ডার্বি জয়ের পরের দিন লাল-হলুদে বীরপুজো

উৎসবের মাঝে কোচের চোখ চার্চিল ম্যাচে

চলতি মাসের শুরুতে টানা তিন ম্যাচ হারের পরে ইস্টবেঙ্গল কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস-সহ গোটা দলকে লাল গোলাপ দিয়ে গাঁধীগিরি করেছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১৪
Share:

উচ্ছ্বাস: কোচ আলেসান্দ্রোকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরা। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

গাঁধীগিরি থেকে বীরপুজোয় মাততে সময় লাগল মাত্র ১০-১২ দিন!

Advertisement

চলতি মাসের শুরুতে টানা তিন ম্যাচ হারের পরে ইস্টবেঙ্গল কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস-সহ গোটা দলকে লাল গোলাপ দিয়ে গাঁধীগিরি করেছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। ডার্বি জয়ের পরের দিন সকালে সেই সমর্থকরাই দলে দলে হাজির। তবে এ বার আর গাঁধীগিরির নয়। সোমবার বৃষ্টিভেজা সকালে যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা হাজির বীরপুজোর জন্য। হাতে রসগোল্লার বড় হাঁড়ি ও লাল-হলুদ গোলাপ।

আই লিগে এই মুহূর্তে সাত ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে ছয় নম্বরে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু ডার্বি জয়ের আনন্দে এ দিন সকালের অনুশীলনে রসগোল্লা বিতরণ করেন সমর্থকরা। যে রসগোল্লা প্রথম বার চেখে ইস্টবেঙ্গলের গুরুগম্ভীর স্পেনীয় কোচও বলে গেলেন, ‘‘বাপরে! কী মিষ্টি! একদম তোমাদের মতোই।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘রবিবারের ডার্বি জয় আমার কাছে একটা বিশেষ দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আমাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের কাছ থেকে তিন পয়েন্ট পেয়ে দারুণ লাগছে।’’

Advertisement

সাড়ে ৩২ মাস পরে ডার্বিতে মোহনবাগানকে হারানোর পরে সোমবার সকালেই দলের অনুশীলন ডেকেছিলেন আলেসান্দ্রো। তবে এ দিন ইস্টবেঙ্গল অনুশীলন গত কয়েক দিনের মতো সবার নজর এড়িয়ে হয়নি। কালো পর্দা খুলে নেওয়া হয়েছিল। অবাধ প্রবেশাধিকার ছিল সাংবাদিকদের। অনুশীলনের পরেই ডার্বি জয়ের দুই নায়ক লালডানমাউইয়া রালতে এবং জবি জাস্টিন-সহ কোচ আলেসান্দ্রো ও গোটা ইস্টবেঙ্গল দলকে লাল-হলুদ গোলাপ দিয়ে বীরপুজো শুরু করে দেন সমর্থকরা। একে একে খেলোয়াড় ও কোচ-সহ দলের সবাইকে রসগোল্লা খাওয়ান তাঁরা। যা খেয়ে হাসতে হাসতে যুবভারতী ছাড়েন জনি আকোস্তা, বোরখা গোমেস পেরেস, হাইমে স্যান্টোস কোলাদোরা।

তবে ডার্বি জয়ের এই আনন্দের মাঝেও ইস্টবেঙ্গল কোচ দলকে মনোনিবেশ করাচ্ছেন পরের চার্চিল ব্রাদার্স ম্যাচের জন্য। বৃহস্পতিবারের যে ম্যাচ খেলতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দলবল নিয়ে গোয়া উড়ে যাবেন আলেসান্দ্রো। তার আগে আলেসান্দ্রো বলছেন, ‘‘ডার্বি জয় দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। এ বার ডার্বি ভুলে পরের চার্চিল ব্রাদার্স ম্যাচের জন্য ছেলেদের মনোনিবেশ করতে বলেছি। কারণ ফের নতুন করে শুরু করতে হবে। ওই ম্যাচ থেকেও আমাদের তিন পয়েন্ট চাই।’’

তবে এই জয় ইস্টবেঙ্গলকে আই লিগ খেতাব হাতে তোলার জন্য এগিয়ে দেবে কি না তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ ইস্টবেঙ্গল শিবির। অধিনায়ক লালরিনডিকা রালতে বলছেন, ‘‘আই লিগ জয় অনেক দূরের ব্যাপার। আমরা এখন ম্যাচ প্রতি পরিকল্পনা করছি। আজ থেকে বড় ম্যাচ ভুলে চার্চিলের বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট আনাটাই পাখির চোখ গোটা দলের।’’

ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক এ দিন অনুশীলনের পরে লাল-হলুদ শিবিরের ডার্বি জয়ের কিছু অজানা রণনীতির তথ্য দিয়ে যান। তাঁর কথায়, ‘‘মোহনবাগান গোল করার পরে ছেলেদের বলেছিলাম আজ আমরা হারব না। কলকাতা লিগের ডার্বিতে দুই গোলে পিছিয়ে থেকে ২-২ করেছিলাম। এ বারও গোল শোধ হবে। এর কিছু পরেই লালডানমাউইয়ার সমতায় ফেরানোটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।’’ তাঁর দেশোয়ালি ভাই ও ডার্বির জোড়া গোলের নায়ক ডানমাউইয়া সম্পর্কে ডিকা বলে যান, ‘‘ডানমাউইয়া কর্নার মারতে যেত। কিন্তু ম্যাচের আগে কোচকে বলেছিলাম, ওকে কর্নার মারতে না পাঠিয়ে বিপক্ষ বক্সে রেখে দেওয়ার জন্য। কোচ তার পরে রণনীতি সেই অনুযায়ী পরিবর্তন করেন। আর ডানমাউইয়াও জোড়া গোল করে ফিরেছে।’’ দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগানের ম্যাচে ফিরে আসা সম্পর্কে ডিকা আরও বলেন, ‘‘বিরতিতেই ছেলেদের বলেছিলাম, ১-২ পিছিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগান মরণ-কামড় দেবে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু ৩-১ এগিয়ে গিয়ে আমরা আত্মতুষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। সেই সুযোগে ম্যাচে ফেরে মোহনবাগান। এই ভুল আর করা চলবে না।’’

এ দিন অনুশীলনে বড় ম্যাচের আর এক গোলদাতা জবি জাস্টিন একটু চুপচাপ ছিলেন। আই লিগে পাঁচ গোল করা এই মালয়ালি খেলোয়াড়ের অবশ্য জাতীয় দলে ডাক না পাওয়ায় আক্ষেপ নেই। বলছেন, ‘‘লাল-হলুদ জার্সি গায়ে নিজের খেলা মেলে ধরতে চাই। ভারতীয় দলে ডাকলে ভাল। না হলে যত বেশি সম্ভব গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে জিতিয়েই সেই আক্ষেপ মেটাতে চাই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement