কোর পরিবার আবার বলছে, তাঁদের ছেলেকে অপমানের উদ্দেশ্য নিয়েই মাঠে এসেছিল প্রতিপক্ষ। শেষ পর্যন্ত হত্যা করে চলে গিয়েছে। ফ্রাঙ্কোর আত্মীয় পাবলো বলেছেন, “ওরা এসেছিল ফ্রাঙ্কোকে অপমান করতে। চোখের সামনে দেখলাম ওকে পেটে লাথি মারল। ঘুঁষি মারল। ফ্রাঙ্কো চেষ্টা করছিল বাঁচতে, কিন্তু মাথায় ইট দিয়ে মারার পর কিছু করতে পারেনি ও।”
বারা ব্রাভাসের গুন্ডামি নতুন কিছু নয়। ফুটবলমহল কষ্ট পাচ্ছে অন্য কথা ভেবে। ওই ফুটবল-গুন্ডাদের সঙ্গে নারকীয় কর্মকাণ্ডে ঢুকে পড়ল বিপক্ষ কোচ? ফুটবলার?
ফুটবলারই যদি ফুটবলারের প্রাণ নিতে উদ্যত হয়, তা হলে গুন্ডাদের আর দোষ কী? বারা ব্রাভাস তা হলে আসলে কারা?