‘আইরাস’ এবং ‘জিজিএসই-৪’। দুই উপগ্রহের মধ্যে ধুন্ধুমার সংঘর্ষ বৃহস্পতিবার ভোরে।
না, কোনও ভাবেই রুখতে পারব না আমরা। ধুন্ধুমার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে চলেছে পৃথিবীর কক্ষপথে। চিরতরে ঘুমিয়ে পড়া দু’টি উপগ্রহের মধ্যে।
সেই ভয়ঙ্কর ধাক্কাধাক্কি লাগতে পারে ভারতীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোরে। এই শীতে কলকাতায় যখন আলো ফুটবে না। দু’টি উপগ্রহের মধ্যে সেই ভয়ঙ্কর ধাক্কাধাক্কি লাগবে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৯০০ কিলোমিটার বা ৫৬০ মাইল উপরে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন মাটি থেকে যতটা উপরে (প্রায় ৪০৮ কিলোমিটার) প্রদক্ষিণ করছে পৃথিবীর কক্ষপথে, তার দ্বিগুণের কিছুটা বেশি উচ্চতায়।
মহাকাশের আবর্জনার উপর নিয়মিত নজরদারি চালায় যারা সেই স্পেস ডেব্রি ট্র্যাকিং সার্ভিস ‘লিওল্যাব্স’ বুধবার ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে এই খবর দিয়েছে। নাসার তরফেও এই খবর সমর্থন করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, ওই সংঘর্ষের ফলে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে তুলনায় হাল্কা উপগ্রহটি। তার ফলে, পৃথিবীর কক্ষপথের একাংশে ‘স্পেস ডেব্রি’ বা মহাকাশের ধূলিকণার বিশাল একটি মেঘের জন্ম হবে। গতিপথে পড়লে যে মেঘ কোনও মহাকাশযানের পক্ষে হয়ে উঠতে পারে অত্যন্ত বিপজ্জনক।
বৃহস্পতিবার ভোরে দু’টি উপগ্রহের মধ্যে দূরত্ব কমে হতে পারে ৫০ ফুটও!
নাসাও জানিয়েছে, ভারতীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৯ মিনিট নাগাদ দু’টি উপগ্রহের মধ্যে দূরত্ব কমে যাবে সবচেয়ে বেশি। দাঁড়াবে বড়জোর ১৫ মিটার থেকে ৩০ মিটারে। বা, ৪৯ ফুট থেকে ৯৮ ফুটের মধ্যে। মাটি থেকে একটা চার বা আট তলার বাড়ির ছাদটা থাকে যতটা উঁচুতে।
‘মহাকাশে দু’টি বস্তু এতটা কাছাকাছি চলে এলে তা যথেষ্টই বিপজ্জনক’’, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। উৎক্ষেপণের পর সব সময় নজর রাখা হয়, কোনও উপগ্রহ বা কোনও মহাকাশ-আবর্জনা অথবা কোনও মহাজাগতিক বস্তু যেন মহাকাশযান থেকে ৬০ কিলোমিটার বা তার কম দূরত্বে এসে না পড়ে। তা হলে তা মহাকাশযানের পক্ষে হয়ে উঠবে অত্যন্ত বিপজ্জনক।
বৃহস্পতিবার ভোরে পৃথিবীর কক্ষপথে যে পথ ধরে এগবে ‘আইরাস’ এবং ‘জিজিএসই-৪’।
একটি কক্ষপথে গিয়েছিল ৩৭ বছর আগে, অন্যটি ৫৩ বছরের পুরনো
‘লিওল্যাব্স’-এর একটি সূত্র জানাচ্ছে, যে দু’টি উপগ্রহের মধ্যে ভয়ঙ্কর ধাক্কাধাক্কি লাগতে চলেছে, তার একটির নাম- ‘আইরাস’। যার উৎক্ষেপণ হয়েছিল আজ থেকে ৩৭ বছর আগে। ১৯৮৩-তে। জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে উপগ্রহটি ঘুমিয়ে পড়েছিল (‘ডিকমিশন্ড) বেশ কয়েক বছর আগেই। অন্য উপগ্রহটির নাম- ‘জিজিএসই-৪’। ৫৩ বছর আগে যার উৎক্ষেপণ হয়েছিল, ১৯৬৩-তে। এটি মূলত ছিল একটি সামরিক উপগ্রহ। তবে বিজ্ঞান গবেষণার জন্যও তাতে ছিল একটি ‘পে-লোড’।
আরও পড়ুন- কলকাতার শীত এ বার নোবেলবর্ষী, শহরের লাভ হল কি!
‘লিওল্যাব্স’-এর সূত্রটির খবর, কোঅর্ডিনেটেড ইউনিভার্সাল টাইম (ইউটিসি) অনুযায়ী পৃথিবীর কক্ষপথে ওই দু’টি উপগ্রহের মধ্যে ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ হতে পারে বুধবার রাত ১১টা ৩৯ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড নাগাদ। ভারতীয় সময়ে আগামী কাল, বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৯ মিনিটে। ওই সময় পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুমিয়ে পড়া দু’টি উপগ্রহের মধ্যে দূরত্ব হবে বড়জোর ৪৯ ফুট থেকে ৯৮ ফুটের মধ্যে। কোনও কারণে সেই ধাক্কাধাক্কি না হলে আর দু’-এক দিনের মধ্যেই হতে চলেছে সেই ধুন্ধুমার সংঘর্ষ।
সেই দৈত্যাকার উপগ্রহ ‘আইরাস’। লম্বায় সাড়ে ১১ ফুট, উচ্চতায় সাড়ে ৬ ফুটেরও বেশি।
আমরা এখন আর রুখতে পারব না সেই সংঘর্ষ! বলছে নাসা
ওয়াশিংটনে নাসার সদর দফতরে ‘পাথফাইন্ডার মিশনে’র অন্যতম সদস্য জ্যোতির্বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষ বলছেন, ‘‘এই সংঘর্ষ আমাদের পক্ষে কোনও ভাবেই রোখা সম্ভব নয়। কারণ, দু’টি উপগ্রহই বেশ কয়েক বছর আগে চিরতরে ঘুমিয়ে পড়েছে। ফলে, কোনও দেশের কোনও মহাকাশ সংস্থার গ্রাউন্ড কন্ট্রোল থেকে ‘সিগন্যাল’ পাঠিয়ে আর দু’টি উপগ্রহের কোনওটিরই গতিপথ বদলে দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই সংঘর্ষের মতো অনিবার্য পরিণতির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই। পৃথিবীর কক্ষপথে রয়েছে এমন অনেক ঘুমিয়ে পড়া উপগ্রহ। অনন্তকাল ধরে পৃথিবীর কক্ষপথেই তাদের প্রদক্ষিণ করে যেতে হবে। আচমকা অন্য কোনও উপগ্রহ বা গ্রহাণু, উল্কাপিণ্ড অথবা ধূমকেতুর মতো কোনও মহাজাগতিক বস্তুর সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি না হলে। তবে এর আগে পৃথিবীর কক্ষপথে দু’টি ঘুমিয়ে পড়া উপগ্রহ এত কাছাকাছি এসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে বলে আমার অন্তত জানা নেই।’’
‘লিওল্যাব্স’-এর সূত্রটি জানাচ্ছে, দু’টি উপগ্রহের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি লাগার সম্ভাবনা যথেষ্টই জোরালো। ১০০টি ঘটনার মধ্যে ১টি। ঘুমিয়ে পড়া দু’টি উপগ্রহের একটি তো যথেষ্টই ভারী।
আরও পড়ুন- বিশ্বকে ঘিরে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের ধোঁয়া, তীব্র আশঙ্কায় ভারতও
দু’টি উপগ্রহের ওজন ও গতিবেগ
উৎক্ষেপণের সময় ‘আইরাস’-এর ওজন ছিল ১ হাজার ৮৩ কিলোগ্রাম। যা লম্বায় সাড়ে ১১ ফুটেরও বেশি। চওড়ায় সাড়ে ১০ ফুট। আর উচ্চতায় সাড়ে ৬ ফুটের কিছু বেশি।
উপগ্রহ ‘জিজিএসই-৪’।
তুলনায় অনেকটাই হাল্কা ‘জিজিএসই-৪’। উৎক্ষেপণের সময় যার ওজন ছিল ৮৫ কিলোগ্রাম।
দু’টি উপগ্রহ পৃথিবীর কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছে যথেষ্ট গতিবেগে। তাদের আপেক্ষিক গতিবেগ সেকেন্ডে সাড়ে ১৪ কিলোমিটারেরও বেশি।
ছবি সৌজন্যে: নাসা