নাসার প্রকাশিত ছবি দেখে মনে হয়েছিল চাঁদের মাটিতে পোঁতা মার্কিন পতাকা যেন হাওয়ায় নড়ছে। এমনকী মার্কিন টেলিভিশনে সেই সময়ে দেখানো ভিডিওতেও নাকি দেখা গিয়েছিল পতাকা সামান্য উড়ছে। ‘কন্সপিরেসি থিওরিস্ট’রা প্রশ্ন করেছিলেন, বাতাসহীন চাঁদের মাটিতে পতাকা উড়ছে কী ভাবে? নাসা অবশ্য দাবি করেছিল, দীর্ঘ দিন ভাঁজ করা অবস্থায় থাকার ফলে ছবিতে পতাকা ওই রকম দেখতে লাগছিল।
নাসার এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে চন্দ্রযান যে জায়গায় চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে, সেখানে অভিঘাতজনিত কোনও গর্তই তৈরিই হয়নি। ‘কন্সপিরেসি থিওরিস্ট’-সহ একাধিক বিজ্ঞানী এই ছবি দেখে প্রশ্ন তুলেছিলেন, আদৌ কি নাসার মহাকাশচারীরা চাঁদে নেমেছিলেন?
চাঁদে আলোর উত্স একটাই, সূর্য। নাসার ছবি কিন্তু সে কথা বলছে না বলেই দাবি করেছেন ‘কন্সপিরেসি থিওরিস্ট’রা। প্রমাণ হিসেবে তাঁরা বলেছেন, নাসার প্রকাশিত ছবিতে বিভিন্ন বস্তুর বিভিন্ন রকমের ছায়া দেখা গিয়েছে। যা একমাত্র সম্ভব আলোর একাধিক উত্স থাকলে। নাসা অবশ্য দাবি করেছিল, চাঁদের বুকে সূর্যের আলো পাহাড়ে প্রতিফলিত হয়ে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু পাহাড়ের পক্ষে এই রকম ছায়া তৈরি করা সম্ভব নয় বলে দাবি করেছিলেন এক দল বিজ্ঞানী।
নাসা দাবি করেছিল, ‘অ্যাপোলো-১১’ গিয়েছিল ‘ভ্যান অ্যালিয়েন রেডিয়েশন বেল্ট’ দিয়ে। ‘ভ্যান অ্যালিয়েন রেডিয়েশন বেল্ট’ একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলেই থাকে। ‘কন্সপিরেসি থিওরিস্ট’দের দাবি ছিল, ওই বেল্ট দিয়ে অতটা সময় ধরে গেলে মহাকাশচারীরা স্রেফ ঝল্সে যেতেন। নাসা পাল্টা যুক্তি দিয়েছিল, ‘‘অ্যাপোলো-১১’ মহাকাশযান খুব কম সময় বেল্টের সংস্পর্শে এসেছিল। তাই মহাকাশচারীদের অতটা ক্ষতি হয়নি।’’
চন্দ্রাভিযানের ছবি প্রকাশের পর আরও একটি প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন একদল বিজ্ঞানী। তাঁদের মতে, চন্দ্রাভিযানের যে ছবি নাসা প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গিয়েছে মহাকাশচারীর হেলমেটের কাচে একটি অস্পষ্ট ছবি ধরা পড়েছে। যেখানে দড়ি বা তারে ঝুলছে একটি বস্তু। এমন দৃশ্য নাকি ফিল্ম স্টুডিওয় দেখা যায় বলে দাবি ওই বিজ্ঞানীদের। নিম্নমানের ছবির দোহাই দিয়ে এই অভিযোগও খারিজ করে দেয় নাসা।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ ওঠে ‘অ্যাপোলো-১১’র চন্দ্রাভিযানের ভিডিও এবং ছবি নিয়ে। ‘কন্সপিরেসি থিওরিস্ট’রা প্রশ্ন তোলেন, ছবিতে দেখা গিয়েছে পরিষ্কার আকাশ। কোনও মেঘ নেই। তবে কেন কোনও তারা দেখা যাচ্ছে না? এ ক্ষেত্রেও নাসার তরফে যুক্তি দেখানো হয়, ‘‘ছবিটি নিম্ন মানের হওয়ায় তারা স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়নি।’’
চন্দ্রাভিযানের যে সব ছবি প্রকাশ করেছে নাসা, তার মধ্যে একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে চাঁদে থাকা একটি নুড়ির গায়ে ইংরেজি হরফে ‘সি’ লেখা এবং একটি ‘ক্রস’ দাগ রয়েছে। সমালোচকদের দাবি, স্টুডিওতে শ্যুট করার সময় নাকি এই সংকেত ব্যবহার করা হয়েছিল। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নাসার দাবি, ‘‘ফোটো ডেভলপ করতে গিয়ে ওই লেখা ও দাগ ব্যবহার করা হয়েছে।’’
উপরের ছবিতে দেখা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি ‘ক্রস’ দাগ রয়েছে। মহাকাশচারীর ক্যামেরায় স্কেলিং করার জন্য ওই ‘ক্রস’ দাগ ফুটে উঠেছে। ছবিটি বিকৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ সমালোচকদের।
চন্দ্রাভিযানের নানা ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মেশানো হয়েছে বলে দাবি সমালোচকদের।
সর্বশেষ আরও একটি অকাট্য যুক্তি খাড়া করেছেন সমালোচকরা। মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক স্ট্যানলি কুবরিকের সাক্ষাত্কার বেরনোর পর। তিনি দাবি করছিলেন, তত্কালীন মার্কিন সরকার চন্দ্রাভিযানের শ্যুট করার প্রস্তাব দেয়। এবং তিনিই নাকি সেই ফিল্ম শ্যুট করেছিলেন। অন্তত এমনটাই দাবি কুবরিকের।