প্রতীকী চিত্র। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
অভিনব পদক্ষেপ। প্রাণী জগত রক্ষা করতে ৬০ লক্ষ ৭০ হাজার শুক্রাণু চাঁদে পাঠাতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অ্যারোস্পেস সন্মেলনে এই বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। তাঁরা তুলে এনেছেন বাইবেলের কথিত নোয়া-র নৌকার সেই গল্প। সেখানে যেমন এক নৌকায় নোয়া তাঁর পরিবার এবং প্রাণীকূলকে নিয়ে বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, তেমনই বিশেষ সংরক্ষণশালা তৈরি করতে চাইছেন তাঁরা। যেটি থাকবে চাঁদে। পৃথিবী গণবিলুপ্তির মুখে পড়লেও সেই সংরক্ষণশালায় থেকে যাবে প্রাণের অস্তিত্ব, যা পরবর্তী কালে প্রাণীজগত তৈরি করতে পারবে বলেই দাবি তাঁদের। গবেষক জেক্যান থাঙ্গারের নেতৃত্বে তৈরি গবেষকদলের প্রস্তাব, এমন একাধিক যান ও সংরক্ষণশালা তৈরি করতে হবে যাতে সেটি চাঁদে থেকে প্রাণের উৎসগুলিকে রক্ষা করতে পারে।
তাঁরা প্রথমেই বলেছেন, পৃথিবী যে কোনও সময় বিপদের মুখে পড়তে পারে। মানুষের তৈরি দূষণে সেই বিপদ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা যেমন থাকে, তেমনই সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি থেকে গ্রহাণু আছড়ে পড়া, বা অন্য একাধিক কারণে পৃথিবীতে প্রাণ বিলুপ্ত হতে পারে। সেগুলি যে কোনওদিন প্রাণের অস্তিত্বকে সংকটে ফেলতে পারে। ঠেলে দিতে পারে গণবিলুপ্তির দিকে। সেই বিপদ থেকে রক্ষা পেতেই নতুন রাস্তা খুঁজে বের করেছেন বিজ্ঞানীরা।
তাঁরা বলেছেন, চাঁদের প্রাণের উৎস সংরক্ষণের জন্য ‘সংরক্ষণশালা’ হিসাবে মাটির তলায় স্থাপত্য গড়ে তুলতে হবে। সম্প্রতি আবিষ্কৃত চাঁদের গহ্বরে এই সংরক্ষণশালাগুলি তৈরি করা যেতে পারে বলে পরামর্শ তাঁদের। এগুলি চন্দ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তনশীল আবহাওয়া থেকে প্রাণের উৎসকে বাঁচাতে পারবে। সংরক্ষণ যানে পর্যায়ক্রমে সংরক্ষিত থাকবে বিভিন্ন স্তরের প্রাণের উৎস, যেমন শুক্রাণু, ডিম্বানু ইত্যাদি। থাকবে ছত্রাক ও একেবারে প্রথম ধাপের প্রাণীর জীবনও। গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীতে এমন অনেক প্রাণী আছে, যা বিলুপ্তির মুখে পড়েছে বা অদূর ভবিষ্যতে পড়তে পারে। তাদের বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করতে এই পরিকল্পনা কাজে দিতে পারে।
তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিপুল খরচের সম্ভাবনা রয়েছে। ৫০টি প্রাণীর শুক্রাণু পৌঁছতে আনুমানিক ২৫০ রকেট লাগবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। সময়ও লাগবে অনেকটা। সেক্ষেত্রে সংখ্যাটি ৬০ লক্ষে পৌঁছতে বিপুল পরিমাণ খরচ হতে পারে বলে মত বিজ্ঞানীদের।