পরীক্ষা: শনিবার অলিম্পিক্স ভিলেজে দীপিকা-সহ ভারতীয় তিরন্দাজ দলের সদস্যরা। ছবি: এক্স।
এক দিকে অলিম্পিক্স, অন্য দিকে সন্তান। এক দিকে মাতৃত্বের স্নেহ, অন্য দিকে দেশের হয়ে পদক জয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। শেষ পর্যন্ত দেশকেই বেছে নিয়েছেন দীপিকা কুমারী। ১৯ মাসের মেয়েকে ছেড়ে তিনি ফ্রান্সে এসেছেন অধরা অলিম্পিক্স পদক জয়ের স্বপ্ন নিয়ে।
এই নিয়ে চতুর্থ অলিম্পিক্সে অংশ নিচ্ছেন এই ভারতীয় তারকা তিরন্দাজ। সম্ভবত এটাই হবে দীপিকার শেষ সুযোগ। নিজের স্বপ্নকে ছুঁতে মরিয়া দীপিকা অলিম্পিক্সের প্রস্তুতিতে দু’মাস দূরে ছিলেন সন্তানের থেকে। কতটা কঠিন ছিল ওই পরিস্থিতি? দীপিকা বলেছেন, ‘‘মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাকার যে যন্ত্রণা, তা ভাষায় বোঝানো যায় না। কিন্তু আবার উল্টো দিকে রয়েছে একটা স্বপ্ন ছোঁয়ার সুযোগ। যে স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য আমরা এত পরিশ্রম করে চলেছি।’’
বাংলার অলিম্পিয়ান তিরন্দাজ অতনু দাসকে বিয়ে করেছেন দীপিকা। গত বার স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই লড়াই করেছিলেন অলিম্পিক্সের মঞ্চে। এ বার অবশ্য অতনু দলে নেই। প্যারিস অলিম্পিক্সে আসার আগে এক বার মেয়ের দেখা পেয়েছিলেন দীপিকা। পুণের আর্মি স্পোর্টস ইনস্টিটিউটে মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন অতনু। যা খুবই আবেগঘন এক মুহূর্ত ছিল দীপিকার কাছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি ওর অভাবটা খুব টের পাই। কিন্তু কিছু করার নেই। তবে ওর দাদু-দিদিমা আর অতনুর সঙ্গে মেয়ে খুব মানিয়ে নিয়েছে।’’
দু’বছর আগে ডিসেম্বর মাসে মেয়ের জন্ম হওয়ার পরেই সমস্যা শুরু হয় দীপিকার। পেশি শক্ত হয়ে যায়। ওই সময় ১৯ কেজি ওজনের ধনুক তোলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল তাঁর পক্ষে। দীপিকা বলেছেন, ‘‘আমরা এমন ভাবে সন্তানের জন্মের পরিকল্পনা করেছিলাম, যাতে প্যারিস অলিম্পিক্সে অংশ নিতে অসুবিধে না হয়। কিন্তু মেয়ের জন্মের পরে বুঝতে পারলাম, আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।’’
সেই কঠিন পরিস্থিতি নিয়ে অতনু বলেছেন, ‘‘ধনুক তোলা, তির ছোড়া, এ সব ছেড়েই দিন। সাধারণ কাজকর্ম করতেই ও সমস্যায় পড়ে যাচ্ছিল।’’ যোগ করেন, ‘‘তার পরে ধীরে ধীরে জগিং শুরু করে। জিমে যাওয়া শুরু করে। ফিরে আসার লড়াই শুরু হয়।’’
ওই সময় দীপিকাও ভেবেছিলেন, তাঁর খেলোয়াড় জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্বামীকে বলতেন, ‘‘মনে হচ্ছে, আমার কেরিয়ার শেষ। আর কি কখনও ধনুক তুলতে পারব না?’’ তার পরে আশার আলো দেখা যায়। গত বছর জাতীয় গেমসে দাপট দেখান দীপিকা। দু’টো সোনা, একটি রুপো আসে এই তিরন্দাজের ঝুলিতে।
অতীতে প্যারিসে দীপিকা বেশ কয়েক বারই সাফল্যের স্বাদ পেয়েছে। ২০২১ বিশ্বকাপে সোনার হ্যাটট্রিক করেছিলেন দীপিকা। দু’টো বিশ্বকাপ রূপোও আছে। দীপিকা বলেছেন, ‘‘আমি বুঝি না, অলিম্পিক্স নিয়ে আমাদের দেশে এত মাতামাতি কেন। অলিম্পিক্স এলেই সবাই তিরন্দাজি নিয়ে কথা বলে। এতে অযথা চাপ তৈরি হয়।’’ যোগ করেন, ‘‘এই প্রতিযোগিতাকে অন্য প্রতিযোগিতার মতোই দেখতে হবে। আমি আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকতে চাই না।’’
দীপিকাদের তিরন্দাজি দল গত কালই এসে পৌঁছেছে প্যারিসে। এসে গিয়েছে হকি দল, রোয়িং দলও। তবে তিরন্দাজিকে ঘিরে কোচ বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় তিরন্দাজি দলের কোরীয় কোচ বায়েক উং কি অলিম্পিক্সে দলের সঙ্গে থাকার ছাড়পত্র পাননি। তিনি
তিরন্দাজি দলের সঙ্গে প্যারিসে পৌঁছেছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে ভারতে ফিরে আসতে হচ্ছে। যে কারণে তিনি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। কোরীয় কোচ জানিয়েছেন, ৩০ অগস্ট চুক্তি শেষ হওয়ার পরে কোচের পদ থেকে ইস্তফা দেবেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘খুব গুরুত্বপূর্ণ সময় আমাকে সরিয়ে দেওয়া হল। অথচ এই অলিম্পিক্সের জন্যই দায়িত্ব নিই।’’