দ্রাবিড়ের মতো কিপারের ভাবনায় রাহুল

দল নির্বাচনে আজ যত প্রশ্ন ঋষভকে নিয়েই

বৃহস্পতিবার, কলকাতাতেই জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের এক দিনের সিরিজের দল বাছতে বসছেন। যা ইঙ্গিত, সমস্ত নজর থাকবে ঋষভ পন্থের উপরে।

Advertisement

সুমিত ঘোষ 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫২
Share:

মহড়া: ইডেনে অধিনায়ক কোহালির সঙ্গে পন্থ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ইডেনে গোলাপি বলের মহড়ায় তাঁকে বেশ হাসিখুশি আর চনমনেই দেখাচ্ছিল বুধবার। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ অন্য রকম ছবি দেখা গেলে অবাক হওয়ার থাকবে না।

Advertisement

তিনি মানে— ঋষভ পন্থ। অধুনা ভারতীয় ক্রিকেটে শিরোনাম থেকে যাচ্ছেনই না। ইডেনে ভারতের মাটিতে প্রথম দিনরাতের টেস্টের লগ্নে অন্তত ভাবা গিয়েছিল, ঋষভ সাময়িক বিশ্রাম পাবেন। ইডেনের ইতিহাস নিয়েই সকলে ব্যস্ত থাকবে।

কিন্তু সে উপায় কোথায়? আজ, বৃহস্পতিবার, কলকাতাতেই জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের এক দিনের সিরিজের দল বাছতে বসছেন। যা ইঙ্গিত, সমস্ত নজর থাকবে ঋষভ পন্থের উপরে। দুঃস্বপ্নের সাম্প্রতিক ফর্ম তাঁকে দল থেকেও ছিটকে দিতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।

Advertisement

বিশ্বকাপ পরবর্তী অধ্যায়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির উত্তরসূরি ভাবা হচ্ছিল ঋষভকেই। কিন্তু ভারতীয় দলের অন্দরমহলে তাঁর সাম্প্রতিক ব্যর্থতা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। কোনও কিছুই তাঁর ঠিক হচ্ছে না। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে যেমন উইকেটকিপার হিসেবে সমালোচিত হয়েছেন, তেমনই ব্যাট হাতেও কিছু করে উঠতে পারেননি। তিন ম্যাচে করেছেন ৩৩ রান। সর্বোচ্চ ২৭। গড় ১৬.৫০। উইকেটকিপার হিসেবে তেমনই উইকেটের সামনে থেকে বল ধরে স্টাম্পিং করতে যাওয়ার মতো শিশুসুলভ ভুল করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে মোক্ষম সময়ে ব্যাট চালিয়ে আউট হয়ে দলকে বিপদের মধ্যে ফেলেছেন। তা নিয়ে ড্রেসিংরুমে ধমকও খেয়েছেন।

দলের মধ্যেই একটা মত ঘুরছে যে, আপাতত জাতীয় দল থেকে বিরতি দরকার ঋষভের। না হলে এ ভাবেই ভুল করে যেতে থাকবেন এবং ততই তাঁর আত্মবিশ্বাস তলানিতে যেতে থাকবে। প্রয়োজনে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে গিয়ে নিজের খুঁত মেরামত করে আসুন তিনি। ক্রিকেট মহলে যদিও এই ব্যাখ্যার বিপরীত মতও রয়েছে। যুবরাজ সিংহের মতো প্রাক্তন বলেছেন, ঋষভকে খোলা মনে খেলতে দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তাঁর মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটারকে সমর্থন করা উচিত। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ চলাকালীন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রোহিত শর্মা সাংবাদিকদের কাছে আবেদন করেন, তাঁরা যেন সারাক্ষণ ঋষভকে অণুবীক্ষণের তলায় না ফেলেন। তাতে তাঁর খেলায় আরওই প্রভাব পড়বে। তবে রোহিত যা-ই বলুন, চলমান হাওয়া যে বড় সাংঘাতিক, ঋষভ দ্রুতই টের পেতে পারেন। এবং টের পেতে পারেন ঋদ্ধিমান সাহার শহরে এসে।

ঋষভকে নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে আকর্ষণীয় মোড় এসে যেতে পারে দেশের অন্যান্য উইকেটকিপারদের জীবনে। এত দিন মনে করা হচ্ছিল, ধোনির উত্তরাধিকারী হয়েই গিয়েছেন রুরকির তরুণ প্রতিভা। কে জানত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সেঞ্চুরি করে আসার পরেও তাঁর মাথার উপরে এমন অপ্রত্যাশিত মেঘ এসে জড়ো হবে। এমনকি, ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপের সময়েও প্রাথমিক ভাবে তিনি যখন দলে জায়গা পাননি, দেশ জুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। পরে ঋষভ বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পান আহত শিখর ধওয়নের জায়গায়।

সেটা ছিল জুন। এটা নভেম্বর। মাত্র চার মাসের ব্যবধানে ঋষভ পন্থের জীবনের চাকা যেন একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে। আর তেমনই অন্ধকার পেরিয়ে আলোর খোঁজ পেয়েছেন ঋদ্ধিমান সাহা। ঘরের মাঠ ইডেনে ঐতিহাসিক টেস্টে খেলতে নামবেন একমাত্র বাঙালি হিসেবে। চোটের জন্য আঠারো মাস বাইরে থাকার সময় যা ভাবাই যাচ্ছিল না। সেই সময় উল্কার বেগে ছুটছিলেন ঋষভ। ফিরে এসে শুধু পন্থের থেকে টেস্টের জায়গাই ছিনিয়ে নেননি, কারও কারও মনে এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে যে, সাদা বলেও এক বার ঋদ্ধিকে দেখলে কেমন হয়? এঁদের মত, ‘‘ঋদ্ধির কিপিং দুর্ধর্ষ। এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা উইকেটকিপার। আর ব্যাটিং নিয়ে যতই যা বলা হোক, মোটেও খারাপ নয়। তিনটে টেস্ট সেঞ্চুরি আছে যাঁর, তিনি খুব খারাপ ব্যাটসম্যান কী করে হবেন?’’

সাধারণ পরিস্থিতিতে, নির্বাচনী বৈঠকে ঋষভ পন্থের বদলি বেছে নিতে হলে ঋদ্ধিকে নিয়ে খুব জোরালো আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অধিনায়ক থাকাকালীন যেমন রাহুল দ্রাবিড়কে দিয়ে ওয়ান ডে ক্রিকেটে কিপিং করিয়েছিলেন, তেমনই বিরাট কোহালির দলে কে এল রাহুলকে একই ভূমিকায় ব্যবহার করা যায় কি না, সেই কথা বেশি করে উঠছে। রাহুল আইপিএলে কিপিং করেছেন। সময় দিলে কুড়ি ওভারের ম্যাচে তিনি তৈরি হয়ে যাবেন বলে মনে করা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান বা অলরাউন্ডার খেলাতে পারবে দল। এমনিতেই শিখর ধওয়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। পর-পর দু’বছরে দু’টি কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ রয়েছে। সেই দু’টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ধওয়নকে দেখতে পাওয়া কঠিন। টি-টোয়েন্টি দলে রাহুলকে দিয়ে কিপিং করানোর সম্ভাবনা জোরালো। কিন্তু বৃহস্পতিবারের দল নির্বাচনী বৈঠক ওয়ান ডে দল বাছার। সেখানে সত্যিই যদি ঋষভকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, কে নেবেন তাঁর জায়গা? সঞ্জু স্যামসনের কথা তুলতে পারেন কেউ কেউ। সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি দলে ঢুকেছেন রাজস্থান রয়্যালসের স্যামসন। কিন্তু তাঁর উইকেটকিপিং নাকি ঋষভের চেয়েও খারাপ! আবার ধোনিও এই মুহূর্তে ক্রিকেটে ফিরতে আগ্রহী নন।

খুব যোগ্য কিপার কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এই কারণে কখনও ওয়ান ডে দলের জন্য বিবেচিত না হওয়া ঋদ্ধিমানের নাম অভাবনীয় ভাবে সভায় উঠে পড়লে অবাক হওয়ার নেই। বিদায়ী চেয়ারম্যান এম এস কে প্রসাদ আবার কয়েক মাস ধরে দক্ষিণের কে এস ভরতের নাম বলে আসছেন। উইকেটকিপিং নৈপুণ্য প্রাধান্য পেলে ভরতের নাম ফের তুলতে পারেন প্রসাদ। যদিও প্রশ্ন থেকে যায়, সামনের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বা ২০২৩-এ পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপের কথা মাথায় রাখলে ঋষভ পন্থকে নকশার বাইরে রাখা কি আদৌ বুদ্ধিমানের কাজ হবে? বরং ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলিয়ে আত্মবিশ্বাস ফেরোনার সুযোগ দিলেই কি ঠিক কাজ হত না? কারও কারও মতে, বাদ গেলেও আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরবেন পন্থ।

গোলাপি-ধাঁধা বোঝার জন্য আরও এক দিন অপেক্ষা করতে হবে। ঋষভ-রহস্য সমাধান হয়ে যাবে আজই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement