রাজকীয়: দুরন্ত জয়ের পরে ডাচেস অব কেমব্রিজ ক্যাথরিন পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন জোকোভিচকে।
বছর শুরুই হয়েছিল চরম বিতর্কের আবহে। কোভিড টিকা না নেওয়া নিয়ে মেলবোর্নে পৌঁছেও তাঁকে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছিল নিজের দেশ সার্বিয়ায়।
ফরাসি ওপেনের মঞ্চে নিজেকে নতুন ভাবে মেলে ধরার অভিযানও রয়ে গিয়েছিল অসম্পূর্ণ। রোলঁ গারোজের একচ্ছত্র সম্রাট রাফায়েল নাদালের কাছে হার মেনে বিদায় প্যারিস থেকে। রবিবার সেন্টার কোর্টে সেই স্পেনীয় মহাতারকার সঙ্গে ফের দেখা হওয়ার সুযোগ পেলে কি পাল্টা জবাব এমন রাজকীয় মেজাজেই ফিরিয়ে দিতেন নোভাক জোকোভিচ?
অস্ট্রেলীয় তারকা নিক কিরিয়সকে উড়িয়ে দিয়ে টানা চতুর্থ বারের জন্য উইম্বলডন ট্রফি জয়ের পরে কিন্তু বিশ্বের তিন নম্বর তারকার গলায় শোনা গেল অন্য সুর। যিনি স্বীকারই করে ফেললেন, সেন্টার কোর্টে দাঁড়িয়ে হাতে তোলা এই ট্রফির গুরুত্ব তাঁর কাছে ঠিক কতটা। জোকোভিচ বলেছেন, “কী বলব, সেই ভাষাটাই হারিয়ে যাচ্ছে। এই ট্রফির মূল্য যে আমার কাছে কতটা, তা বলার ক্ষমতা নেই। সেন্টার কোর্ট আমার হৃদয়ে বরাবর অন্য একটা অনুভূতি নিয়ে আসে।” আবেগাপ্লুত নোভাকের মনে পড়ে যাচ্ছে শৈশবের নানা স্মৃতি। নিজের দেশ সার্বিয়ায় পাহাড়ের মাথায় এক ছোট্ট রিসর্টে টেলিভিশনের সামনে বসে কিংবদন্তি পিট সাম্প্রাসের খেলা দেখার ঘটনা। যিনি এ দিন স্পর্শ করে ফেললেন কিংবদন্তি মার্কিন টেনিস ব্যক্তিত্বের অল ইংল্যান্ড ক্লাবে সাত বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কীর্তি। জোকোভিচের কথায়, “সাম্প্রাসের জয় দেখার পরে মা-বাবাকে বলেছিলাম আমাকে একটা র্যাকেট কিনে দেওয়ার জন্য।”
পেশাদার টেনিস-গ্রহে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রজার ফেডেরারের ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের কীর্তিও এ দিন ম্লান হয়ে গিয়েছে তাঁর জয়ে। নোভাক বলেছেন, “সেটাই ছিল টেনিস নিয়ে আমার ভালবাসার প্রথম ধাপ। বুঝতে শিখেছিলাম, এই খেলাটা ঠিক কেমন। প্রত্যেক মুহূর্তে পিটের সেই জয়ের মুহূর্ত আমাকে অনুপ্রাণিত করে দিয়েছে আরও ভাল কিছু করার জন্য। সেই স্বপ্নের ট্রফি আরও এক বার হাতে তুলে নিয়ে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে।”
চলতি বছরে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ট্রফি জিতে জোকোভিচ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যদের। বলেছেন, “আমার বাবা-মা, মেয়ে, সকলেই এখানে রয়েছে। তবে মেয়ের বয়স এখনও পাঁচ বছর হয়নি বলে ও গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার সুযোগ পায়নি। আগামী বছর ও গ্যালারিতে বসে বাবার টেনিস খেলার সাক্ষী থাকতে পারবে।” স্ত্রী ইয়েলেনার জন্য তাঁর বার্তা, “বিবাহবার্ষিকীতে আমার তরফে এটা তোমাকে দেওয়া উপহার। শুভ বিবাহবার্ষিকী জানাই তোমাকে।”
টানা চার বার উইম্বলডন জয়ের ফাঁকেই প্রতিপক্ষ কিরিয়সকেও অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি নোভাক। বলেছেন, “নিক আজ আবারও প্রমাণ হল কেন তুমি বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাক। আমি বিশ্বাস করি, তুমি আবার ফিরে আসবে। সেটা শুধু এই উইম্বলডনেই নয়, যে কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম মঞ্চের ফাইনালে তোমাকে দেখতে পাব।” রসিকতা করে বলেছেন, “নিকের সঙ্গে কথা হয়েছিল, যে জিতবে ডিনারের খরচ দেবে। মনে হয়, নিক এই কারণে ম্যাচটা হেরে গেল। কিন্তু এও জানিয়ে রাখি, তোমাকে আমি সম্মান করি। আশা করব, আজ রাতের পর থেকে আমাদের মধ্যে আমার একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হবে। ভবিষ্যতে তোমার সাফল্যের জন্য এখন থেকে আগাম অভিনন্দন জানিয়ে রাখলাম।”