তাঁর মগজাস্ত্রেই প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় লেস্টার সিটি। মাত্র তিনটে ম্যাচ হেরে ট্রফি তুলে সারা ফুটবলবিশ্বকে চমকে দেয় শেয়ালরা। যে জন্য ফিফার বর্ষসেরা কোচও নির্বাচিত হন তিনি। সেই ঐতিহাসিক মরসুম নিয়ে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিলেন লেস্টার কোচ ক্লদিও র্যানিয়েরি।
প্রশ্ন: ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জেতা কি আপনার কেরিয়ারের সেরা মুহূর্ত?
র্যানিয়েরি: লেস্টারের প্রতিটা প্লেয়ার, স্টাফ, কর্তা, সমর্থক— সবার জন্য সেরা মুহূর্ত ছিল। আমার কেরিয়ারের সেরা মুহূর্তের মধ্যে একটা। প্রতিটা পরিস্থিতি আলাদা হয়। তাই সে রকম ভাবে বেছে বলা মুশকিল।
প্র: লরিয়াস স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পেয়ে কেমন লাগছে?
র্যানিয়েরি: বিশ্বের সেরা পুরস্কারের মধ্যে একটা। খুব গর্ব হচ্ছে মনোনয়ন পেয়ে। লেস্টারের অবিশ্বাস্য কীর্তি বাহবা পেয়েছে, এটাই ভাল লাগছে।
প্র: আপনি এক বেটিং সংস্থাকে গত মরসুম শুরুতে বলেছিলেন লেস্টারের লিগ জেতার সুযোগ ৫০০০-১। আপনি কি সত্যি তখন আশা করেছিলেন চ্যাম্পিয়ন হবেন?
র্যানিয়েরি: মরসুম শুরুতে কেউ ভাবেনি লেস্টারের পক্ষে লিগ জেতা সম্ভব। সত্যি বলতে আমরা সেটা নিয়ে ভাবছিলামও না। আমরা শুধু পয়েন্ট তুলতে চেয়েছিলাম যাতে অবনমন না হয়। কিন্তু দেখলাম অবনমন বাঁচানোর জন্য নির্দিষ্ট পয়েন্ট তোলার পরেও ফুটবলাররা পারফরম্যান্স দিয়ে গিয়েছে। কেউ বিশ্বাস হারায়নি। খুব অদ্ভুত একটা মরসুম ছিল। আরও ভাল ভাবে বললে ম্যাজিকাল। আমরা নিজেদের সুযোগ কাজে লাগিয়েছি।
প্র: শেষ মরসুমের কোন মুহূর্তটা আপনার কাছে সেরা?
র্যানিয়েরি: আমার জন্য সেরা মুহূর্ত ছিল আন্দ্রেয়া বোকেলির (পপ তারকা) পাশে দাঁড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি তোলা। তবে সেই সময়েও পুরোপুরি ব্যাপারটা অনুভব করতে পারিনি। আরও বুড়ো হয়ে যখন আবার মুহূর্তটার কথা ভাবব, দেখব কেমন লাগে।
প্র: দলের কোন জয় সবচেয়ে স্মরণীয় ছিল?
র্যানিয়েরি: আমার মতে গত মরসুমে দু’টো ম্যাচ সবচেয়ে গুরুত্বরপূর্ণ ছিল— ফেব্রুয়ারিতে ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে ৩-১ হারানো। তখন সবাই আন্দাজ করা শুরু করে হয়তো স্পেশ্যাল কিছু করব আমরা। দ্বিতীয়, আর্সেনালের বিরুদ্ধে ১-২ হারা। আমি ভেবেছিলাম, আর্সেনালের মতো দুর্দান্ত একটা দলের যদি আমাদের হারাতে ৯৩ মিনিট লাগে, তা হলে নিশ্চয়ই এই দলের ক্ষমতা আছে স্পেশ্যাল কিছু করার।
প্র: আপনাকে দেখে মনে হচ্ছিল খুব ঠান্ডা মাথা। গোটা বছর কী এ রকম শান্ত থাকতে পেরেছেন?
র্যানিয়েরি: বাইরে দিয়ে দেখে মনে হচ্ছিল আমি খুব ঠান্ডা। কিন্তু ভিতর ভিতর একদমই নয়। আমি চেয়েছিলাম ফুটবলারদের মাথা ঠান্ডা থাকুক। ওরা ভাল পারফরম্যান্স দিক। কিন্তু ওদের উদ্বুদ্ধ করার কোনও সুযোগ পেলে ছাড়তাম না।
প্র: নিজেকে কোন সময় বললেন, এ বার হয়তো চ্যাম্পিয়ন হতে পারব?
র্যানিয়েরি: এডেন হ্যাজার্ড যখন গোল করে টটেনহ্যামের বিরুদ্ধে ২-২ করল। যে রেজাল্টের সৌজন্যে আমরা খেতাব জিতলাম। তার আগে অবধি শুধু ভাবছিলাম প্রতিটা ম্যাচ জিততে হবে।
প্র: আপনার সাফল্যের রহস্য কী?
র্যানিয়েরি: কোনও রহস্য নেই। দলটা দারুণ ছিল। প্রতিটা ম্যাচে নিজেদের সেরাটা দিয়েছে। এত বড় বড় দল থাকা সত্ত্বেও সবার উপরে শেষ করেছে লেস্টার। কিন্তু আমরা যোগ্য ছিলাম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। খুব উত্তেজক একটা মরসুম ছিল।
প্র: প্লেয়ারদের কী বলতে চান?
র্যানিয়েরি: আমার প্লেয়াররা দুর্দান্ত। প্রতিদিন তারা পরিশ্রম করে আরও উন্নতি করতে। দিনের পর দিন নিজেদের সেরাটা দেয়। প্রতিটা ম্যাচের আগে আমি ওদের একটা কথাই বলে থাকি, রেজাল্ট নিয়ে ভাববে না। লড়াই করে যাও। আর ওরা সেটা করে।
প্র: জেইমি ভার্দি আর রিহাদ মাহরেজের মতো ফুটবলারদের খুব কম টাকায় পেয়েছিল দল। এদের সম্বন্ধে কী বলবেন?
র্যানিয়েরি: জেইমি আর রিহাদ খুব ভাল প্লেয়ার কিন্তু আমার কাছে দল বেশি গুরুত্ব পায়। আমরা সফল হয়েছি কারণ জেইমি আর রিহাদের মতো গোটা দল লড়াই করেছে।
প্র: ২০১৬-১৭ মরসুমে আপনার লক্ষ্য কী?
র্যানিয়েরি: জানতাম এই মরসুমে বড় বড় ক্লাবেরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে আর খেতাবের জন্য লড়াই করবে। তাই আমাদের টার্গেট ৪০ পয়েন্ট। গত বারের মতোই চাই টিকে থাকতে লিগে। সেটাই এই মরসুমের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। শেষ মরসুমটা রূপকথা ছিল। এ বারেরটা বাস্তব।
প্র: চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নিয়ে কী বলবেন? কতদূর যেতে পারবে দল?
র্যানিয়েরি: চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটাই লেস্টারের প্রথম মরসুম। লক্ষ্য ছিল ম্যাচ জিতে যতদূর এগোনো যায়। গ্রুপে আমরা শীর্ষে শেষ করেছি। কিন্তু শেষ ষোলোয় সেভিয়ার মতো কঠিন প্রতিপক্ষ অপেক্ষা করছে। তাই আপাতত সেটা নিয়েই ভাবছি।