টেনে তুললেন অনুষ্টুপ (বাঁ দিকে) ও শ্রীবৎস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
কে বলে ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’?
সকালই বোঝায়, সারাটা দিন কেমন যাবে— এ প্রবাদ আর যে-ই মেনে নিক, ক্রিকেট ইতিহাস মানবে না। সকালের মেঘ-ঝড়-বৃষ্টির পরেও রোদ ঝলমলে দুপুর-বিকেল বা সকালের উজ্জ্বল ছবির ক্রমশ ব্যর্থতার কুয়াশায় ঢেকে যাওয়ার দৃষ্টান্ত তো আর কম নেই ক্রিকেট মাঠে।
এ প্রবাদ তাই ক্রিকেটে চলে না। ক্রিকেট যে পাহাড়ের জলহাওয়ার মতো ঠিক-ঠিকানাহীন, শনিবার ফের তা বোঝা গেল ইডেনে।
সকালে বাংলার স্কোরবোর্ডে ২০-৩ দেখে অনেকে হয়তো ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। বিকেলের পড়ন্ত রোদে তাঁদের মুখে নিশ্চয়ই হাসি ফুটল, যখন সেই একই স্কোরবোর্ড দেখায় ৩০৫-৫। এক জুটিতেই বদলে গেল ছবিটা। যে জুটি আসলে জোড়া প্রত্যাবর্তনের দুই জমজমাট কিস্সা। এক নায়ক শ্রীবৎস গোস্বামী, অন্যজন অনুষ্টুপ মজুমদার।
প্রথম নামটা তো বেশ শোনা। গত বছর বাংলার শেষ রঞ্জি ম্যাচেও তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ২২৫ রান। কিন্তু বাংলার ক্রিকেট নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের স্মৃতিতে পরের নামটা কি বহু বছর পরে ঝলসে উঠল না?
অনুষ্টুপ মজুমদার। বছর পাঁচেক আগেও যিনি ছিলেন বাংলার ক্রিকেট তারকা। ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকা এই ব্যাটসম্যান শনিবার ইডেনে ফের উজ্জ্বল হয়ে উঠলেন ১০৭ রানের এক অনবদ্য, অপরাজিত কামব্যাক ইনিংসের মাধ্যমে। সকালের প্রবল ঝড়ে ডুবতে থাকা জাহাজকে ফের ভাসিয়ে তুললেন বঙ্গ ক্রিকেটের এই দুই বুড়ো ঘোড়া। চন্দননগরের অনুষ্টুপ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আছেন ১৩ বছর ধরে। লিলুয়ার শ্রীবৎসের হয়ে গেল ৯ বছর। শনিবার এই মিলিত বাইশ বছরের অভিজ্ঞতাই বাঁচাল বংলার সম্মান।
গোয়ার কাছে টস হার। যার জেরে বাংলার ব্যাট করতে নামা। সকালে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় বলের প্রবল নড়াচড়ায় বিভ্রান্ত অভিষেক রামন, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, মনোজ তিওয়ারিরা ফিরে যান মাত্র কুড়ি রানের মধ্যে। ব্যাটিংয়ের আর এক ভরসা অভিমন্যু ঈশ্বরনও চার রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি হাত ছাড়া করে ফিরে যান। তখনই ধাক্কা সামলাতে দলের হাল ধরেন এই দু’জন। জুটিতে ২১৩ রানের অবদানই বাংলাকে যেন আইসিইউ থেকে বার করে আনল। উঠিয়ে বসিয়েও দিল। দিনের শুরুতে গোয়ার বোলিং দাপটে যে শিবির থরথর করে কাঁপতে শুরু করেছিল, বিকেলে সেই শিবির আত্মবিশ্বাসের অক্সিজেনে ভরপুর।
অনুষ্টুপের সঙ্গে ক্রিজে তিন ঘণ্টা ২৬ মিনিটের লড়াই শেষে শ্রীবৎস যখন কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে যান, তখন বাংলা ২৯২-৫। তার আগে অবশ্য তিনবার ক্যাচ তুলেও প্রাণ পেয়েছেন। অফ সিজনে স্কটল্যান্ডে খেলার সুফল এতদিনে পেলেন। এতদিন তেমন রান ছিল না তাঁর। প্রথম দলে তাঁর জায়গা নিয়েই প্রশ্ন ওঠার উপক্রম হয়েছিল। দুঃসময়ে অন্য কারও নয়, নিজেই নিজেকে মোটিভেট করেন বলে জানান ৪০তম প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। বলেন, ‘‘এরকম সময়ে নিজেই নিজের সেরা মোটিভেটর হয়ে উঠতে হয় বলে মনে করি আমি। এ বারও সেটাই করেছি।’’