পুণে সিটির সেনোরিতা নোংপ্লু (বাঁ-দিকে)। ছবি: টুইটার।
পুণের স্পাইসার্সে সে পড়ে ক্লাস সেভেনে।
ফুটবল ছাড়াও ভালবাসে টেবল টেনিস ও ব্যাডমিন্টন।
কিন্তু পড়ার টেবিলের থেকেও তার বেশি পছন্দ ফুটবল মাঠ। পরীক্ষায় বসার থেকেও তার ভাল লাগে ডিফেন্ডারদের ড্রিবল করতে।
হতে পারে তার বয়স মাত্র বারো। কিন্তু ফুটবলের প্রতি অদম্য ভালবাসার জন্যই সে নেমে গিয়েছে বড় বড় দিদিদের বিরুদ্ধে খেলতে। তার নাম সেনোরিতা নোংপ্লু। এ বারেই চালু হওয়া প্রথম মহিলাদের জাতীয় লিগে পুণে সিটির কনিষ্ঠতম ফুটবলার ছিল সেনোরিতা।
এফসি পুণে সিটির ছোট্ট স্ট্রাইকারকে ফোনে ধরার সময় তার গলায় তখন উচ্ছ্বাস। সেনোরিতা বলছে, ‘‘আমি ফুটবল খুব ভালবাসি। আমার ভাইকে দেখতাম মাঠে খেলতে। তখন ইচ্ছা হয়েছিল আমিও খেলব। স্কুলের দলেই প্রথম শুরু করি। স্কুলের শিক্ষিকারাও অনেক উৎসাহ দিয়েছিলেন।’’
সাধারণত বারো বছর মানে কোনও ফুটবলার কিশোর-কিশোরীদের টুর্নামেন্টেই খেলতে পারে। আর নয়তো সবেমাত্র অ্যাকাডেমিতে ঢুকে ফুটবল খেলা শিখছে। কিন্তু সেনোরিতা সকলের থেকে আলাদা। এই বয়সে তার জাতীয় লিগের স্বাদ পাওয়া হয়ে গিয়েছে। রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে অধিকাংশ ম্যাচে নামলেও দলের ফরোয়ার্ড লাইনের দায়িত্ব সামলেছে সে বেশ কয়েকটি ম্যাচে।
জাতীয় পর্যায়ের কোনও ফুটবল টুর্নামেন্টে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। কারও কারও মনে পড়ে যেতে পারে মুম্বইয়ের সচিন তেন্ডুলকরের কথা। সচিন ছিলেন ক্রিকেটের বিস্ময় বালক। সেনোরিতা কি মুম্বইয়ের প্রতিবেশী পুণে থেকে আসা ফুটবলের বিস্ময় বালিকা? সময়ই এর উত্তর দেবে। তবে এটুকু বলা যেতেই পারে যে, ভারতীয় ফুটবল মহলে হইচই ফেলে দিয়েছে সেনোরিতা।
ভয় লাগে না বয়সে অনেক বড় দিদিদের কড়া ট্যাকলের মুখে পড়তে হবে বলে? সেনোরিতাকে জিজ্ঞেস করায় চটপট উত্তর দিয়ে দেয়, ‘‘আমি সব সময় চেয়েছিলাম স্ট্রাইকারে খেলতে। গোল করতে আমার ভাল লাগে। আমি লিওনেল মেসির ভক্ত। মেসিকে যখন দেখি তিন-চারজনকে কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, আমারও খুব ইচ্ছে করে ও রকম খেলতে।’’
তার পরিবার মেঘালয়ের। কিন্তু সেনোরিতা জন্মেছে পুণেতে। বাবা স্কুল শিক্ষক। তার পছন্দের বিষয় সাধারণ জ্ঞান। কিন্তু বাবা সব সময় চেয়েছেন মেয়ে ফুটবল খেলুক। ‘‘ফুটবলার হওয়ার জন্য যা যা সাহায্য দরকার করেছেন বাবা। পুণে সিটিও আমাকে সুযোগ দিল বেমবেম দেবীর মতো বড় ফুটবলারের বিরুদ্ধে খেলার,’’ বলছে সেনোরিতা।
কয়েক দিন আগেই মহিলাদের জাতীয় লিগ জিতেছে ইস্টার্ন স্পোর্টিং ইউনিয়ন। পুণে শেষ করেছে চতুর্থ স্থানে। কিন্তু সেই সব দূরে রেখে সেনোরিতার স্বপ্ন কোনও একদিন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামবে। ‘‘আমি খেলা-পাগল মেয়ে। ফুটবল শুধু নয়, টেবল টেনিস, ব্যাডমিন্টনও খেলি। কিন্তু ফুটবলকেই আমার কেরিয়ার করতে চাই। ভারতের জার্সি গায়ে খেলতে চাই।’’
কিশোরীর চপলতা নিয়ে ছোট্ট সেনোরিতা স্বপ্নের দৌড় শুরু করে দিয়েছে। থামার কোনও ইচ্ছেই নেই।