Science News

একুশ শতকে সূর্যকে ঢাকার সুযোগ চাঁদ পাবে আর ৫৫ বার!

এই শতাব্দীতে ২২৪টির বেশি সূর্যগ্রহণ হওয়া সম্ভব নয়। তার মধ্যে মাত্র ৬৭টি গ্রহণ হবে পূর্ণগ্রাস। তার মধ্যে ১২টি হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ২০০১ সালের ২১ জুন থেকে ২০১৯-এর ২ জুলাই পর্যন্ত। ফলে, বাকি রয়েছে আর সূর্যের মাত্র ৫৫টি পূর্ণগ্রাস।

Advertisement

সুজয় চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৬:০২
Share:

সূর্যগ্রহণ। ছবি- শাটারস্টকের সৌজন্যে।

একুশ শতক শেষ হতে বাকি রয়েছে আর ৮২টি বছর। ওই সময়ের মধ্যে চাঁদ মেরেকেটে সুযোগ পাবে ৫৫ বার!

Advertisement

সামনের সেই আটটি দশকে সূর্যের ৫৫টির বেশি পূর্ণগ্রাস দেখার সৌভাগ্য হবে না আমাদের। তা-ও হবে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। এখানে হলে, তা অন্যখানে দেখা যাবে না। আর আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলে তো ‘ইস্‌’ বলা ছাড়া আর কোনও উপায়ই নেই।

‘‘সূর্যের পূর্ণগ্রাস দেখতে পাওয়াটা তো চাট্টিখানি কথা নয়। তার ’১৮ মাসে বছর’ যে! ১৮ মাস পর পর একটি করে পূর্ণগ্রাস হয় সূর্যের। সেটাই যে প্রকৃতির নিয়ম। যখন সূর্যের মুখ পুরোপুরি ঢেকে দেয় চাঁদ। তার ফলে, দৃশ্যমান হয়ে ওঠে সূর্যের বায়ুমণ্ডল বা করোনা। যা এক বিরল দৃশ্য। এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয় পৃথিবীর সেই অংশে’’, বলছেন মোহনপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকে‌শন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার-কলকাতা)-এর অধ্যাপক সৌরপদার্থবিজ্ঞানী দিব্যেন্দু নন্দী।

Advertisement

নাসা জানাচ্ছে, এই শতাব্দীতে ২২৪টির বেশি সূর্যগ্রহণ হওয়া সম্ভব নয়। তার মধ্যে মাত্র ৬৭টি গ্রহণ হবে পূর্ণগ্রাস। তার মধ্যে ১২টি হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ২০০১ সালের ২১ জুন থেকে ২০১৯-এর ২ জুলাই পর্যন্ত। ফলে, বাকি রয়েছে আর সূর্যের মাত্র ৫৫টি পূর্ণগ্রাস।

একুশ শতকে হবে ৭২টি বলয়গ্রাস আর ৭৭টি খণ্ডগ্রাস। আর পূর্ণগ্রাস ও বলয়গ্রাস মিলিয়ে সূর্যের মিশ্র (হাইব্রিড) গ্রহণ হবে ৭টি।

নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের তরফে জানানো হয়েছে, এই একুশ শতকে এক বছরে সর্বাধিক সূর্যগ্রহণের সংখ্যা হবে ৪টি। তার মধ্যে একটি বছর চলে গিয়েছে ইতিমধ্যেই, সেটা ২০১১। একই ঘটনা ঘটবে ২০২৯, ২০৪৭, ২০৬৫, ২০৭৬ এবং ২০৯৪ সালেও।

শেষ সূর্যগ্রহণটি হবে ২১০০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর।

যখন সূর্যের মুখ পুরোপুরি ঢাকা পড়ে যায় চাঁদের ছায়ায়, আমরা বলি পূর্ণগ্রাস। বিজ্ঞানের পরিভাষায়, ‘টোটাল সোলার একলিপ্স’। সাধারণত, সূর্যের পূর্ণগ্রাস পৃথিবী থেকে সর্বাধিক যতটা জায়গা জুড়ে দেখা যেতে পারে, চওড়ায় তা হয় ১৬০ কিলোমিটার। ভূপৃষ্ঠে সেই এলাকাটা লম্বায় হয় প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার।

দিব্যেন্দুর বক্তব্য, সূর্যের পূর্ণগ্রাস মেরেকেটে হতে পারে ৬ কি সাড়ে ৬ মিনিটের জন্য। খুব বেশি হলে যা হতেও পারে বড়জোর সাড়ে ৭ মিনিট। আর তখনই সূর্য হয়ে যায় ৬ থেকে ৭ মিনিটের ‘সুপার ডুপার’ হিরো!

কোথাও যদি সেটা পুরোপুরি হয়, তা হলে অন্য কোথাও হবে সূর্যের আংশিক গ্রহণ। যেখানে পৃথিবীর সামনে এসে চাঁদ পুরোপুরি ঢেকে দিতে পারে না সূর্যকে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয়, ‘পার্শিয়াল সোলার একলিপ্স’।

চাঁদের ছায়ার দু’টি অংশ থাকে। একটি ঘন কালো। তাকে বলা হয়, ‘আমব্রা’। সূর্যগ্রহণের সময় পৃথিবীর যে যে এলাকা ‘আমব্রা’র মধ্যে পড়ে, সেখান থেকে সূর্যের পূর্ণগ্রাস দেখা যায়।

ছায়ার আর একটি অংশের নাম ‘পেনাম্ব্রা’। ঘন কালো ‘আমব্রা’র পাশেই। সেই অংশটি ততটা কালো নয়। আমব্রা’। সূর্যগ্রহণের সময় পৃথিবীর যে যে এলাকা ‘পেনাম্ব্রা’র মধ্যে পড়ে, সেখান থেকে সূর্যের আংশিক গ্রহণ দেখা যায়।

সূর্যের বলয়গ্রাস আর পূর্ণগ্রাসের মধ্যে ফারাকটা কোথায়? দেখুন ভিডিয়ো

আরও এক ধরনের গ্রাসে পড়তে হয় সূর্যকে। তার নাম বলয়গ্রাস। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম ‘অ্যানুলার সোলার একলিপ্স’। কক্ষপথে প্রদক্ষিণের সময় চাঁদ যখন এমন একটা দূরত্বে চলে যায়, যাতে তার ছায়া সূর্যকে ঢেকে দিতে পারে না পুরোপুরি, তখনই হয় সূর্যের বলয়গ্রাস। যখন চাঁদ সূর্যের মাঝখানটাকে চাকতির মতো ঢেকে দেয় বটে। কিন্তু তার পরেও সেই চাকতির চার পাশ থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় সূর্যের আলো। অনেকটা আংটির মতো। ‘অ্যানুলার’ শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ ‘অ্যানুলাস’ থেকে। যার অর্থ ‘আংটি’। বলয়গ্রাসের স্থায়িত্ব হয় বড়জোর ১২ মিনিট।

নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের তরফে ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে জানানো হয়েছে, এই একুশ শতকের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি সূর্যের পূর্ণগ্রাসটি ইতিমধ্যেই আমাদের দেখা হয়ে গিয়েছে। ২০০৯ সালে ২২ জুলাই। সেই পূর্ণগ্রাস স্থায়ী হয়েছিল ৬ মিনিট ৩৮.৮৬ সেকেন্ড। খুব বেশি হলে ৭ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হতে পারে না সূর্যের পূর্ণগ্রাস।

নাসা জানিয়েছে, একুশ শতকের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি সূর্যের বলয়গ্রাসটি হয়েছিল ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি। ওই দিন বলয়গ্রাসের স্থায়িত্ব ছিল ১১ মিনিট ৭.৮ সেকেন্ড। বলয়গ্রাসের স্থায়িত্ব ১২ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের বেশি হতে পারে না।

আরও একটি অবাক করা ঘটনা ঘটবে ২০৪৯ এবং ২০৫০ সালে। পর পর দু’টি বছরেই দেখা যাবে সূর্যের মিশ্র (হাইব্রিড) গ্রহণ। পূর্ণগ্রাস ও বলয়গ্রাস। একটি ঘটবে ’৪৯ সালের ২৫ নভেম্বর। অন্যটি হবে ’৫০-এর ২০ মে। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে একুশ শতকে এমন ঘটনা আর ঘটবে না।

‘আইসার-কলকাতা’র পদার্থবিজ্ঞানের আর এক অধ্যাপক অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, সূর্যের পূর্ণগ্রাসের জন্য এমন হাপিত্যেশ প্রতীক্ষায় আমাদের বসে থাকতে হত না যদি চাঁদের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার (এলিপ্টিকাল) না হয়ে পুরোপুরি বৃত্তাকার (সার্কুলার) হত। চাঁদ যদি আমাদের আরও কাছে থাকত। আর পৃথিবীর কক্ষপথের সঙ্গে যদি একই তলে (প্লেন) থাকত চাঁদের কক্ষপথ। সে ক্ষেত্রে আমরা প্রতি মাসেই একটা করে সূর্যের পূর্ণগ্রাস দেখতে পেতাম।

কিন্তু চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে। পৃথিবীর দিকে ৫ ডিগ্রি কোণে হেলে থেকে। তাই পূর্ণগ্রাস, আংশিক গ্রাস ও বলয়গ্রাস মিলিয়ে বছরে ৫টির বেশি সূর্যগ্রহণ হওয়া সম্ভব নয়।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

গ্রাফিক-তথ্য ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: নাসা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement