গত মার্চ মাসে মারা গিয়েছেন হকিং। কৃষ্ণগহ্বরের রহস্য নিয়ে তাঁর গবেষণা দীর্ঘ। —ফাইল চিত্র।
মৃত্যুর কয়েক দিন আগেই গবেষণার কাজ শেষ হয়েছিল। স্টিফেন হকিংয়ের সেই অপ্রকাশিত শেষ গবেষণাপত্রটি তাঁর সহকর্মীদের উদ্যোগে ছাপা হল ‘এআরএক্সআইভি’ নামে একটি প্রি-প্রিন্ট জার্নালে।
গত মার্চ মাসে মারা গিয়েছেন হকিং। কৃষ্ণগহ্বরের রহস্য নিয়ে তাঁর গবেষণা দীর্ঘ। তাঁর তৃতীয় এই গবেষণাপত্রটিতে রয়েছে ব্ল্যাকহোল তথা কৃষ্ণগহ্বরের রহস্য নিয়ে নয়া ধারণা। যদিও বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, হকিংয়ের এই তত্ত্ব ‘কোয়ান্টাম মেকানিকস’-এর নীতি ভঙ্গ করছে।
তারায় তারায় সংঘর্ষ হলে তৈরি হয় কৃষ্ণগহ্বর। জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার ক্লাসিক্যাল তত্ত্ব বলে, কৃষ্ণগহ্বরের মহাকর্ষ বল এতই শক্তিশালী যে সেই টান ফাঁকি দেওয়ার উপায় নেই কারও। সবই গিলে ফেলতে পারে সে। এমনকি আলোও। একে ঘিরে থেকে ঘটনা-দিগন্ত বা ‘ইভেন্ট হরাইজন’, যেখানে স্থান-কালও দুমড়ে মিলিয়ে যায়। এবং কৃষ্ণগহ্বরগুলি যত যা গিলেছে তার সবই, থেকে যায় তার পেটে। এবং সেই সব বস্তুর ইতিহাস তথা যাবতীয় বৃত্তান্ত বা তথ্যও থেকে যায় সেখানে। কিছুই হারায় না।
কিন্তু ১৯৭০ সালে হকিং দাবি করেন, কৃষ্ণগহ্বরের নিজস্ব তাপমাত্রা আছে। আছে কণাদের অস্থিরতার পরিমাপ বা ‘এনট্রপি’। এবং কৃষ্ণগহ্বর থেকে চুইয়ে বেরোয় কোয়ান্টাম কণা (হকিং রেডিয়েশন)। এবং এ ভাবে কৃষ্ণগহ্বর ক্রমে উবে যেতে থাকে। এবং এক সময়ে শূন্যস্থান ছাড়া কিছুই থাকে না। প্রশ্ন হল, এক কিছু যে খেয়েছিল তার ইতিহাস বা তথ্যগুলি তবে যাবে কোথায়? পদার্থবিদ্যা দাবি করে, মহাবিশ্বের কোনও তথ্য ‘হারায় না কো কভু’!
২০১৬ সালে হকিং ও তাঁর দল দাবি করে, কৃষ্ণগহ্বর থেকে বিকিরণ বেরোয় তা আসলে আলোর কণা ফোটন ও গ্র্যাভিটন (বিজ্ঞানীদের কল্পনায় গ্র্যাভিটি বা মহাকর্ষ কণা)। সেই কণাগুলি দিয়ে কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনা দিগন্তের বাইরে নরম চুলের গোলার মতো কিছু তৈরি হয়। ওই নরম কেশরাশিতেই ধরা থাকে কৃষ্ণগহ্বরের যাবতীয় তথ্যের খানিকটা।
কতটা তথ্য?
তার একটা সমীকরণও দেওয়া হয়েছে হকিংয়ের নয়া গবেষণাপত্রটিতে। এটিকে বলা হচ্ছে, হকিং ইকুয়েশন। মারা যাওয়ার ক’দিন আগে সতীর্থরা যখন হকিংকে তাঁর ভাবনার এই ফসলের কথা জানিয়েছিলেন, তখন তার মুখে ফুটে উঠেছিল চওড়া হাসি। হকিংয়ের এই তত্ত্ব বাস্তবে প্রমাণিত হয় কি না, এখন তারই অপেক্ষা।