মাছের বাজারে চলছে সেই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার। শিলিগুড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
দার্জিলিং-গ্যাংটক প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ পুরোপুরি বর্জন করতে পারলেও শিলিগুড়ি কেন পিছু হটবে? পুরসভা-প্রশাসনের তরফে গড়িমসির সুযোগে যদি শহরের ‘প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফ্রি জোন’ হিসেবে থাকা মুকুট কেড়ে নিতে চাওয়া হয়, তা হলে শহরবাসীরা সকলে কী চুপ করে বসে থাকবেন? এমন নানা প্রশ্নেই এখন আলোড়িত শিলিগুড়ির জনজীবন। শুধু তা-ই নয়, সুপ্রিম কোর্টের গ্রিন ট্রাইবুনালের যে রায়ের অপব্যাখ্যা হচ্ছে কি না সেই প্রশ্নেও খোলা মঞ্চে বিতর্কের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শহরপ্রেমীরা।
এই অবস্থায়, শিলিগুড়ির অর্জিত সুনামহানির জন্য আদালতের রায়ের একাংশকে সামনে রেখে একটি মহলের সক্রিয়তার ব্যাপারে জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুন্যালের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন শিলিগুড়ি পুরসভার পরিবেশ বিভাগের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটক। বুধবার সুজয়বাবু তাঁর পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছেন, গ্রিন ট্রাইবুনালের রায়ের একাংশকে সামনে রেখে শহরে ফের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ চালু করার সম্মতি মিলেছে বলে দাবি করছেন কয়েকজন প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নির্মাতা। অথচ ওই রায়ে স্পষ্ট ভাবে লেখা রয়েছে, গ্রিন বেঞ্চ ‘ইকো সেন্সিটিভ জোন’-এ সমস্ত ধরনের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের বিপক্ষে। ওই রায়ে এটাও বলা হয়েছে, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নির্মাতা সংস্থাগুলির সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে ওই সব এলাকায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ যাতে ব্যবহার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। শিলিগুড়ি পুর এলাকায় ফের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ চালু হওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠী তৎপর হওয়ায় উদ্বিগ্ন দার্জিলিং ও সিকিমের পরিবেশপ্রেমীরা। সিকিম, দার্জিলিঙের পরিবেশপ্রেমীদের তরফে জানানো হয়েছে, শিলিগুড়ির উপর দিয়েই পাহাড়ে যাতায়াত করতে হয়। ফলে, শিলিগুড়িতে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফের চালু হলে পাহাড়েও তার কুপ্রভাব পড়তে পারে। দার্জিলিং ও সিকিমের একাধিক পরিবেশপ্রেমী সংস্থাও গ্রিন ট্রাইবুনালের দ্বারস্থ হবে বলে জানিয়েছে।
একদা ‘প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর’ হিসেবে রাজ্যে শিরোপা পেয়েছিল শিলিগুড়ি। সেই পথে হেঁটেছে জলপাইগুড়ি, রায়গঞ্জ সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ জনপদ। এখন অন্যত্র প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ। কিন্তু, শিলিগুড়ির বাজারে তা জাঁকিয়ে বসতে চলেছে জেনে উদ্বিগ্ন জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসুও। তিনি বলেন, “শিলিগুড়িতে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধ হয়েছিল। ওই আইনের সাহায্যেই জলপাইগুড়িতেও সব ধরণের প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করাতে উদ্যোগী হয়েছিলাম।” তাঁর আশঙ্কা, শিলিগুড়ির ক্ষেত্রে আইন নিয়ে কোনও শিথিলতা তৈরি হলে, পাশের শহর জলপাইগুড়িতেও ফের রমরমিয়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার শুরু হয়ে যেতে পারে।
রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, “আমরাও পুর এলাকায় পাস্টিক ক্যারিব্যাগ, থার্মোকল ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছি। সাধারণ মানুষও সাহায্য করছেন। এটা সব জায়গায় মানা উচিত।” আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের তরফে ল্যারি বসু জানান, জনস্বার্থের চেয়েও বড় কিছু হতে পারে না। তিনি বলেন, “শিলিগুড়ি একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তা নিয়ে গ্রিন ট্রাইবুনালে কী রায় হয়েছে সেটা ওয়েবসাইটেই রয়েছে। সেখানে কোথাও বলা হয়নি শহরে ফের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ চলু করা হোক। বরং, বিচারপতিরা ইকো সেন্সিটিভ জোনে সব ধরনের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধ করা জরুরি বলে মত দিয়েছেন। ওই মতামতকে সামনে রেখেই তো শহরে পুরসভা-প্রশাসনের তরফে মাইকে প্রচার হওয়া দরকার।”
শিলিগুড়িতে পুরসভা-প্রশাসন কবে প্রচারে নামে সেটাই এখন দেখার বিষয়।