ইঁদুরের সুর আর মানুষের কথায় মিল খুঁজছেন অর্করূপ

মস্তিষ্কের কোন প্রক্রিয়ায় সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে এই প্রত্যুত্তর সম্ভব? আমেরিকার নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দাবি, ইঁদুরের উপর গবেষষণা করেই খুলছে রহস্যের জট।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০৬:৫৮
Share:

ইঁদুরেরা এ ভাবেই গান গেয়ে যোগাযোগ করে অন্য ইঁদুরের সঙ্গে (ডান দিকে)। গবেষক অর্করূপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: গবেষকের সৌজন্যে।

পারস্পরিক যোগাযোগের সময় এক জন মানুষ তাঁর কথা শেষ করা মাত্র অপর জন প্রত্যুত্তর করতে পারেন। আবার মধ্য আমেরিকার এক ধরনের ইঁদুর গান গেয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। কিন্তু মস্তিষ্কের কোন প্রক্রিয়ায় সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে এই প্রত্যুত্তর সম্ভব? আমেরিকার নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দাবি, ইঁদুরের উপর গবেষষণা করেই খুলছে রহস্যের জট।

Advertisement

এই গবেষণায় যুক্ত এক বাঙালিও। গবেষক দলের অন্যতম অর্করূপ বন্দ্যোপাধ্যায় আদতে হুগলির শ্রীরামপুরের বাসিন্দা। নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি ওয়ার্ল্ডের মতো সংবাদমাধ্যম এবং ফোর্বস, ডিসকভারের মতো পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁদের গবেষণা।

নিউইয়র্ক থেকে ফোনে অর্করূপ জান‌ান, কোস্টারিকা, পানামা-সহ মধ্য আমেরিকার কিছু জায়গায় বিশেষ এক প্রজাতির ইঁদুর রয়েছে। তাদের বৈশিষ্ট্য হল— তারা পাখিদের মতো গান করে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মাইকেল লং কয়েক বছর আগে এদের মস্তিষ্কে তথ্য আদানপ্রদানের প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পরে অর্করূপ তাতে সামিল হন। অর্করূপদের দাবি, নিরীক্ষণ করে দেখা যায়, এই প্রজাতির ইঁদুর (সিঙ্গিং মাইস) একা থাকলে এক ভাবে গান গায়। অন্যদের সঙ্গে থাকলে গানের ধরন বদলে যায়। এক জনের গান শেষ হলে অপর জন গেয়ে ওঠে। স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে অন্যের কথায় সাড়া দিতে ২০০ মিলি সেকেন্ড সময় লাগে। ওই প্রজাতির ইঁদুরদের ক্ষেত্রে এই সময় ৫০০

Advertisement

মিলি সেকেন্ড।

পরীক্ষায় দেখা যায়, ইঁদুরের মস্তিষ্কের ‘মোটর কর্টেক্স’ অংশ গানের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এই অংশকে কয়েক ঘণ্টার জন্য নিষ্ক্রিয় করে দেখা যায়, ইঁদুর গাইতে পারছে কিন্তু অন্যের গানে সাড়া দিতে পারছে না। গবেষকদের বক্তব্য, অন্যের কথায় সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে ওই ইঁদুরের সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্কের ‘পদ্ধতিগত মিল’ রয়েছে।

অর্করূপের বক্তব্য, স্ট্রোক হলে অন‌েক মানুষের বাকশক্তি হারিয়ে যায়। অটিজমের ক্ষেত্রেও বাকশক্তির সমস্যা হয়। পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেকে অপরের কথার উত্তর সঙ্গে সঙ্গে দিতে পারেন না। ইঁদুরের মস্তিষ্কের এই বিশেষ অংশের কাজের ধরন দেখে মানুষের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। এই সম্পর্কে পুরোপুরি জানা গেলে এই সম্পর্কিত অসুখের চিকিৎসা সহজ হবে।

বাঙালি এই স্নায়ু-বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘এটা একটা সূত্র। সূচনা। ভবিষ্যতে হয়তো আরও অনেক বেশি জানা যাবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এটা খুব ফলপ্রসূ হতে পারে।’’

অর্করূপ এবং তাঁর পরামর্শদাতা লং ছাড়াও এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ড্যানিয়ে‌ল নামে আরও এক বিজ্ঞানী।

বছর বত্রিশের অর্করূপের বাড়ি শ্রীরামপুরের ভাগীরথী লেনে। ছোটবেলায় তিনি পড়াশোনা করেছেন চন্দননগরের সেন্ট যোসেফ এবং ব্যান্ডেল ডন বসকো-তে। জৈব রসায়নে অনার্স নিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাশ করেন। মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ থেকে এমএসসি। আমেরিকার কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরি থেকে ২০১৬ সালে স্নায়ুবিজ্ঞানে পিএইচডি করেন। বর্তমানে গবেষণা করছেন ‘পোস্ট ডক্টরাল ফেলো’ হিসেবে।

ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাতেও সাবলী‌ল অর্করূপ। বাবা আলোকরঞ্জন‌ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট থেকে আর পাঁচটা বিষয়েও ছেলে পারদর্শী ছিল। রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে পারে। আবৃত্তিও করত।’’ মা ইন্দ্রাণীদেবী উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। তাঁর কথায়, ‘‘এমন একটা গবেষণার সঙ্গে ছেলে যুক্ত, ভেবে খুব ভাল লাগছে। আশা করব এই সূত্র ধরে মানুষের মস্তিষ্কের জটি‌ল পদ্ধতি উদ্ভাবন করে উপযুক্ত চিকিৎসা সম্ভব হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement