সারা দিনে এটাই ছিল নাগপুরের ছবি। ছবি: রয়টার্স।
আতঙ্কের নাম জামথার বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের বাইশ গজ। বুধবার সারা দিনে ১২ উইকেট পড়া দেখে যাঁরা পিচের চরিত্র নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, তখন বোধহয় মুচকি হাসছিলেন পিচ কিউরেটর। পিচের চরিত্র বোঝার যে তখনও অনেক বাকি! দিনের প্রথম ১৩ ওভারের মধ্যে বাকি প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের সাবাড় করে যখন লাঞ্চে যাচ্ছে টিম ইন্ডিয়া, তখনও সবাই ভাবছিল ভারতীয় স্পিনে পর্যুদস্ত হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চলতি টেস্ট জেতা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু ভুল ভাঙল পরবর্তী ৪৬ ওভারে। এ বার ইমরান তাহিরের লেগস্পিনে বিধ্বস্ত হল ধবন-বিজয়দের ব্যটিং। স্পিন অস্ত্রই ব্যুমেরাং হয়ে দেখা দিল ভারতের সামনে।
বুধবার সন্ধ্যায় দশ ওভার, আর বৃহস্পতিবার সকালে ১৩.১ ওভার। সাকুল্যে মোট ২৩.১ ওভারেই শেষ হয়ে গেল বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দলের ব্যাটিং। সৌজন্যে সেই অশ্বিন-জাডেজা স্পিন। যাঁদের দাপটে মাত্র ৭৯ রানেই গুটিয়ে গেল আমলা-ডে’ভিলিয়ার্সদের লম্বা ব্যাটিং লাইন আপ। অশ্বিনের পাঁচটার পাশাপাশি জাডেজা নিলেন চার উইকেট। একটি উইকেট পেলেন অমিত মিশ্র। অর্থাত্ প্রোটিয়া ইনিংসের সবক’টি উইকেটই গেল স্পিনারদের দখলে।
ঘূর্ণি পিচে আমলারা কতটা বেমানান, বুধবার সন্ধ্যাতেই তার কিছুটা প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল। সকাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডারের নটরাজ নৃত্য যেন বার বার বলে দিচ্ছিল, গ্রিন টপেই খেলেই সেরার তকমা পেয়েছে তারা। এক ডুমিনি বাদে সবাই স্পিনের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই আউট হয়ে গেলেন। ডুমিনির পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ন’নম্বরে নামা হার্মারের। অশ্বিন-জাডেজা অবস্থা এমনই করে ফেলেন যে, ৩ ওভারের বেশি হাত ঘোরাতে পারলেন না অমিত মিশ্রও।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ডিজাইনার পিচে থমকাল ভারতীয় ব্যাটিংও। তাহিরের পাঁচ-সহ সাত ভারতীয় ব্যাটসম্যান আউট হলেন স্পিনারদের হাতে। এবং ভারতের ইনিংস শেষ হল ১৭৯ রানে। ৩০৩ রানের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে অবশ্য এখনই দু’উইকেট খুইয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বুধবার বিকেলের মতোই আউট হয়েছেন ভ্যান জিল এবং নাইট ওয়াচম্যান ইমরান তাহির।
বৃহস্পতিবারের নাগপুর অবশ্য বেশ কয়েকটি রেকর্ডের সাক্ষী থাকল। ১২ রানের মধ্যে অর্ধেক প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান আউট হয়ে ভেঙে দিল শতাধিক বছরের পুরনো রেকর্ড। ১৯০২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৪ রানে অর্ধেক দল আউট হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। ভারতের বিরুদ্ধেও সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড করলেন আমলারা। ১৯৯০ সালে চণ্ডীগড়ে ৮২ রানে শেষ হয়েছিল তারা।
অঘটন না ঘটলে ভারত হয়ত এই টেস্ট জিতে যাবে। সিরিজও জিতবে। কিন্তু দিনের শেষে সেই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রিকেটমহলে। এই ধরনের পিচ কি আদৌ কোনও উপকার করছে ভারতীয় ক্রিকেটের?