কিছু ব্যবসায়ীর উদ্যোগে ফের শিলিগুড়িতে বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। নিজস্ব চিত্র।
শিলিগুড়িতে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফের চালু রুখতে আসরে নামতে গড়িমসি হচ্ছে, এই অভিযোগে ঘরে-বাইরে রাজ্য সরকারের সমালোচনা ক্রমশ বাড়ছে। কেন, পুরসভার তরফে মাইক নিয়ে প্রচার চালিয়ে নতুন করে নির্দেশিকা চালু হবে সে কথা বলা হচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন বাসিন্দারা। এই অবস্থায়, শিলিগুড়ি পুর এলাকা ও মহকুমার সর্বত্র যাতে কোনও ধরনের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করা না হয়, সে জন্য কঠোর নির্দেশিকা চালু করার আশ্বাস দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বুধবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর শাখা সচিবালয়ে গৌতমবাবু বলেন, “গ্রিন ট্রাইবুনাল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের শিলিগুড়িতে প্লাস্টিক ক্যারিবাগের ব্যবহার ও বিক্রির নির্দেশিকা আপাতত নিষ্ক্রিয় রেখেছে। গতকাল আমার সঙ্গে রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারের বিস্তারিত কথা হয়েছে। উনি পরিবেশ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অফিসারদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত প্রক্রিয়া মেনে সব ধরনের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা হবে।”
গত ২০০৩ সালে সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ শিলিগুড়ি মহকুমা এবং পুর এলাকায় প্লাস্টিক ক্যারিবাগের পরিবহণ, ব্যবহার, বিক্রি পুরোপুরি নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে দেয়। প্রায় ১১ বছর ওই নির্দেশিকা জারি ছিল।
বছর দু’য়েক আগে নর্থবেঙ্গল প্লাস্টিক উৎপাদনকারী এবং ডিলারদের ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এক সদস্য দিল্লির গ্রিন ট্রাইবুনালে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। দুই বছর মামলাটি চলার পর গত ২৯ সেপ্টেম্বর গ্রিন ট্রাইবুনালের প্রিন্সিপাল বেঞ্চ একটি রায় দেন। সেখানে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকায় কিছু পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা বলা হয়। তাতে পর্ষদকে নতুন করে সমস্ত আইন মেনে জনশুনানি করে বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ দেওয়া হবে বলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী আশ্বাস দেন। কিন্তু, সেই প্রক্রিয়া শুরু হতে গড়িমসি হওয়ায় শহরে নানা প্রশ্ন ওঠে।
ইতিমধ্যে প্লাস্টিক ব্যবসায়ীদের সংগঠনের মুখপাত্র রতন বিহানি দাবি করেন, শহরে এখন ৪০ মাইক্রনের উপরে থাকা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিরঞ্জন সাহার দাবি, গ্রিন ট্রাইবুনাল কখনও শিলিগুড়িতে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফের চালুর অনুমতি দেয়নি। ঘটনাচক্রে, গ্রিন ট্রাইবুনালে শিলিগুড়ি পুরসভার তরফে নিরঞ্জনবাবুও সওয়াল করেছিলেন। নিরঞ্জনবাবু বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের গ্রিন ট্রাইবুনালে রায়ের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে কি না সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া দরকার। এ ব্যাপারে শিলিগুড়ি থেকে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। গ্রিন ট্রাইবুনালকে সব জানানো হবে।”
পর্ষদ সূত্রের খবর, বুধবারও কলকাতায় শিলিগুড়ির বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে ঠিক হয়েছে, ট্রাইবুনালের নির্দেশ মেনে নির্দেশিকা জারি করা হবে ঠিকই। তবে তা যাতে আগামীদিনে কোনও আদালত বা ফোরামে ‘চ্যালেঞ্জে’র মুখে না পড়ে তা দেখা হবে। এই জন্য পর্ষদের আইনজীবীরা বিভিন্ন মামলার রায়, আইন ঘেঁটে দেখে নির্দেশিকা তৈরি করতে চাইছেন। তাতে কিছুদিন সময় লাগতে পারে বলে পর্ষদের অফিসারদের দাবি। আর শহর জুড়ে নতুন করে বেআইনি ক্যারিবাগের রমরমা নিয়ে মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “সমস্ত কিছুর উপরেই আমরা লক্ষ্য রাখছি। আইন মেনে আইনগত যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেওয়া হবে।”