আগ্রাসী ক্রিকেটেই ইডেন মাতাবেন, বলছেন মর্গ্যান

তিনি ভাবতেই পারছেন না, তাঁর দল হঠাৎ এত ভাল খেলছে কী করে।ইয়ন মর্গ্যান। যাঁকে ১১ মাস আগেই বলে দেওয়া হয়েছিল ওয়ান ডে ও টি টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব নিতে। মর্গ্যান রাজি হয়েছিলেন একটাই শর্তে। তাঁকে স্বাধীনতা দিতে হবে। ম্যাচের এগারো বাছাইয়ের ব্যাপারে সিলেক্টররা জ্ঞান দিতে পারবেন না।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৬
Share:

শহরে পা রয়, মইনদের। বৃহস্পতিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

তিনি ভাবতেই পারছেন না, তাঁর দল হঠাৎ এত ভাল খেলছে কী করে।

Advertisement

ইয়ন মর্গ্যান। যাঁকে ১১ মাস আগেই বলে দেওয়া হয়েছিল ওয়ান ডে ও টি টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব নিতে।

মর্গ্যান রাজি হয়েছিলেন একটাই শর্তে। তাঁকে স্বাধীনতা দিতে হবে। ম্যাচের এগারো বাছাইয়ের ব্যাপারে সিলেক্টররা জ্ঞান দিতে পারবেন না।

Advertisement

সেই মর্গ্যানই নাকি পল কলিংউডকে এই দলের সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ইসিবি-কে। কলিংউডের নেতৃত্বেই যে ইংল্যান্ড ২০১০-এ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে। তাঁর সেই অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগবে বলেই কলিংউডকে দলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া।

কিন্তু বুধবার ফিরোজ শাহ কোটলায় যে পারফরম্যান্স দেখান তাঁর দলের ছেলেরা, তা তাঁর কাছে অপ্রত্যাশিতই বলে জানান মর্গ্যান।

বৃহস্পতিবার সকালে নিজের দেশের মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিস্ময় প্রকাশ না করে আর থাকতে পারেননি ইংরেজ ক্যাপ্টেন। এ দিন সকালে টিম হোটেলে বসে তিনি বলেন, ‘‘সাদা বলের ক্রিকেটে যে আমরা এতটা ভাল খেলতে পারি, তা ভাবতেই পারিনি। বিশ্বাস করুন, আমার এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। যাদের বাছা হয়েছে, তারা যে এই টুর্নামেন্টে এসে শিক্ষা নিয়ে এখানেই তা কাজে লাগিয়ে এতটা ভাল খেলে দেবে, সত্যিই ভাবা যায়নি।’’

এই জেসন রয়, অ্যালেক্স হেলস, ডেভিড উইলিদের এক বছর আগে পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপে দলে জায়গাই দেওয়া হয়নি। সেটা যে ভুল হয়েছিল, তা স্বীকার করে নিয়েই ব্রিটিশ মিডিয়াকে মর্গ্যান বলেন, ‘‘সে তো এখানে এসেই ওরা প্রমাণ করে দিয়েছে। সাউদি, বোল্টকে না খেলিয়ে যেমন নিউজিল্যান্ড ভুল করেছে, তেমন গত বছর বিশ্বকাপেও আমাদের ভুল হয়েছিল ওদের বাইরে রেখে।’’

গত বছর পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপে যে বেহাল দশা হয়েছিল ইংল্যান্ডের, তার পর এই টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে তাদের ধর্তব্যের মধ্যেই আনেনি গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। এমনকী শেষ চারেও রাখা হয়নি তাঁদের। যদিও প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘ইংল্যান্ডকে নজরে রাখবেন। ওরা কিন্তু চমক দিতে পারে।’’

যে আগ্রাসী ক্রিকেট সে দিন মর্গ্যানরা কোটলায় দেখাল, সেই ক্রিকেট দেখে বেশ অবাক প্রাক্তন ভারতীয় পেস বোলার মদনলাল। জর্ডন, স্টোকসদের আগ্রাসী বোলিংয়ে মুগ্ধ মদনলাল এ দিন বলেন, ‘‘শেষ পাঁচ ওভারে ওরা যে ভাবে বোলিং করেছে, সে রকম আগ্রাসী বোলিং আর কোনও দলের পেসারদের ডেথ ওভারে করতে দেখিনি। প্রথম থেকেই ওরা সে দিন লাইন-লেংথ রেখে বল করছিল। কিন্তু শেষ পাঁচ ওভারে যা করল, অভাবনীয়। ইয়র্কার, সুইং, অফ কাটার সব দিয়েছে। আমার বিশ্বাস ফাইনালেও ওরা একই কৌশল অবলম্বন করবে।’’

শুধু বোলিংই নয়, আগ্রাসন ব্যাটিংয়েও। জেসন রয় সে দিন প্রথম ওভারে কোরি অ্যান্ডারসনকে পরপর চারটে বাউন্ডারি হাঁকিয়েই সে দিন তা শুরুতেই বুঝিয়ে দেন। পরে রয় সাফ সাফ জানিয়েও দেন, ‘‘এই আগ্রাসী ক্রিকেটটা আমরা ফাইনালেও খেলব। এর জন্য উইকেট কেমন, সেটা বড় কথা নয়।’’

পরিসংখ্যান বলছে গত একডজন টি টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্যে ন’টাই ইংল্যান্ড জিতেছে এবং তা মূলত তাঁদের ব্যাটিংয়ে আগ্রাসনের কারণেই। সেই জন্যই মর্গ্যান এ দিন বলে দেন, ‘‘ছেলেদের বলে দিয়েছি, মাঠে নেমে নিয়মের মধ্যে থেকে নিজেদের যতটা পারো মেলে ধরো। দ্বিধা কোরো না। তার ফলই এখন পাচ্ছি। ফাইনালেও এই ভয়ডরহীন ক্রিকেটই দেখাব আমরা।’’

ইংল্যান্ডই এই বিশ্বকাপে খেলা একমাত্র দল, যাদের ক্রিকেটাররা বেশিরভাগই আইপিএলে খেলেন না। তা সত্ত্বেও ভারতে এসে এখানকার কন্ডিশনে কী ভাবে মানিয়ে নিতে পারছেন, এটাও কম বিস্ময়ের ব্যাপার নয়।’’ এই ব্যাপারে প্রাক্তন ভারতীয় উইকেট কিপার কিরণ মোরে মনে করেন, ‘‘এটা ওদের হোমওয়ার্কের জন্য। আমার মনে হয়, ওরা আমাদের দেশের আবহাওয়া, উইকেট, আউটফিল্ড নিয়ে এত ভাল হোমওয়ার্ক করে এসেছে যে ওদের মানিয়ে নিতে বেশি সময় লাগেনি। সে জন্যই তো ওদের প্রথম দিকটা অসুবিধা হচ্ছিল। শেষের দিকে দারুণ এগোচ্ছে।’’

শুরুতেই ইংল্যান্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ছ’উইকেটে হারে। সে দিন মূলত ক্রিস গেইলের ব্যাটের ঝড়ে উড়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। পরের ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২৩০ রান তাড়া করে জেতে তারা। কার পর আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে হারাতে অসুবিধা হয়নি ইংরেজদের। শেষ সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড।

জেসন রয় মনে করেন, ‘‘এটা আমাদের পরিশ্রমের ফল। নেটে কতটা পরিশ্রম করছি, তার উপর নির্ভর করে অনেক কিছু। আর মানসিক শক্তি বজায় রাখাটাও খুব জরুরি ব্যাপার। এটাই আমরা করেছি।’’

আর পল কলিংউড, যিনি ছ’বছর আগে ইংল্যান্ডকে এই খেতাব এনে দিয়েছিলেন, তিনি বলছেন, এ বারের দলটা নাকি সেবারের থেকেও ভাল। বিবিসি-কে তিনি বলেছেন, ‘‘এরা কতটা ভাল খেলতে পারে, তার কোনও সীমা নেই। এদের নেটে পরিশ্রমেরও কোনও সীমা নেই। আমাদের দলের ছেলেরা বোধহয় এতটা পরিশ্রম করত না। আর ইয়ন যে ভাবে ছেলেদের উদ্বুদ্ধ করছে, তারও জবাব নেই। এ বারের দলটারও তাই বিশ্বকাপ জেতা উচিত।’’

ইংল্যান্ডের ক্রিকেট মহল এখন বিশ্বজয়ের স্বপ্নে বিভোর। মাইকেল ভন, স্টুয়ার্ট ব্রড, জেমস অ্যান্ডারসন, কেভিন পিটারসেন— সবাই মিলে প্রশংসার পুষ্পবৃষ্টি করছেন এখন মর্গ্যানদের উপর। এবং এটাই তাঁদের শক্তি বাড়াবে বলে বিশ্বাস রয়ের। বললেন, ‘‘বিশ্বকাপের আগে তো কেউ আমাদের পাশে ছিল না। এখন নিশ্চয়ই অনেককে আমাদের পাশে পাব। সবার শুভেচ্ছা আমাদের শক্তি বাড়াবে।’’

বৃহস্পতিবার রাতে এক রাশ আফসোস নিয়ে কলকাতায় পা রাখলেন ইয়ন মর্গ্যানরা। আফসোসটা এই নিয়ে যে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচটা দেখা হল না তাঁদের। ম্যাচের সময় তাঁরা ছিলেন আকাশে। সকালেই মর্গ্যান বলেন, ‘‘যাদের সঙ্গে ফাইনাল খেলতে হবে, তাদের ম্যাচটা দেখতে পারলে ভাল হত। কিন্তু শিডিউল এমনই যে তা আর হবে না। তবে এটাও ঠিক যে আমরা দিনটা ভাল বিশ্রাম পেয়ে গেলাম। যেটা আমাদের দরকার ছিল। ম্যাচটা আমরা কলকাতায় গিয়ে পরেও দেখে নিতে পারব। কিন্তু এই বিশ্রামটা খুবই কাজে লাগবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement