আগের থেকে সময়টা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। এখন এগিয়ে এসে নিজের কথা বলার, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে কিছুটা। ফলে যৌন হেনস্থার শিকারদের জন্য এখনও পরিস্থিতিটা সহজ না হলেও, আগের থেকে কম কঠিন বলাই চলে।
যৌন হেনস্থার প্রতিবাদের ক্ষেত্রে একটা বড় বাধা হল পরিবার। বহু ক্ষেত্রেই আক্রান্তকে পরিবারই চেপে রাখতে বলে নির্যাতনের কথা। অভিযোগকারী মহিলাদের এবং তাঁদের পরিবারের নামও প্রকাশ করা হয় না কোনও সংবাদমাধ্যমে। কারণ এ এক এমন ‘অপরাধ’, যেখানে কি না আক্রান্তেরই সামাজিক সম্মান নিয়ে সঙ্কট দেখা দেয়। এত কাল পরিস্থিতি এমনই ছিল। এখন উল্টো পক্ষের স্বরও কিছুটা চড়ানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সমাজের একটি প্রভাবশালী অংশ এখন অন্তত জোর গলায় বলতে পারছে, নির্যাতিতার চরিত্রহনন বন্ধ করা প্রয়োজন। যৌন নির্যাতিতাদের ‘কলঙ্কিত’ হওয়ার যে একটা সামাজিক চাপ কাজ করে, এর ফলে সেই ভাবনায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসছে। যার প্রতিফলন হিসেবে দেখা গিয়েছে সমাজমাধ্যমে ‘#মিটু’ বা ‘#আমিও’ আন্দোলন।
কয়েক বছর আগেও ভাবা যেত না, এক জন মহিলা নিজের যৌন হেনস্থার কথা নিজেই তুলে ধরবেন সমাজের দরবারে। ওই আন্দোলন তা সম্ভব করেছে। সাধারণ বাড়ির মেয়ে, বউ থেকে হলিউডের নামী তারকা— গলা চড়িয়ে নির্যাতনের কথা বলতে দেখা গিয়েছে তাঁদের সকলকে। মহিলাদের যৌন হেনস্থা এবং তা চেপে রেখে যন্ত্রণা, গোটা বিশ্বে এই সমস্যার আকার কতটা বিপুল, দেখিয়েছে ‘#মিটু’। আসলে সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তার অনেকটা বড় ভূমিকা আছে এই সামাজিক ভাবনার পরিবর্তনের পিছনে। আগে নিজের কথা বৃহত্তর সমাজের নজরে আনতে গেলে ভরসা করতে হত সংবাদপত্র বা টেলিভিশনের উপরে। নিজের হেনস্থার ইতিবৃত্ত সংবাদমাধ্যমে জানানোর মতো সাহস কিংবা আত্মবিশ্বাস ক’জনেরই বা থাকে! এখন নিজের ঘরের কোণে বসে স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটারে লিখে ফেলা যায় সেই সব কঠিন অভিজ্ঞতার কথা। জানিয়ে দেওয়া যায় কাছের এবং দূরের বন্ধুদের। যৌন নিগ্রহের কথাও অন্যান্য নির্যাতনের মতো সকলকে জানানোর বিষয়টি প্রচলিত হয়ে গেলেও যে সমস্যা মিটে যাবে, এমন নয়। আগামী দিনে এই আন্দোলনের পথ কী হবে, সেটা দেখার। কিন্তু এ কথাও ঠিক, কষ্ট চেপে রাখার যন্ত্রণা থেকেও তো কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায় এ ভাবে। তার পরে আসে আইনি সাহায্যের প্রসঙ্গ।
এই যে কষ্টের অভিজ্ঞতার কথা মুখে আনতে পারার সাহস ধীরে ধীরে হচ্ছে আক্রান্তদের, তাতে নতুন করে পারিবারিক লজ্জা বাড়ার কোনও কারণ নেই। বরং এই মহিলাদের সাহস দেখে এ বার একটু ধাক্কা লাগুক আরও কিছু পরিবারের। সামাজিক সম্মানের নাম করে নিজেদের মেয়েকে আরও কষ্টের দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রহসন বন্ধ হওয়া খুব জরুরি। যুগ যুগ ধরে চলে আসা পারিবারিক অত্যাচার শেষ হতে হবে তো কখনও। ফলে যে মেয়ে নির্যাতনের পরেও নিজের পরিচয় ঢেকে রাখতে না চেয়ে নিজের কথা বলতে এগিয়ে আসেন, তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে আরও সাহস জোগানো একটা বড় সামাজিক কর্তব্য।