রওনা হওয়ার আগে। জুলিয়া পেরেসলিড (বাঁ দিক থেকে), ক্লিম শিপেঙ্কো ও অ্যান্টন স্কাপলেরভ। মঙ্গলবার কাজাখস্তানের বৈকানুর কসমোড্রোমে। ছবি-‘রসকসমস’-এর সৌজন্যে।
৬০ বছর পর আমেরিকাকে ফের হারিয়ে দিল রাশিয়া। মহাকাশেই।
এক অভিনেত্রী, অভিনেতা ও পরিচালককে নিয়ে মঙ্গলবার রাশিয়ার তিন জন মহাকাশে গেলেন একেবারে ভরশূন্য অবস্থায় প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের শ্যুটিংয়ের জন্য।
কলাকুশলীদের নিয়ে চলচ্চিত্রের শ্যুটিংয়ের জন্য হলিউডের অভিনেতা টম ক্রুজের মহাকাশে যাওয়ার কথা নভেম্বরে।
৬০ বছর আগেও রুশদের কাছেই হেরেছিল আমেরিকা
মহাকাশে প্রথম মহাকাশচারী পাঠানোর অভিযানেও আমেরিকাকে হারতে হয়েছিল ছয় দশক আগে। মহাকাশে প্রথম পাড়ি দিয়েছিলেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন। ‘ভোস্তক-১’ মহাকাশযানে চেপে ১৯৬১-র ১২ এপ্রিল পৃথিবীকে এক বার প্রদক্ষিণ করেছিলেন। তার ৬০ বছর পর সেই রুশদের কাছেই হার মানতে হল আমেরিকাকে। মহাকাশে চলচ্চিত্রের শ্যুটিংয়ের দৌড়েও।
প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের শ্যুটিংয়ের জন্য মঙ্গলবার রাতে (ভারতীয় সময়) কাজাখস্তানের বৈকানুর কসমোড্রোম থেকে ‘সয়ুজ এমএস-১৯’ মহাকাশযানে চেপে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছন রুশ মহাকাশচারী ও অভিনেতা অ্যান্টন স্কাপলেরভ, খ্যাতনামা রুশ অভিনেত্রী জুলিয়া পেরেসলিড এবং পরিচালক-প্রযোজক ক্লিম শিপেঙ্কো। তাঁদের সেই চলচ্চিত্রের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘চ্যালেঞ্জ’। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৃথিবীকে নানা কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে থাকা মহাকাশ স্টেশনেই হবে সেই পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের শ্যুটিং। এই প্রথম।
মনুষ্যত্বের রং মহাকাশের চলচ্চিত্রে
‘গ্র্যাভিটি’ বা ‘ইন্টারস্টেলার’ নয়। নয় হলিউডে বানানো কোনও কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক চলচ্চিত্র। সেই চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তুও হবে কল্পবিজ্ঞান ছবির চেয়ে অনেক বেশি বাস্তব। যাতে কল্পনার রং থাকলেও মহাকাশের বাস্তবতার ভিতটা হবে অনেক বেশি শক্তপোক্ত। কোনও যুদ্ধ-টুদ্ধ নয়। থাকবে মাটির গন্ধ। মনুষ্যত্বের রং।
পেরেসলিড রাশিয়ায় মঞ্চ, টেলিভিশন আর পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রে খুবই পরিচিত নাম। আর মূলত মহাকাশচারী হলেও অ্যান্টন স্কাপলেরভ এই প্রথম অভিনয় করবেন কোনও চলচ্চিত্রে।
চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু কী?
রুশ পরিচালক ও প্রযোজক শিপেঙ্কো জানিয়েছেন, সেই চলচ্চিত্রের নাম ‘চ্যালেঞ্জ’। রুশ ভাষায় ‘ভাইজভ্’। গল্পে কোনও ‘স্পেস ওয়ার’ বা মহাকাশ যুদ্ধের ছিটেফোঁটাও নেই হলিউডে বানানো বেশির ভাগ সব কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক চলচ্চিত্রের মতো। বরং সেই চলচ্চিত্রে থাকছে মাটির গন্ধ। মনুষ্যত্বের রং। এক সাধারণ মানুষকে নিয়েই গল্প। যিনি পেশায় একজন শল্য চিকিৎসক। কোনও দিন স্বপ্নেও ভাবেননি, যাবেন মহাকাশে। সেই তাঁকেই হঠাৎ মহাকাশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হল। বলা হল, চাইলে যেতে পারেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে। রাজি হয়ে গেলেন সেই চিকিৎসক। গিয়ে তিনিই মহাকাশ স্টেশনে থাকা এক মহাকাশচারীর জীবন বাঁচিয়ে দিলেন। কী ভাবে, তা নিয়েই টানটান গল্প। সঙ্গে মহাকাশ স্টেশনের ভরশূন্য অবস্থায় থাকার স্বাভাবিকতা।
পরিচালকের উচ্চতা, অভিনেত্রী ভিন্ন রূপেও
অভিনেত্রী জুলিয়া জানিয়েছেন শ্যুটিংয়ের সময় ও তার আগে-পরে তিনিই হবেন নিজের রূপটান শিল্পী তথা পোশাক শিল্পী।
তবে মূল সমস্যা পরিচালক অভিনেতা ক্লিম শিপেঙ্কোর উচ্চতা। তিনি ৬ ফুট ২ ইঞ্চির। এই উচ্চতা নিয়ে মহাকাশযানে চলচ্চিত্রের পরিচালনা ও অভিনয়ে তাঁর যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিপেঙ্কো।
এও জানিয়েছেন, তাঁর লাল গ্রহ মঙ্গলে গিয়েও চলচ্চিত্রের শ্যুটিং করার ইচ্ছা রয়েছে।