তালা টুডু
তালা টুডু সাধারণ মেয়ে। আর সে কারণেই তাঁর প্রিয় লেখকের নাম শরত্চন্দ্র। শরত্চন্দ্রের লেখা পড়তে গিয়ে তাঁর মনে হয়, তাঁর মতো সাঁওতালি সমাজের আরও হাজার হাজার মেয়ের কাছে তিনি পৌঁছে দেবেন শরত্চন্দ্রকে। আর এই ভাবনা থেকেই সাধারণ মেয়েটি করে ফেলেছেন এক ‘অসাধারণ কাজ’। সাঁওতালিতে অনুবাদ করেছেন শরত্চন্দ্রের ‘পরিণীতা’।
তালা জামশেদপুরের টাটা মেন হাসপাতালের নার্স। এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে তাঁর সংসার। কাজের ফাঁকেই অনুবাদ করেছেন ‘পরিণীতা’। সাঁওতালি ভাষায় বইটির নাম ‘বাপলানিজ’। আর এই উপন্যাসই তাঁকে এনে দিয়েছে এ বছরের ‘অনুবাদ সাহিত্যে’ সাহিত্য অকাদেমি পুরষ্কার। তাঁর কথায় “গত কালই দিল্লি থেকে ফোন করে জানিয়েছে, বাপালানীজের জন্য আমি এবার অনুবাদ সাহিত্যে পুরস্কার পাচ্ছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এটাই প্রথম অনুবাদ। প্রথম কাজের এমন স্বীকৃতি পাব, ভাবিনি।”
পুরো দস্তুর সংসার ও নার্সের মতো ব্যস্ত পেশা সামলিয়ে লেখার সময় কী ভাবে বের করেন? বছর বিয়াল্লিশের তালা টুডুর বক্তব্য, লেখার নির্দিষ্ট কোনও সময় ছিল না। হাসপাতালে মর্নিং ডিউটি থেকে শুরু করে নাইট ডিউটি সবই করতে হয়। হাসপাতালে সকালে ডিউটি থাকলে রাত জেগে লেখেন। সংসার ও হাসপাতালের কাজের মধ্যেও সব সময় পরিণীতার ‘ললিতা’ তাঁকে টানত। তাঁর দাবি, ‘‘ললিতাই যেন লেখার টেবিলে বসিয়ে দিত।”
তালাদেবী এই সাফল্যকে ভাগ করতে চান তাঁর স্বামী, আইনজীবী গনেশ টুডুর সঙ্গে। তাঁর হাত ধরে শরত্চন্দ্রের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। শরৎচন্দ্রের এই একনিষ্ঠ ভক্ত জানাচ্ছেন, পরিণীতাতেই থামবেন না তিনি। বড়দিদি, দত্তা, চরিত্রহীন, রামের সুমতিও তাঁর প্রিয়। সুযোগ পেলে এই সব উপন্যাসও অনুবাদ করতে চান।