তাঁরা হলেও হতে পারেন ‘মিথ’! কিন্তু হয়তো ‘মিথ্যা’ নন পুরোপুরি! তাঁরা কেউই নন কোনও ‘ফ্যান্টাসি’ বা ‘ফিকশন’! নন কোনও আজগুবি গল্পের চরিত্রও!
ভিনগ্রহীরা বহাল তবিয়তেই আছেন! এই ব্রহ্মাণ্ডের এখানে-ওখানে। বা, অন্য কোনও খানে! তাঁদেরও ‘ট্যুরিজম’ আছে! সেই ‘ট্যুরে’ই তাঁরা বার বার এসেছেন, আসেন পৃথিবীতে। কখনও কোথাও তাঁরা নেমে পড়েন ঝুপ্ করে! আবার কখনও-বা তাঁরা আকাশে বেশ কিছু ক্ষণ ধরে চক্কর মেরে আমাদের ওপর ‘কড়া নজর’ রেখে উধাও হয়ে যান হঠাৎ করেই! তাঁরা বার বার এসেছেন, আসছেন, আকাশে চক্কর মেরেছেন, মারছেন, মাটিতে ঝুপ্ করে নেমে পড়েছেন চিলি, বলিভিয়া, সৌদি আরব, লন্ডন, ক্যালিফোর্নিয়া, স্টকহলম, সানফ্রান্সিসকোয়। গত ৫০ বছরে ওই সব দেশের বিভিন্ন এলাকায় বারে বারে দেখা মিলেছে মহাকাশে ভিনগ্রহীদের ‘পর্যটনের যান’- ‘আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট’ বা ইউএফও’র। আমরা যাকে ‘উড়ন্ত চাকি’ বলে জানি।
সিআইএ’র নথি থেকে: ‘উড়ন্ত চাকি’টা দেখতে কেমন? ছবি এঁকে বুঝিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী
২০১৬-র সেরা ১০টি ‘উড়ন্ত চাকি’ দেখার ঘটনা।
সিআইএ’র নথি থেকে: ১৯৬৮তে পেরুর সিকুয়ানিতে হদিশ মেলা ‘উড়ন্ত চাকি’
কোনও গল্পকথা নয়। নয় কোনও কল্পকাহিনী। গত ৫০ বছরে আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহে ভিনগ্রহীদের বার বার আসা-যাওয়ার যে সব তথ্যপ্রমাণ, প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ মিলেছে, আর সে সব সম্পর্কে বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান, সেনা-কর্তা, নাসার প্রাক্তন কর্মী ও পুলিশ অফিসাররা যা বলেছেন বা লিখেছেন, সেই সব ‘গোপন নথি’ আর্কাইভ থেকে বের করে সোমবার সরাসরি অনলাইনে প্রকাশ (ডি-ক্লাসিফাই) করে দিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি’ বা ‘সিআইএ’। ১৯৯৫ সালে তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন ‘ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ সিআইএ’র ‘গোপন নথি’ বা ‘কনফিডেন্সিয়াল ফাইল’গুলিকে আমজনতার জন্য প্রকাশ করতে বলেছিলেন। ২০ বছর পর সিআইএ সেই সব নথিপত্র প্রকাশ করতে শুরু করল।
সিআইএ’র নথি থেকে: ২০১৪-য় কানাডায় হদিশ মেলা ‘উড়ন্ত চাকি’
সিআইএ’র নথি থেকে: ১৯৯১ সালে লন্ডনে হদিশ মেলা ‘উড়ন্ত চাকি’
দু’-এক পাতা বা পাঁচ-দশ পাতার কাহিনী নয়, একেবারে ‘সাতকাহন’ রয়েছে সিআইএ’র প্রকাশ করা সেই সব ‘অত্যন্ত গোপন নথি’তে। প্রথম পর্যায়ে মোট এক কোটি ২০ হাজার পাতার সেই ‘গোপন নথি’ দিনের আলোর দেখার পরপরই যেমন ভিনগ্রহীদের সম্পর্কে উৎসাহের পালে আরও জোরে বাতাস লাগতে শুরু করেছে, তেমনই ওই সব তথ্যপ্রমাণ, সাক্ষ্যের বৈজ্ঞানিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের জ্যোতির্বিজ্ঞানী, কসমোলজিস্টরা। আবার যে বিজ্ঞানীরা ব্রহ্মাণ্ডের এখানে-ওখানে প্রাণের সন্ধান করে চলেছেন, তাঁদের বুকের বল বাড়িয়ে দিয়েছে সিআইএ’র প্রকাশ করা ওই সব ‘গোপন নথি’।
সিআইএ’র নথি থেকে: নিজেই একটি প্রমাণ জমা দিয়েছিলেন তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, ’৭৭-এ। তাঁর চিঠি।
বিশ্বের সেরা ২০টি ‘উড়ন্ত চাকি’ দেখার ঘটনা। দেখুন ভিডিও।
যুদ্ধক্ষেত্রে কোনও প্রত্যন্ত, দুর্গম এলাকায় গিয়ে সেনা জওয়ানরা যে সব ভয়ঙ্কর, ভয়াবহ মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন (যাকে বলে, ‘সাইকো-কাইনেসিস’ বা ‘টেলিপ্যাথি’ বা ‘ইএসপি’), আচমকা কোনও ‘উড়ন্ত চাকি’ চাক্ষুষ করেছেন বা প্রত্যক্ষ করেছেন এমন কোনও ঘটনা, বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা মেলে না, সেই সব ঘটনা আর তা নিয়ে প্রশাসনিক চিঠিচাপাটিও রয়েছে সেই সদ্য প্রকাশিত সিআইএ’র সেই সব ‘গোপন নথি’তে। রয়েছে মার্কিন সেনাবাহিনীর ‘প্রজেক্ট স্টারগেট’-এর যাবতীয় ‘কনফিডেন্সিয়াল নোটস’ও।
‘গোপন নথি’র নজরকাড়া অংশ, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ‘উড়ন্ত চাকি’ দেখতে পাওয়ার রেকর্ড, ছবি, নথিপত্র। তার মধ্যে কয়েকটির উল্লেখ করা যাক।
এক, ১৯৯৬ সালের ২৫ জুন লিথুয়ানিয়ায় গভীর রাতে আকাশে একটি ‘উড়ন্ত চাকি’ দেখে সংজ্ঞাহীন হয়ে গিয়েছিলেন ওই এলাকায় টহলরত দুই পুলিশ অফিসার। ঘটনাটি পুলিশের রেকর্ডে আসে তার পরের দিন, ২৬ জুন।
সিআইএ’র প্রকাশ করা ‘গোপন নথি’তে ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে লেখা হয়েছে:
‘‘ওই ‘উড়ন্ত চাকি’ দেখা গিয়েছে, এমন খবর পাওয়ার পর সেনা জওয়ান, র্যাপিড রিঅ্যাকশন ফোর্স, স্নিফার ডগ ও পুলিশ-কর্মীদের নিয়ে একটি ট্রাক সেখানে পৌঁছয়। তাঁরা গিয়ে ওই এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা তাঁদের বলেন, তাঁরা বেশ কিছু ক্ষণ ধরে রাতের অন্ধকার আকাশে একটি গোলাকার বস্তুকে ঝুলতে দেখেছেন। ভাসতে দেখেছেন। আর সেটা থেকে আলো ছিটকে ছিটকে বেরিয়ে আসছিল। তার সঙ্গে একটা অদ্ভুত রকমের শব্দও তাঁরা শুনতে পেয়েছেন বলে জওয়ানদের জানিয়েছেন। অনেকটা বজ্রপাত হলে যেমন বিদ্যুতের ঝিলিক দেখা যায়, প্রায় সে রকমই। তা দেখে টহলরত পুলিশকর্মীরা ঘন ঝোপের মধ্যে দিয়ে প্রায় ৫০ মিটার হেঁটে ওই ‘উড়ন্ত চাকি’র কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তখন সেই আকাশে ‘ঝুলে থাকা’ গোলাকার বস্তুটি দূরে চলে যায়। আকাশের আরও ওপরে উঠে যায়। তার পর ধীরে ধীরে দূষ্টির বাইরে চলে যায়। কিন্তু তার পরেও ওই এলাকায় পুলিশকর্মীরা বজ্রপাতের মতো শব্দটা শুনতে পেয়েছেন আরও বেশ কিছু ক্ষণ ধরে। লিথুয়ানিয়ার বিজ্ঞানীরা ওই ঘটনার কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। যে পুলিশকর্মীরা ওই ঘটনাটি দেখেছিলেন, তাঁরা কেউই মানসিক প্রতিবন্ধী নন বা অসুস্থও ছিলেন না। কিন্তু ঘটনাটি দেখার পর তাঁরা সংজ্ঞাহীন হয়ে যান।’’
সিআইএ’র নথি থেকে: ১৯৬৭-র মার্চে পেরুতে হদিশ মেলা ‘উড়ন্ত চাকি’
দুই, সিআইএ’র ‘গোপন নথি’ জানাচ্ছে, ২০০১ সালের ডিসেম্বরে সৌদি আরবে দেখা মেলে একটি ‘উড়ন্ত চাকি’র। একটা পরমাণু বোমা ফাটানো হলে যেমন তার আলোয় ঝলসে যায় চার পাশের বিশাল একটা এলাকা, তেমনই আলোর ঝলক দেখা গিয়েছিল ওই দিন ‘উড়ন্ত চাকি’ কাছে এসে পড়ার পর।
তিন, সিআইএ’র ‘গোপন নথি’ জানাচ্ছে, ১৯৮১ সালে চিলির বালগাড্ডায় একটি ‘উড়ন্ত চাকি’ নিয়ে কিছু ক্ষণের জন্য মাটিত নেমে পড়তে দেখা গিয়েছিল ভিনগ্রহীদের। মিনিট পনেরো পরেই ওই ‘উড়ন্ত চাকি’তে চেপেই সেই ভিনগ্রহীদের আবার আকাশে উড়ে গিয়ে উধাও হয়ে যেতে দেখা যায়।
সিয়ার সদ্য প্রকাশিত ওই ‘গোপন নথি’ সম্পর্কে কী বলছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী, কসমোলজিস্টরা?
আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রবি নায়েকের কথায়, ‘‘আমরা ওই সব ‘উড়ন্ত চাকি’র ছবি দেখেছি ঠিকই। তবে সেগুলিকে যেহেতু আমরা নাগালে পাইনি বা আমাদের মতো বিজ্ঞানীরা সামনে থেকে তাদের আকাশে ভাসতে বা ঝুলতে দেখিনি, তাই সেগুলি আদতে কী, তা নিয়ে আমাদের স্পষ্ট কোনও ধারণা নেই। হতে পারে তা কোনও মহাজাগতিক বস্তুর খন্ড-বিখণ্ড দেহাবশেষ। তবে জিমি কার্টার যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন এমন একটি ঘটনা তিনি নিজে টেক্সাসে দেখেছিলেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছিলেন। পরে সেই ঘটনার তদন্তের জন্য প্রশাসনিক নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একটা ঘন ঝোপের কিছুটা অংশ পুড়ে যাওয়ার ‘চিহ্ন’ ছাড়া আর কোনও তথ্যপ্রমাণ ওই এলাকায় মেলেনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য ছিল, ভিনগ্রহীদের ‘মহাকাশযান’ মাটিতে নেমেছিল বলেই, তার ‘পদচিহ্ন’ মিলেছিল ওই পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া ঘন ঝোপের একাংশে।’’
তবে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমোলজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এই ব্রহ্মাণ্ডে প্রাণ শুধুই পৃথিবীতে রয়েছে, অনেক বিজ্ঞানীরই এমন জোরালো বিশ্বাস নেই। বরং যত দিন যাচ্ছে, ততই বিজ্ঞানীদের মধ্যে এই ধারণা জোরালো হচ্ছে, এই বিপুল ব্রহ্মাণ্ডে আমরা কখনওই একটি বিচ্ছিন্ন ‘এনটিটি’ হতে পারি না। শুধু পৃথিবীতেই সভ্যতা হয়েছে, ব্রহ্মাণ্ডের অন্য কোথাও কোনও কালে কোনও সভ্যতা গড়ে ওঠেনি, তা ধ্বংসও হয়নি বা নতুন নতুন সভ্যতা তার পরেও গড়ে ওঠেনি, এমন কথারও তো কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। আমরা এই ব্রহ্মাণ্ডের এক শতাংশও এখনও পর্যন্ত জানতে পারিনি। স্টিফেন হকিংও একই কথা বলছেন। তাই তিনি ভিনগ্রহীদের খোঁজার ‘ইনিশিয়েটিভে’রও শরিক হয়েছেন। জোরালো থেকে আরও জোরালো নতুন নতুন টেলিস্কোপ বানানো হচ্ছে। ২০১৮ সালেই নাসা মহাকাশে পাঠাচ্ছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। বিভিন্ন সৌরমণ্ডলে ‘হ্যাবিটেব্ল জোনে’ বাসযোগ্য গ্রহের সন্ধানে, ভিনগ্রহীদের ‘তল্লাটে’র তল্লাশে। অণুজীব তো আছেই এই ব্রহ্মাণ্ডের অন্যত্র, আমার জোরালো বিশ্বাস এমনকী উন্নত প্রাণ বা হয়তো সভ্যতাও রয়েছে এই ব্রহ্মাণ্ডের এন্য কোথাও, অন্য কোনও খানে। আর আমার মনে হয়, সেই সব আমাদের চেয়ে আরও অনেক আগে তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর জন্ম তো এই সবে, মাত্র সাড়ে ৪০০ কি ৫০০ কোটি বছর আগে। কিন্তু ‘বিগ ব্যাং’টা তো হয়েছিল তারও বহু বহু গুণ আগে। ১৩৭০ কোটি বছর আগে। তাই কেনই-বা সভ্যতা থাকতে পারবে না ব্রহ্মাণ্ডের অন্য কোনও প্রান্তে? তার হদিশ আমরা হুট করে পাব কি না, তা বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা যেমন ভিনগ্রহীদের সন্ধান পেতে টেলিস্কোপ বানাচ্ছি, মহাকাশযান পাঠাচ্ছি এখানে ওখানে, তেমনই ‘উড়ন্ত চাকি’র মতো কিছু পাঠিয়ে সেই ভিনগ্রহীরাও তো নজর রাখার চেষ্টা করতে পারে আমাদের ওপর!’’
ভিনগ্রহীদের যাওয়া-আসা নিয়ে রীতিমতো বিশ্বজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিল সিআইএ’র সদ্য প্রকাশিত ‘গোপন নথি’।
ছবি সৌজন্যে: সিআইএ’র প্রকাশিত ‘গোপন নথি’