খরা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে ইউরোপে। হচ্ছে ঘনঘন। -ফাইল ছবি।
গত ৭-৮ বছর ধরে ইউরোপে খরা লাগাতার ভাবে যতটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে, তা গত ২ হাজার বছরে একটি রেকর্ড। গোটা ইউরোপ মহাদেশে বেড়েছে তাপপ্রবাহের ঘটনা ও তীব্রতা বহু গুণ। বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্যই এটা হয়েছে। যার জন্য দায়ী মানুষ। সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্র এই উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আম্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার জিওসায়েন্স’-এ।
পৃথিবীর গত ২ হাজারের বছরের গড় তাপমাত্রার ধারা বুঝতে গবেষকরা রোমান সাম্রাজ্যের সময়ের ১৪৭টি ওক গাছের ২৭ হাজার গুঁড়ির রিং (বলয়) পরীক্ষা করেছিলেন। গাছের গুঁড়িতে একটি বিন্দুকে কেন্দ্র করে তার চার দিকে উত্তরোত্তর বড় ব্যাসের যে বলয় দেখা যায়, তার সংখ্যার নিরিখেই গাছের বয়স নির্ধারণ করা হয়। তাপমাত্রা বাড়া-কমার সঙ্গে সঙ্গে সেই বলয়গুলির আকার ও একটি থেকে পরেরটির দূরত্ব বেড়ে যায়।
গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, ২০১৪ সালে যে ভাবে লাগাতার তাপপ্রবাহের তীব্রতা ও ঘটনার সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে গোটা ইউরোপে তাতে তুলনায় অল্পবয়সিদের মৃত্যু, ফসল নষ্টের পরিমাণ ও দাবানলেরও সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে উদ্বেগজনক ভাবে। বেড়ে চলেছে।
২০১৮ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার এই ঊর্ধ্বগতি খতিয়ে দেখেছেন গবেষকরা। তবে তার পরেও ২০১৯, ২০২০ এবং চলতি বছর খরা ও তাপপ্রবাহ বেড়েছে।
গবেষকদের অশনি সংকেত, গোটা ইউরোপেই এই খরা ও তাপপ্রবাহ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠবে ফি বছর। ঘটনার সংখ্যাও বাড়বে লাফিয়ে লাফিয়ে।
এ-ও দেখা গিয়েছে, গত ২ হাজার বছরে মধ্য ইউরোপের গ্রীষ্ম ক্রমশই আরও বেশি পরিমাণে শুষ্ক হয়ে উঠেছে। আর্দ্রতার পরিমাণ আগের চেয়ে অনেকটাই কমে গিয়েছে গ্রীষ্মে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠা বা সৌরচক্রের চরিত্রের পরিবর্তন এর জন্য দায়ী নয়। এর প্রধান কারণ বিশ্ব উষ্ণায়ন। যার জন্য দায়ী মানুষই। গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনের মাত্রার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি। অন্য কারণটি পৃথিবীর কক্ষপথে ঘূর্ণনের সামান্য কিছু পরিবর্তন।
আধুনিক সময়ের বিশ্বের গড় তাপমাত্রার হেরফের বুঝতে এখনকার ওক গাছগুলির গুঁড়ি পরীক্ষা করেছিলেন গবেষকরা। মধ্যযুগের সময়টাকে বুঝতে তাঁরা নদীর তলদেশে থাকা ওক গাছের অবশেষ পরীক্ষা করেছিলেন। আর রোমান সাম্রাজ্যের সময়কার গড় তাপমাত্রার পরিবর্তনের গতিপ্রকৃতি বুঝতে গবেষকরা সেই কূপগুলি পরীক্ষা করেছিলেন যেগুলি অতীতে ওক গাছ দিয়েই বানানো হয়েছিল।
অন্যতম গবেষক কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উল্ফ বুনজেন বলেছেন, ‘‘আমরা গত ২ হাজার বছরে এক অবিশ্বাস্য ও উদ্বেগজনক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি।’’