বাঁ দিকে, কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের মেলার মাঠে ফেলা হয়েছে শহরের আবর্জনা। ডান দিকে, সাফাই অভিযানে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। —নিজস্ব চিত্র।
শহর পরিষ্কার রাখতে পুলিশ ও পুরসভাকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার পথে নেমেছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। স্লোগান ছিল ‘কিপ শিলিগুড়ি ক্লিন’। কিন্তু শুরুতেই ধাক্কা খেল সেই অভিযান। শহরের নানা এলাকার আবর্জনা তুলে শহরেরই কেন্দ্রস্থলে ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম চত্বরে এনে ফেলায় বিতর্ক সৃষ্টি হল গোটা শহর জুড়ে। এই ঘটনায় স্তম্ভিত শিলিগুড়ির মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, এরকম ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।
স্টেডিয়াম কমিটি থেকে শুরু করে আশেপাশের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরাও ঘটনায় উদ্বিগ্ন। এই এলাকায় একাধিক নার্সিংহোম রয়েছে। এই ভাবে শহরের আবর্জনা এখানে এনে ফেলে রাখায় তা থেকে দূষণ ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন তাঁরা। স্টেডিয়ামের ওই অংশে সাইয়ের শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা। সেখানে আবর্জনা স্তূপীকৃত করে ফেলে রাখায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। স্টেডিয়াম কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা তথা শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপরতন ঘোষ বলেন, “কেন ওখানে আবর্জনা ফেলা হল বুঝতে পারছি না। পুরসভাকেই ওই আবর্জনা দ্রুত সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।” ওই এলাকার একটি নার্সিংহোমের কর্ণধার পীযূষ রায় বিষয়টি জানতে পেরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “এ ভাবে শহরের আবর্জনা ওই জায়গায় ফেলে রাখা হবে কেন বুঝতে পারছি না। তা থেকে দূষণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।” পুরসভায় প্রশাসক বোর্ড বসার পর কাউন্সিলররা পদ থেকে সরে দাঁড়ানোয় সাধারণ মানুষ এ সব নিয়ে কার কাছে অভিযোগ জানাবেন সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “স্টেডিয়ামের মেলার মাঠে আবর্জনা ফেলার কথা নয়। কেন এমন হবে খোঁজ নিচ্ছি। সেখানে সাইকেল, বাইক পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল।” পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়ার দাবি, তিনিও বিষয়টি জানেন না। তাঁর কথায়, “ওই জায়গায় আবর্জনা ফেলা হয়েছে বলে জানা নেই। খোঁজ নিচ্ছি।” পুর কর্মীদের একাংশ জানান, বিশ্বকর্মা পুজোর দিন বলে আবর্জনা ফেলার ট্রাক এ দিন চলেনি। তাতেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রাক্তন মেয়র মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “সুষ্ঠু পরিকল্পনা না নিয়ে হুটহাট কাজ করলে এমনই হওয়ার কথা। অতীতে তো কখনও এমন হয়নি। আমার তো মনে হয়, বিশ্বকর্মা পুজোর কথা মাথায় রেখে আগাম পরিকল্পনা নেওয়া উচিত ছিল। ভাড়ার ট্রাক ছাড়া আবর্জনা ফেলার জন্য পুরসভার নিজস্ব কয়েকটি গাড়ি রয়েছে। পরিকল্পনা করে আবর্জনা ফেলার পর সেগুলি পুজোর জন্য বন্ধ করা হলে এই সমস্যা হতো না।” প্রাক্তন মেয়র অভিযোগ করেন, শহরের সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়েছে। গৌতমবাবু অবশ্য বলেন, “শহরের বাজারগুলি সাফ রাখতে ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের সচেতন করা হচ্ছে। শুধু এক সপ্তাহ ধরে নয়, বছর জুড়ে প্রচার চালানো হবে। শহর পরিষ্কার রাখতে সকলকেই আসতে হবে।” এ দিন বিধান মার্কেট, ক্ষুদিরামপল্লি ফল বাজার ও সব্জি বাজারে প্রচার অভিযান চলে। পথ নাটক হয়। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলররাও। পদে না থাকলেও তাঁদের ডেকে পুর অভিযানে সামিল করার মধ্যে ভোটের রাজনীতিও দেখছেন বিরোধীরা।