সফল: ভারতীয় অনূর্ধ্ব ১৯ দলে নতুন তারা অনুকুল। ফাইল চিত্র
প্রথম বিদেশ সফর। তাও আবার ইংল্যান্ডে। কার্ডিফের মাঠে নেমেই মাতিয়ে দিলেন বাঙালি বাঁহাতি স্পিনার অনুকুল রায়। ভারতের যুব দলের এই স্পিনার শুধু যে যুব ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচে আটটা উইকেট নিলেন, তাই নয়, প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ৪৩ রান করে দলকে জেতানও তিনি। ম্যাচের সেরার পুরস্কারও পান।
ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের চলতি ইংল্যান্ড সফরে দ্বিতীয় ম্যাচেও বাজিমাত বিহারের সমস্তিপুরের এই বঙ্গ সন্তানের। ক্যান্টারবারিতে ফের চার উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন-আপে ধস নামালেন সেই অনুকুল। মাত্র দুই ম্যাচেই নজর কেড়ে নিলেন ভারতীয় ক্রিকেট মহলের।
শনিবার হোভে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেখানকার টিম হোটেলে চেক-ইন করার সময় ফোনে অনুকুল বললেন, ‘‘প্রথম বিদেশ সফর আমার। মাঠে নামার আগে বেশ নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম ভালই বোলিং করছি, উইকেট পাচ্ছি, তখন আত্মবিশ্বাসটা ফিরে এল। উইকেটও কিছুটা সাহায্য করেছে। টার্ন পেয়েছি উইকেট থেকে।’’
টিন এজ এই বাঁহাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাডেজার অন্ধ ভক্ত। অনুসরণ করেন তাঁকে। জাডেজার মতো বাঁ হাতে বোলিং ও ব্যাটিং দুটোই করেন। বললেন, ‘‘জাডেজার খেলাই দেখি আমি। খুব ভাল লাগে ওঁকে। ওঁর মতোই হতে চাই আমি।’’ একবার দেখাও হয়েছিল জাডেজার সঙ্গে। সেই গল্প শুনিয়ে অনুকুল বললেন, ‘‘এনসিএ-তে একবার দেখা হয়েছিল ওঁর সঙ্গে। কথাও হয়। স্পটে বল রাখা আর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন বোলিং করার চেষ্টা করার পরামর্শ দেন। সেই চেষ্টাই করি।’’
আরও পড়ুন: সীতা-বন্দির বন দেখে নামছে ভারত
অনুকুলের বাবা সুধাকর রায় সমস্তিপুরে আইনি পেশায় যুক্ত। পরিবারে তেমন ক্রিকেটের পরিবেশ না থাকা সত্ত্বেও ছেলেকে ছোট থেকে ক্রিকেটে উৎসাহ দিয়েছেন। এখন তারই ফল পাচ্ছেন। বিহারে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ তেমন নেই দেখে ছেলেকে পাঠিয়ে দেন চাইবাসায়, যাতে সে ঝাড়খন্ডের হয়ে খেলতে পারে। তার পরেই ঝাড়খন্ড ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পেয়ে যান অনুকুল। সেখানে তাঁর প্রথম কোচ বেঙ্কট রাম এ দিন ফোনে বলেন, ‘‘ও যখন প্রথম অ্যাকাডেমিতে আসে, তখন ওর স্পিনের অ্যাকশনই ঠিক ছিল না। যখন ওকে সেটা শুধরে দিই, তখন খুব তাড়াতাড়ি অ্যাকশন শুধরে নেয় অনুকুল। দ্রুত যে কোনও জিনিস শিখে নিতে পারে ও। এটাই ওর সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট। উন্নতি করার খিদেটাও ওর খুব বেশি। যার ফলে ব্যাটিংয়ে ও খুব উন্নতি করেছে।’’ ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগেও ছাত্রের সঙ্গে কথা হয়েছিল বিহারের এই প্রাক্তন রঞ্জি ক্রিকেটারের। তিনি বলেন, ‘‘ওকে বলেছিলাম, বোলিংটা যেমন করছিস কর। তবে ব্যাট করতে নেমে ফুটওয়ার্কটা সবসময় খেয়াল রাখবি। ও নিশ্চয়ই সেটা মেনেই কার্ডিফে সে দিন ব্যাট করেছে।’’
ভারত সেই ম্যাচে ৭০-৫ হওয়ার পরে ক্রিজে আসেন অনুকুল। সে দিনের সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, ‘‘তখন খুব চাপ ছিল। কিন্তু ঠিক করে নিয়েছিলাম টেনশন করব না। যে রকম ব্যাট করি, সে রকমই করে যাব। স্যারের ফুটওয়ার্কের কথাটাও মাথায় ছিল। তাই করলাম।’’ শেষে ৬০ বল খেলে ৪৩ রান করে অপরাজিত থাকেন অনুকুল। সলমন খানের সঙ্গে ১১৫ পার্টনারশিপে ম্যাচ জেতান।
ব্যাটিং নিয়ে অনুকুলকে সেরা পরামর্শ দিয়েছেন যিনি, তাঁর নাম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ধোনির প্রসঙ্গটা উঠতেই উত্তেজিত অনুকুল বলেন, ‘‘মাহিভাইয়ের সঙ্গে একবার নয়, অনেক বার দেখা হয়েছে। আমাদের ক্যাম্পে এসে একবার আমাকে বলেছিলেন, ‘ব্যাট করার সময় ধৈর্য হারাবি না। ছোট ছোট রান দিয়ে ইনিংস শুরু করে পরে বড় শটে যাবি। ছোট পায়ের ফুটওয়ার্কে খেলবি। অযথা বড় ফুটওয়ার্ক নিতে যাবি না।’ সে দিন কার্ডিফে ব্যাট করার সময় যেন কানে বাজছিল মাহিভাইয়ের সেই কথাগুলো। ওঁর মতো একজন ক্রিকেট কিংবদন্তি থাকলে আমাদের উৎসাহের অভাব হয় না।’’
তবে ধোনির মতো হেলিকপ্টার শট এখনই নয়। বললেন, ‘‘ওটা মাহিভাইয়ের কাছ থেকে পরে শিখব। আগে যুব বিশ্বকাপটা খেলে নিই।’’ আগামী বছরই নিউজিল্যান্ডে যুব বিশ্বকাপ। এখন সেই টুর্নামেন্টে খেলাই লক্ষ্য ভারতীয় ক্রিকেটের এই নতুন বাঙালি উঠতি তারকার।