-ফাইল ছবি।
সাধের ফুল আর খুব একটা নজর না কাড়া পরাগরেণুই হয়ে উঠতে পারে ভয়ঙ্কর বিপদের কারণ।
এই অতিমারির সময়ে তাই কোনও গাছের খুব কাছ ঘেঁষে দাঁড়াবেন না। গাছে ফুল থাকলে বরং একটু দূরে দূরে থাকাই ভাল। শুধু মানুষই নয়, বাতাসে সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে পরাগরেণু। ভাইরাসটি বাতাসে যতটা দূর পর্যন্ত ভেসে থাকতে পারে, পরাগরেণুর ‘ডানা’য় ভর করে তা আরও বেশি দূরত্বে ছড়িয়ে পড়তে পারছে। আর সেই গাছপালা যদি থাকে কোনও বাজার এলাকায় তা হলে তো আরও বিপদ। সে ক্ষেত্রে এক জন থেকে অন্য জনে সংক্রমণ আরও দ্রুত গতিতে ছড়াবে। ছড়াবে আরও বেশি পরিমাণে।
গত দেড় বছরের অতিমারি পর্বে সার্স-কভ-২ ভাইরাস নিয়ে যত রকমের গবেষণা হয়েছে ও হয়ে চলেছে, তার সবক’টি থেকে একেবারেই অন্য রকমের একটি গবেষণা এই উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘ফিজিক্স অব ফ্লুইড্স’-এ।
অন্য গবেষণাগুলির বেশির ভাগেরই অভিমুখ ছিল ভাইরাসটি এক জন মানুষ থেকে কী ভাবে অন্য জনে সংক্রমিত হয়, হয় সেটা খুঁজে বার করা, না হলে সেই ভাইরাসটি বাতাসবাহী কি না, হলে বাতাসে কতটা দূর পর্যন্ত ভেসে থাকতে পারে তা খতিয়ে দেখা, জানা। সার্স-কভ-২ আদতে বাতাসবাহী কি না, তা নিয়েও গত বছরের গোড়ার দিকে সংশয় ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‘হু’)-র। পরে তারা জানায়, ভাইরাসটি বাতাসবাহী। তবে বাতাসে কতটা দূর পর্যন্ত ভেসে থাকতে পারে ভাইরাসটি তা নিয়ে এখনও ‘নানা মুনির নানা মত’ বিজ্ঞানীমহলে।
এই গবেষণাই প্রথম জানাল, বাতাসে সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে আরও অনেক দূর পর্যন্ত ভেসে যেতে তার ‘ডানা’ পেতে দেয় পরাগরেণু।
আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে করোনা সংক্রমণের হার এবং সেই সব জায়গায় বাতাসে ভেসে থাকা পরাগরেণুর পরিমাণ (ঘনত্ব)-এর মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। তাঁরা দেখেছেন, যেখানকার বাতাসে পরাগরেণুর ঘনত্ব বেশি, সেখানে সংক্রমণের হারও বেশি হয়েছে, হয়ে চলেছে।
গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, কোনও একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি পরাগরেণু বহন করে অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে কয়েকশো সার্স-কভ-২ ভাইরাস কণাকে। যেখানে বাতাসের প্রতি ঘন মিটার আয়তনে কোনও গাছ ছড়িয়ে দিতে পারে অন্তত দেড় হাজার পরাগরেণু।
এই হিসাবই বলে দিচ্ছে, গাছের কাছাকাছি কী সামান্য পরিমাণ বাতাসে কী পরিমাণ ভাইরাস বহন করে চলেছে পরাগরেণু। একটি উইলো গাছ থেকে কতটা পরাগরেণু ছড়ায়, কম্পিউটারে তা খতিয়ে দেখেছেন গবেষকরা। তাঁরা দেখেছেন, ১০ থেকে ১০০ জনের জমায়েতে সার্স-কভ-২ ভাইরাস বহনকারী অন্তত ১০ হাজার পরাগরেণু আছড়ে পড়তে পারে।